সিদ্ধান্তে বড় ভুল দেখছেন আশরাফুল
মিরাজ কেন ওপরে, ব্যাটাররা রশিদকে না বুঝে এলোমেলো খেলছে
তিনি দেশে নেই। সৌদি আরবে প্রবাসী বাংলাদেশিদের আমন্ত্রণে এখন মদিনায় অবস্থান করছেন। মক্কায় ‘বাংলাদেশ প্রিমিয়ার ক্রিকেট লিগ সিজন ৩’-এর উদ্বোধন করতে গতকাল গভীর রাতে মদিনায় পৌঁছেছেন মোহাম্মদ আশরাফুল। সঙ্গে জাতীয় দলের সাবেক ক্রিকেটার মোহাম্মদ রফিক এবং এ সময়ের জনপ্রিয় উপস্থাপক, সঞ্চালক ও বিশ্লেষক সৈয়দ আবিদ হোসেন সামিও আছেন। আগামী ১৪ অক্টোবর মক্কায় প্রতিযোগিতার উদ্বোধনের আগে ওমরাহও সেরে নিচ্ছেন আশরাফুল।
বিমান ভ্রমণে থাকায় বাংলাদেশের গতকাল রোববারের ম্যাচ সরাসরি দেখা সম্ভব হয়নি। বাংলাদেশ সময় মাঝরাতে গিয়ে মদিনায় পৌঁছে হাইলাইটস দেখেছেন দেশের ক্রিকেট ইতিহাসের সবসময়ের অন্যতম সেরা ব্যাটার আশরাফুল।
আজ সোমবার রাতে জাগো নিউজের সঙ্গে মদিনা থেকে ফেসবুক মেসেঞ্জারে আলাপে আফগানিস্তানের সঙ্গে বাংলাদেশের ওয়ানডে সিরিজ হার এবং দ্বিতীয় ম্যাচের চরম দায়িত্বজ্ঞানহীন ব্যাটিং নিয়ে কথা বলেছেন আশরাফুল।
কেন এই ব্যাটিং ব্যর্থতা? কী কারণে ব্যাটিংটা এত খারাপ হলো? সাম্প্রতিক সময় ওয়ানডেতে কেন আর ভালো খেলছে না বাংলাদেশ? তার পেছনের কারণ কী? সেটা কি ওয়ানডের চেয়ে টি-টোয়েন্টি বেশি খেলার কারণেই পারফরম্যান্স খারাপ হচ্ছে?
আশরাফুল মানছেন, ওয়ানডে কম খেলা আর টি-টোয়েন্টি বেশি খেলা একটা বড় কারণ। কারণ, সাদা বলে হলেও ৫০ ওভারের ফরম্যাট আর টি-টোয়েন্টির মধ্যে অনেক পার্থক্য। খেলার আকার, পরিধি, দৈর্ঘ্য, ধরন, গতি, প্রকৃতি সবই ভিন্ন। এখানে অ্যাডজাস্টমেন্ট বা মানিয়ে নেওয়াটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। এবং দুই ফরম্যাটের পার্থক্য বুঝে খেলা, অ্যাপ্রোচ, অ্যাপ্লিকেশন ঠিক করাই হলো আসল কাজ।
আশরাফুল মনে করেন, অন্য সব টেস্ট খেলুড়ে দেশের ক্রিকেটাররা তিন ফরম্যাটের ফারাকটা খুব ভালোভাবে বুঝে জায়গামতো পারফর্ম করতে পারেন। আমাদের ক্রিকেটারদের সমস্যা হয়। তবে সেটাকেই মূল সমস্যা মনে করেন না আশরাফুল।
বরাবর টেকনিক্যাল, ট্যাকটিক্যাল পয়েন্টে কথা বলতে অভ্যস্ত আশরাফুলের অনুভব, আসলে বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা জায়গামতো করণীয় কাজগুলো ঠিকমতো করে উঠতে পারছে না।
