এশিয়া কাপ-ফাইনাল

কী হয়েছিল পুরস্কার বিতরণ শুরুর আগের এক ঘণ্টায়!

স্পোর্টস ডেস্ক
স্পোর্টস ডেস্ক স্পোর্টস ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৩:৩০ পিএম, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫

এশিয়া কাপ ফাইনাল শেষ হওয়ার পরই শুরু হয়েছিল নাটক। ফাইনাল শেষ হওয়ার পর সবার নজর ছিল, কার হাত থেকে ট্রফি নেন ভারতীয় ক্রিকেটাররা! খেলা শেষ হলেও পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান শুরু হচ্ছিল না। ভারতীয় ক্রিকেটাররা মাঠেই দাঁড়িয়েছিলেন। ওই সময় পাকিস্তানের ক্রিকেটারদের দেখা পাওয়া যাচ্ছিল না।

শোনা গেছে, ভারত জানিয়ে দিয়েছে, তারা মাহসিন নাকভির কাছ থেকে ট্রফি নেবে না। গ্রুপ পর্বের ম্যাচে পাকিস্তানকে হারিয়ে এই একই কথা বলেছিলেন অধিনায়ক সূর্যকুমার যাদব।

ভারতীয়রা ট্রফি না নেওয়ার দাবি তুললেও মাঠেই ছিলেন নাকভি। কারও সঙ্গে ফোনে কথা বলতে দেখা যায় তাকে। নাকভিকে দেখে বোঝা যাচ্ছিল, বেশ রেগে রয়েছেন তিনি। খেলা শেষ হওয়ার ১ ঘণ্টা পর সাজঘর থেকে বেরিয়ে আসেন পাকিস্তানের ক্রিকেটাররা। সোয়া এক ঘণ্টা পর শুরু হয় পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান।

প্রথমে ব্যক্তিগত পুরস্কার দেওয়া হচ্ছিল। তারপর পাকিস্তানের ক্রিকেটারদের মেডেল নিতে ডাকা হয়। সেখানেও নাটক। সঞ্চালক সাইমন ডুল জানান, পাকিস্তান ক্রিকেটারদের মেডেল দেবেন নাকভি; কিন্তু আদতে দেখা যায়, এশীয় ক্রিকেট কাউন্সিলের সহ-সভাপতি, বিসিবি সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুল তাদের মেডেল দিচ্ছেন। এশিয়া কাপে রানারআপ হওয়ায় প্রায় ২ কোটি টাকার চেক পেয়েছে পাকিস্তান। অধিনায়ক সালমান আলি আগা সেই চেক ছুড়ে ফেলে দেন।

ভারতের কুলদীপ যাদব ম্যাচের সেরা ও অভিষেক শর্মা প্রতিযোগিতার সেরা ক্রিকেটারের পুরস্কার পান। তারা পুরস্কার নেওয়ার পর সঞ্চালক ডুল জানান, ভারতীয় দল চ্যাম্পিয়নের ট্রফি নেবে না। এ থেকে স্পষ্ট, নাকভিও নিজের সিদ্ধান্ত থেকে সরেননি। অন্য কোনো কর্মকর্তাকে তিনি ট্রফি দেওয়ার অনুমতি দেননি। সে কারণে ভারতীয় দলও নিজেদের দাবি থেকে সরেনি।

এমন দৃশ্য ক্রিকেটের ইতিহাসে এর আগে আর কখনো দেখা যায়নি। একটা বড় প্রতিযোগিতা জিতে জয়ী দল ট্রফিই নিল না। বোঝা যাচ্ছে, এই বিতর্ক এখনই থামবে না। এশিয়া কাপ শেষ হলেও ভারত-পাকিস্তান সংঘাত চলমান থাকবে।

এবারের এশিয়া কাপের শুরু থেকেই দুই দলের মধ্যে বিরোধ চলছিল। শুরুটা করে ভারত। গ্রুপ পর্বের ম্যাচে পাকিস্তানের ক্রিকেটারদের সঙ্গে হাত না মেলানোর সিদ্ধান্ত নেয় তারা। সেই ঘটনা ভালো ভাবে নেয়নি পাকিস্তান।

খেলা শেষে সূর্যকুমার যাদব প্রকাশ্যে বলেন, এই জয় পহেলগামে সন্ত্রাসী হামলায় নিহতদের পরিবারকে উৎসর্গ করছেন তারা। পাশাপাশি ‘অপারেশন সিঁদুর’র জন্য ভারতীয় সেনাবাহিনীর প্রশংসা করেন তিনি।

