বড্ড অসময়ে রান আউট হয়েছিলেন মুশফিক

টেস্টে রান আউট হওয়া অস্বাভাবিক না হলেও সংখ্যায় অনেক কম; কিন্তু বিস্ময়কর হলেও সত্য, ঢাকা টেস্টে পাকিস্তানের বিপক্ষে বাংলাদেশের দুজন ব্যাটসম্যান রান আউট হয়েছেন। প্রথম ইনিংসে অধিনায়ক মুমিনুল হক। দ্বিতীয় ইনিংসে মুশফিকুর রহিম।
মুমিনুল টেস্টে বাংলাদেশের সফলতম ব্যাটার। তার ব্যাট অনেক বিশ্বস্ত। এ বাঁ-হাতির রান আউট হয়ে সাজঘরে ফেরা তাই দলের জন্য একটা বড় ধরনের ধাক্কা। তবে যেহেতু টাইগার ক্যাপ্টেন মাত্র ১ রানে আউট হলেন, তাই তার রান আউট হওয়াটাকে সেভাবে বড় করে দেখা হয়নি।
কিন্তু আজ মুশফিকের রান আউটটি অনেক বেশি ‘ভাইটাল।’ দিন শেষে মনে হচ্ছে মুশফিক তখন রান আউট না হলেই হয়ত ম্যাচ বাঁচানো যেত। নিশ্চয়ই জানতে চাইবেন তার নিশ্চয়তা কী? মুশফিক চা বিরতির মিনিট খানেক আগে রান আউট না হলে ম্যাচ ড্র হতো কিভাবে?
হোক তা টেস্ট, ওয়ানডে কিংবা টি-টোয়েন্টি, ক্রিকেটে নিশ্চিত বলে কিছু নেই। সব সময় সব ফরম্যাটেই ক্রিকেট অনিশ্চয়তায় ভরা। তারপরও খেলার কিছু কিছু মুহূর্ত থাকে, যেগুলো ম্যাচের ফল নির্ধারনে রাখে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। আজকে মুশফিকের আউটটা ঠিক তেমনি।
চট্টগ্রাম টেস্টের প্রথম ইনিংসে ৪৯ রানে ৪ উইকেট পড়ার পর এই মুশফিক-লিটন ২০৬ রানের জুটি গড়ে বিপদ কাটিয়ে স্কোরলাইনকে মোটাতাজা করে দিয়েছিলেন। যেখানে লিটন দাস করেছিলেন সেঞ্চুরি। আর মুশফিক ফিরে গিয়েছিলেন শতরান থেকে মাত্র ৯ রান পিছনে।
আজও ২৫ রানে ৪ টপ অর্ডার সাদমান, মাহমুদুল হাসান জয়, নাজমুল হোসেন শান্ত আর অধিনায়ক মুমিনুল হক সাজঘরে ফেরার পর পঞ্চম উইকেটে কঠিন চাপে দাঁতে দাঁত চেপে প্রাণপন লড়াই করেছেন মুশফিক আর লিটন। এক সময় মনে হচ্ছিল তারা শুরুর ধাক্কা সামলে উঠেছেন; কিন্তু প্রথম ভুল পথের যাত্রী হন লিটন (১২২ মিনিটে ৮১ বলে ৪৫)। অফস্পিনার সাজিদ খানের শর্ট বলকে মাটিতে নামিয়ে কিংবা তুলে পুল না করে ‘ফ্ল্যাট ব্যাটে’ পুল হাঁকাতে গিয়ে স্কোয়ার লেগে ক্যাচ দিয়ে লিটন আউট হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ভাঙ্গে ৭৩ রানের পার্টনারশিপ।
এরপর আরও একটি জুটি গড়ে উঠেছিল। যার স্রষ্টা ছিলেন দলের দুই বয়োজ্যেষ্ঠ সদস্য মুশফিক আর সাকিব। তারা এগুচ্ছিলেন বেশ আস্থা ও আত্মবিশ্বাসের সাথে। দেখে মনে হচ্ছিল অনেকদুর যাবেন।
বিপদে, সংকটে মুশফিক-সাকিব ত্রানকর্তা হতে পারেন, লম্বা চওড়া ইনিংস খেলতে পারেন, সে নজির আছে বেশ কয়েকটা। এর মধ্যে একটি তো রীতিমত ইতিহাস। ২০১৭ সালের জানুয়ারিতে ক্রাইস্টচার্চে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে এই দুজনার পঞ্চম উইকেটে আছে ৩৫৯ রানের পার্টনারশিপ। যা টেস্টে যে কোন উইকেটে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় জুটি।
যারা নিউজিল্যান্ডের কনকনে ঠান্ডা, প্রচন্ড বাতাস আর ফার্স্ট ও বাউন্সি পিচে টিম সাউদি, ট্রেন্ট বোল্ট, কলিন ডি গ্র্যান্ডহোম, নেইল ওয়েগনার আর মিচেল সান্তনারের বিপক্ষে এমন ব্যাটিং করতে পারেন, তারা শাহিন শাহ আফ্রিদি, হাসান আলি, ফাহিম আশরাফ, সাজিদ খান আর নৌমান আলির বিপক্ষে চরম বিপদে একটা ১০০ রানের পার্টনারশিপও গড়তে পারবেন না, তাইবা কি করে বলা যায়?
দিন শেষে খেলা যেখানে শেষ হয়েছে, তাতে পরিষ্কার বলে দেয়া যায়, সাকিব আর মুশফিক একসঙ্গে আর ঘণ্টাখানেক কিংবা অন্তত আরো আধাঘণ্টা উইকেটে কাটাতে পারলে বাংলাদেশের ম্যাচ বাঁচানোর সম্ভাবনা অনেক বেশি থাকতো।
কিন্তু চা বিরতির আগে মুশফিক দূর্ভাগ্যজনকভাবে রান আউট হওয়ায় সে সম্ভাবনার মৃত্যু ঘটেছে। স্ট্রাইকে থাকা সাকিব মিড উইকেটের দিকে ঘুরিয়ে সিঙ্গেলসের জন্য দৌড়ালেন। বিপরীতদিক থেকে মুশফিক ছুটে আসলেন ব্যাটিংএন্ডে। কিপার রিজওয়ানের গ্লাভসে থ্রো চলে আসার আগেই মুশফিক ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন।
কিন্তু দূর্ভাগ্য, ভাগ্য সুপ্রসন্ন ছিল না বাংলাদেশের জন্য। রিজওয়ান বেলস তোলার সময় মুশফিক মাটিতে শরীর ফেলে পপিং ক্রিজ স্পর্শ করার চেষ্টা করেন। ব্যাটটা মাটি স্পর্শ করলেই চলতো; কিন্তু মাটিতে ঝাঁপিয়ে পড়া মুশফিকের ব্যাট মাটিতে না থেকে ইঞ্চি খানেক ওপরে থাকায় রান আউট হয়ে গেলেন। ভাঙ্গলো ৪৯ রানের জুটি। সেটা ১০০ হলে তো কথাই ছিল না। আর গোটা তিরিশেক রান যোগ হলেও হয়ত দিন শেষের দৃশ্যপটটা ভিন্ন হতো।
তারই সঙ্গে ইতি ঘটলো ম্যাচ বাঁচানোর সম্ভাবনাও।
এআরবি/আইএইচএস