প্রবাসে সেহরিতে ডাকেন না মা, অ্যালার্মেই ভাঙে ঘুম

সিয়াম সাধনার মাস রমজান। মুসলমানদের জন্য এই মাসটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। দেশের পাশাপাশি প্রবাসীরাও রমজানের পূর্ব প্রস্তুতি নিয়ে থাকেন। তবে এখানে থাকে না ইফতারের সেই আমেজ। রমজান উপলক্ষে সরকারি-বেসরকারি অফিস-আদালতে কর্মসময় কম থাকলেও অনেকের আবার ডিউটি বেড়ে যায়। ফলে সারাদিন রোজা রেখে একসাথে আর ইফতার করা হয় না।
পরিবার-পরিজন ছাড়া বছরের পর বছর শত কর্মব্যস্ততার মাঝেও রোজা রাখতে চেষ্টা করেন প্রবাসীরা। কেউ হয়তো বাসায় ইফতার করে কেউবা মসজিদে। তবে সেহরি ও ইফতারের যে একটা আমেজ সেটি এখানে নেই। প্রতিদিন পরিবার পরিজন ছাড়া ইফতার করতে হয় এখানে। সেহরি করার জন্য প্রতিদিন মা ডেকে ডেকে তুলতেন।
ঘুম ছেড়ে উঠতে চাইতাম না, কিন্তু রোজার কথা মনে করে তাড়াহুড়ো করে আবার উঠে যেতাম। মায়ের সেই ডাকাডাকি খুব মিস করি। সাহরির সময় বাড়ির আশপাশের মসজিদগুলোতে মুয়াজ্জিনের আজানের সুর কিংবা ঘুম ভাঙানোর ইসলামী সংগীত এখন কেবল অন্তরে বাজে। মোবাইলে অ্যালার্ম দিয়ে ঘুম থেকে উঠা একমাত্র ভরসা এখন।
রমজানে মায়ের সুস্বাদু রান্নার কথা আর কী বা বলবো! সেটার তুলনা তো কারো সাথে হবে না। প্রবাসে সেই রান্নার স্বাদ কেউ পাই না। সবাই নিজের মতো করে কিছু একটা রান্না করে খেয়েই দিন কাটিয়ে দেয়। এরপর সারাদিন রোজা রেখে যখন ইফতারের সময় হয় তখন তো মন আরো ছটপট করতে থাকে।
বাংলাদেশের মতো এখানে রেস্তোরাঁগুলোতে সুস্বাদু ইফতারের আয়োজন থাকে মাসজুড়ে। ডিউটি থেকে এসে রান্না করে খাওয়া অনেক সময় কষ্টসাধ্য হওয়ায় ইফতারি কিনে নিয়ে যায় প্রবাসীরা। এখানকার স্থানীয়রা ব্যক্তি উদ্যোগে ইফতার সামগ্রী বিতরণ করে থাকেন।
বিকেলে অনেক স্থানীয়কে পথচারিদের মধ্যে ইফতারি বিতরণ করতে দেখা যায়। তবে তাদের খাদ্য তালিকায় ছোলা, পেঁয়াজু, বেগুনি, জিলাপি, মুড়ি, হালিম এসব নেই। শুধুমাত্র খেজুর, ফল, ফলের জুস এবং পানির মধ্যেই সীমাবদ্ধ।
বাড়িতে হরেক রকমের ইফতারির আইটেম প্রস্তুত করা হয়। সবাই মিলে বসে ইফতারি করার মজাই ছিল অন্যরকম। কখনো বা বাড়ির পাশে মসজিদে গিয়ে সবার সাথে ইফতারে শামিল হয়ে যেতাম। ইফতার শেষে নামাজ পড়ে বাড়ি ফিরতাম। আবার তারারির সময় হলে মসজিদে চলে যেতাম।
প্রবাসে পরিবার ছেড়ে বছরের পর বছর প্রবাসীদের ইফতার সাহরি কাটিয়ে দিতে হয়। বাংলাদেশে রমজানের প্রত্যেকটি দিন ছিল অনেক আনন্দের। এখানে তার কিছুই নেই। তবে, অনেকে দেশি স্বাদের ঘরোয়া ইফতার সামগ্রীর আয়োজন করে। রমজান মাসে দ্রব্যমূল্যের দাম এখানে অনেক কম থাকায় প্রবাসীও এদিকে খুশি।
এমআরএম/এএসএম