পরিসংখ্যান মেলে ধরে আশরাফুল বলেন, ‘সর্বশেষ ৮-৯টি ওয়ানডেতে আমাদের টপ অর্ডাররা রান করতে পারেনি। ১, ২ ও ৩ নম্বরে কারও ব্যাটে রান নেই। কেউ একজন লম্বা ইনিংস খেলতে পারেনি। ৫০ ওভারের ফরম্যাটে ওপরে অন্তত একজন দীর্ঘ ইনিংস না খেললে ব্যাটিং ভালো করা কঠিন। যেটা দলকে ভোগায়। আমরাও ওপারের ব্যাটারদের কাছ থেকে ভালো ও বড় ইনিংস না পেয়ে ভুগছি।’
এর বাইরে আশরাফুল আরও কিছু টেকনিক্যাল পয়েন্ট খুঁজে পেয়েছেন। তার ব্যাখ্যা, ‘আমরা মেহেদী হাসান মিরাজকে ক্যাপ্টেন করার পর তাকে ৪ কিংবা ৫ নম্বরে খেলাচ্ছি। ভাবটা এমন যে, মিরাজ পুরোদস্তুর ব্যাটসম্যান। কিন্তু আসলে তা নয়। মিরাজ পুরোদস্তুর ব্যাটার নন। আমার চোখে সে এত ওপরে নিয়মিত খেলার ব্যাটার নয়। মিরাজ শুধু ওপরে খেলছে না, দেখা যাচ্ছে ৬০-৬৫ স্ট্রাইক রেটে পঞ্চাশ করছে, যা দলের কোনো কাজেই আসছে না; বরং ক্ষতির কারণ হচ্ছে।’
এর বাইরে আরও একটি বিষয় চোখে পড়েছে আশরাফুলের। তা হলো, আফগান লেগ স্পিনার রশিদ খানকে একদমই মোকাবিলা করতে না পারা।
বলার অপেক্ষা রাখে না, গতকাল দ্বিতীয় ম্যাচে বাংলাদেশের ব্যাটিং মেরুদণ্ড ভেঙে গুড়িয়ে দিয়েছেন রশিদ খান। মাত্র ১৭ রানে পতন ঘটিয়েছেন ৫ উইকেটের। বলাই যায়, রশিদ খানের বোলিং ঠিকমতো খেলতে না পারার কারণেই দ্বিতীয় ম্যাচে ১৯২ রানের মামুলি টার্গেট ছুঁতে পারেনি মেহেদী হাসান মিরাজের দল।
শুধু দ্বিতীয় ওয়ানডে কেন, প্রথম ওয়ানডেতেও ৩৮ রানে ৩ উইকেট দখল করে বাংলাদেশের স্কোরলাইনকে ছোট করে রাখেন আফগান লেগি রশিদ খান।
এর আগে টি-টোয়েন্টি সিরিজে বাংলাদেশ একতরফা জিতলেও রশিদ খান কিন্তু ঠিক বল হাতে দাপট দেখিয়েছেন। দ্বিতীয় ম্যাচে ১৩ রান দিয়ে উইকেট না পেলেও প্রথম ও শেষ খেলায় রশিদ খানের ঝুলিতে জমা পড়েছে (৪/১৮ ও ২/২৯) মোট ৬ উইকেট।
আশরাফুল মনে করেন, আমাদের ব্যাটাররা একদমই রশিদ খানকে খেলতে পারছে না। আর তাতেই বিপর্যয় ঘনিভূত হচ্ছে। আশরাফুলের ব্যাখ্যা, ‘আমাদের ব্যাটাররা কী করছে, রশিদ খানকে কীভাবে খেলছে, দেখে অবাক হচ্ছি। তারা রশিদ খানের জোরে আসা লেগ স্পিন, ফ্লিপার ও গুগলি না দেখে, না বুঝে এলোমেলো ব্যাট চালাচ্ছে।’
‘আমার মনে হয়, বাড়তি কিছু করার দরকার নেই। প্রপার ক্রিকেট শট বলতে যা বোঝায়; ব্যাকরণ মেনে সোজা ব্যাটে খেলা, রশিদ খানের টাইট, বৈচিত্র্যময় আর দ্রুত গতির ওপর টার্নিং ডেলিভারির বিপক্ষে যতটা সম্ভব স্ট্রেইট ব্যাটে খেলার চেষ্টা করা উচিত। আমি অবাক হচ্ছি দেখে, আমাদের ব্যাটাররা রশিদ খানের হাই-কোয়ালিটি স্পিনের বিপক্ষে অযথা সুইপ খেলতে যাচ্ছে। আড়াআড়ি ব্যাটে খেলার চেষ্টা করছে। আর সেটাই কাল হচ্ছে।’
এআরবি/এমএমআর/জেআইএম