খেলা শেষে নিজেদের সাজঘরের দরজাও বন্ধ করে দেয় ভারত। সেই ঘটনা নিয়ে আইসিসির দ্বারস্থ হয় পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড। সূর্যকুমারের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে তারা। সূর্যকুমারের ম্যাচ ফি’র ৩০ শতাংশ জরিমানা করা হয়েছে। সেই ঘটনার বিরুদ্ধে আবেদন করেছে ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড।

বিতর্কে জড়িয়েছেন সেই ম্যাচের রেফারি অ্যান্ডি পাইক্রফ্টও। পাকিস্তান বোর্ড অভিযোগ করে, পাইক্রফ্ট গিয়ে দু’দলের অধিনায়ককে হাত মেলাতে নিষেধ করেছেন। তারা দাবি জানান, এশিয়া কাপের কোনো ম্যাচে পাইক্রফ্টকে আর দায়িত্ব দেওয়া যাবে না। যদিও পাকিস্তানের দাবি উড়িয়ে দেয় আইসিসি। পরে ম্যাচের আগে পাইক্রফ্টের সঙ্গে কথা বলেন পাকিস্তানের কোচ মাইক হেসন, অধিনায়ক সালমান ও অন্য কর্তারা। পাকিস্তান বোর্ড দাবি করে, পাইক্রফ্ট ক্ষমা চেয়েছেন। যদিও অন্য সূত্রে দাবি করা হয়, তিনি ক্ষমা চাননি।

সুপার ফোরে ভারত-পাকিস্তান ম্যাচে বিতর্ক আরও বাড়ে। অর্ধশতরান করে ‘একে৪৭’ তাক করার মতো করে উল্লাস করেন পাকিস্তানের ব্যাটার সাহিবজাদা ফারহান। পাক পেসার হ্যারিস রউফ দু’বার ‘প্লেন ক্র্যাশ’ সেলিব্রেশন করেন। সেই ঘটনার পর ফারহান ও হ্যারিসের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে ভারতীয় বোর্ড। ফাইনালেও যে বিতর্ক কমবে না তা বোঝা যাচ্ছিল। ফাইনাল শুরু হওয়ার আগেই ভারতের পেসার অর্শদীপ সিংয়ের নামে অভিযোগ করে পাকিস্তান বোর্ড। তাদের অভিযোগ, সুপার ফোরের ম্যাচে ‘অশ্লীল’ ভঙ্গী দেখিয়েছেন অর্শদীপ।

ফাইনাল শুরুর আগে ভারতের জাতীয় সঙ্গীত হওয়ার সময় খোশগল্প করছিলেন পাকিস্তানের দুই ক্রিকেটার হারিস ও শাহিন শাহ আফ্রিদি। ক্রিকেটের নিয়মে রয়েছে, অন্য দেশের জাতীয় সঙ্গীতের সময়ও সোজা হয়ে থাকতে হবে ক্রিকেটারদের। গল্প করা যাবে না। কিন্তু পাকিস্তানের দুই ক্রিকেটার সেটাই করেন। তার জন্য দুজনের সমালোচনা শুরু হয়েছে। ভারতীয় সমর্থকদের অভিযোগ, ভারতের জাতীয় সঙ্গীতকে অসম্মান করেছেন তারা। হ্যারিস ও শাহিনের শাস্তির দাবিও উঠেছে। ফাইনালে হ্যারিসকে বোল্ড করে তাকে জবাব দেন জসপ্রিত বুমরাহ। তিনিও ‘প্লেন ক্র্যাশ’ উল্লাস করেন।

খেলার মধ্যেই যে এই বিতর্ক শেষ হবে না তা বোঝা যাচ্ছিল। হলও তাই। খেলা শেষে পাকিস্তানের ক্রিকেটাররা সাজঘরে ঢুকে গেলেন। পরপর তিন ম্যাচে ভারতের কাছে হারের ধাক্কা হজম করা সহজ ছিল না। পাশাপাশি প্রতিযোগিতাজুড়ে ভারত বয়কট করেছে পাকিস্তানকে। সেই জ্বালাও হয়তো ছিল। পাক ক্রিকেটারদের মাঠে নামতে দেরি হওয়া দেখে জল্পনা শুরু হয়েছে, সলমনেরা কি অনুষ্ঠান বয়কটের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন? শেষ পর্যন্ত কি নাকভির ফোনে নামেন তারা? নইলে এত দেরি কেন করলেন তারা। যদিও ভারতীয় ক্রিকেটাররা আরও একবার পাত্তা দিলেন না নাকভিকে। এশিয়া কাপ জিতে ট্রফিই নিলেন না সূর্যেরা।

আইএইচএস/

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।