দুদিন আগে ভাবলে ক্ষতি কী

কিছুদিন আগে আমি সুইডেনের একটি পত্রিকায় ‘রেডিওর প্রচলন তখন আর এখন!’ নিয়ে একটি আর্টিকেল লিখেছিলাম। মূলত আমার ছোটবেলার স্মৃতিচারণে যেসব ইনোভেনশনের কথা বেশি মনে পড়ে, ব্যবহারিক দিক দিয়ে তার মধ্যে রেডিও নিঃসন্দেহে প্রথম সারিতে। কারণ বিনোদনের মাধ্যমগুলোর মধ্যে যেমন: সিনেমা, টেলিভিশন, বাইস্কপ, থিয়েটার, নর্তক, যাত্রা এসব কিছুর প্রচলন থাকা সত্ত্বেও রেডিও ছিল আমার বেশি প্রিয় ছোটবেলায়।
সুইডেনে সরাসরি রেডিওর দেখা মেলেনি একটি যন্ত্র হিসাবে তবে গাড়িতে বা টেলিফোনে রেডিও শোনার ব্যবস্থা রয়েছে। নতুন কিছু যখন আবিস্কৃত হয় স্বাভাবিকভাবে সবার নজর কিন্তু সেদিকেই যায়। যেমন: প্রথম টেলিফোনের আবিষ্কার হলো কথা বলার জন্য আজ সেই টেলিফোন কি শুধু কথা বলার জন্য ব্যবহার হচ্ছে? না। আমি যে প্রতিদিন লিখি সে কাজটিও কিন্তু টেলিফোনের মাধ্যমেই করে থাকি।
দেখা যাচ্ছে আমরা মানুষ জাতি দিন দিন সবকিছু এক জায়গায় আনতে চেষ্টা করছি। আমরা যদি আমাদের নিয়ে ভাবি তাহলে দেখা যাচ্ছে সবকিছুর সমন্বয় ঘটাতে চেষ্টা করছি এবং যেটা সম্ভব হচ্ছে না তার কারণ ধরা ছোয়ার বাইরে বিধায়। কিন্তু, আমাদের ধ্যানে সেটা বিরাজমান। এসব দিকগুলো বিবেচনা করলে মনে হয় আমাদের অবদান উদ্ভাবনে নয় বরং আবিষ্কারে তারপরও আমরা উদ্ভাবন শব্দটি ব্যবহার করি।
আমি এখনও দেখিনি আমরা যা নেই তেমন কিছু সৃষ্টি করেছি কারণ যা কিছু ইনোভেটিভ তার মূলে যে রহস্য রয়েছে তার নাম স্রষ্টা। তবে আমরা যে শক্তি এবং জ্ঞান পেয়েছি স্রষ্টার থেকে তার ব্যবহার করে নতুন নতুন জিনিসপত্র আবিষ্কার করে চলছি।
বেশি দিনের কথা নয় এমনকি এখনও প্রচলন রয়েছে সারা বিশ্বে যেমন কেনাকাটা করতে আমরা নানা দোকানে যাই।
যেমন: স্বর্ণ কিনতে সোনার দোকানে যাই, মাছ কিনতে মাছের দোকানে যাই। আবার ইদানীং এমনও জায়গা রয়েছে যেমন একটি বড় মলে ঢুকলে সবকিছুই কিন্তু একই জায়গায় পাওয়া সম্ভব। তাহলে কি দাঁড়ালো ব্যাপারটা? আমরা প্রযুক্তি, আমাদের সেন্স, সুযোগ সুবিধাকে কাজে লাগিয়ে সমন্বয় ঘটাতে চেষ্টা করে চলছি। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই কিন্তু আমরা সফল হচ্ছি।
বিষয়টি আরও একটি পরিষ্কার করি। আজকের বাজারের টেলিফোন যাকে স্মার্ট ফোন বলছি, কী নেই এর মধ্যে ভাবুন! কীভাবে সম্ভব হলো সবকিছুকে একত্রিত করা! তবে একত্রিত করার আগে প্রথমে কিন্তু এক এক করে সব কিছুর উদ্ভাবন বা আবিষ্কার করা লেগেছে। এখন যদি বলি পৃথিবীতে শত শত ধর্মের চর্চা রয়েছে এটাও আস্তে আস্তে একটি ধর্মে রূপান্তরিত হয়ে যাবে।
শুধু তাই না আমাদের ভাবনায় আমরা নানাভাবে স্রষ্টাকে ভাগ বণ্টন করে নিয়েছি, সেটারও সংশোধন হয়ে যাবে সময়ের সাথে। আমরা মানুষ জাতি ধাপে ধাপে একটি পৃথিবী, একটি বিশ্বাস, একটি স্রষ্টা এই লক্ষ্যে যেদিন উপনিত হব সেদিন কি তাহলে সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে? আর সমাধান যদি হয়ে যায় তাহলে বেঁচে থাকার কি আর দরকার থাকবে?
তেল ফুরিয়ে গেলে আলো নিভে যাবে,
জ্ঞান ফুরিয়ে গেলে মানুষ জ্ঞানহীন হবে।
শক্তি ফুরিয়ে গেলে মানুষ শক্তিহীন হবে,
রহস্য ফুরিয়ে গেলে কি সব শেষ হয়ে যাবে!
লেখক: রহমান মৃধা, সাবেক পরিচালক, ফাইজার, সুইডেন। rahman.mridha@gmail.com
এমআরএম/এএসএম