সেরার পুরস্কার জিতে এবার অশ্লীল অঙ্গভঙ্গি নয়, কাঁদলেন মার্টিনেজ

এমিলিয়ানো মার্টিনেজ। লিওনেল মেসির হাতে বিশ্বকাপ ট্রফিটা তুলে দেয়ার অন্যতম নায়ক। তার অসাধারণ গোলকিপিংয়ের কারণেই বিশ্বকাপ জয় সম্ভব হয়েছে আর্জেন্টিনার। মাঠের পারফরম্যান্সে এমিলিয়ানো মার্টিনেজ যতটা নন্দিত, মাঠের বাইরের কর্মকাণ্ড নিয়ে তার চেয়ে বেশি নিন্দিত।
বিশেষ করে, বিশ্বকাপ ফাইনালের পর পুরস্কার বিতরণী মঞ্চে সেরা গোলরক্ষকের পুরস্কার গোল্ডেন গ্লাভস হাতে তিনি যে অশ্লীল এবং অসভ্য উদযাপন করেছিলেন, তা সারা বিশ্বেই সমালোচনা তৈরি করেছিলো।
শুধু তাই নয়, ড্রেসিংরুমে কিলিয়ান এমবাপের জন্য নিরবতা পালন, তাকে কটাক্ষ করা এবং দেশে ফিরে এমবাপের শিশুসূলভ কার্টুন তৈরি করে সেটা নিয়ে টিম বাসে চড়া- হেন কোনো কাজ নেই, যা করেননি মার্টিনেজ।
সেই মার্টিনেজ যেন এবার সবচেয়ে ভদ্র, সুবোধ বালক। সোমবার রাতেও তিনি জিতলেন আরও একটি সেরার পুরস্কার। লিওনেল মেসি, লিওনেল স্কালোনির সঙ্গে উঠলেন একই মঞ্চে। ফিফা বর্ষসেরা ফুটবলারের পুরস্কার জিতেছেন মেসি। কোচের পুরস্কার উঠেছে লিওনেল স্কালোনির হাতে। এরপর বর্ষসেরা গোলরক্ষক নির্বাচিত হয়েছেন মার্টিনেজ। পুরস্কার হাতে মেসিদের পাশে দাঁড়ালেন তিনিও।
বর্ষসেরা গোলরক্ষকের পুরস্কার হাতে নিয়ে এবার আর কোনো অশ্লীল অঙ্গভঙ্গি করলেন না। বরং কেঁদে দিয়েছেন তিনি। এরপর নিজের এই পুরস্কারটি তিনি উৎসর্গ করলেন বাবা-মায়ের প্রতি।
রিয়াল মাদ্রিদের থিবো কুর্তোয়া এবং বিশ্বকাপে মরক্কোর হয়ে অসাধারণ গোলকিপিং করা সেভিয়ার গোলরক্ষক ইয়াসিন বোনোকে পেছনে ফেলে বর্ষসেরা গোলরক্ষকের পুরস্কার জেতেন মার্টিনেজ। বিশ্বকাপে অসাধারণ পারফরম্যান্স দেখিয়েছেন মার্টিনেজ।
বিশেষ করে পেনাল্টিতে তার চেয়ে সেরা গোলরক্ষক যেন বর্তমানে আর কেউ নেই। নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে কোয়ার্টার ফাইনালে দুটি শট ফিরিয়ে দিয়েছিলেন তিনি। ফাইনালে ফ্রান্সের ফরোয়ার্ড কোলো মুয়ানি শেষ মুহূর্তে গোললক্ষ্যে যে শট নিয়েছিলেন, নিশ্চিত গোল হয়ে যেতো সেটা। কিন্তু মার্টিনেজ অসাধারণ দক্ষতায় সেই শট ফিরিয়ে দেন। এরপর পেনাল্টিতেও একটি শট ঠেকিয়ে দিয়েছিলেন তিনি।
বর্ষসেরা গোলরক্ষকের পুরস্কার জয়ের পর টিওয়াইসি স্পোটসকে মার্টিনেজ বলেন, ‘এটা অবশ্যই আমার ক্যারিয়ারের জন্য সবচেয়ে সুন্দর মুহূর্ত। সবাই আমার গল্প জানেন। এটা আমার দেশের জন্য বয়ে আনা একটি গর্ব। আমার দেশের জন্য আমি সব সময় গর্ব অনুভব করি। আমার পরিবার, অ্যাস্টন ভিলা, জাতীয় দল- সবার জন্যই আমার এই অর্জন সম্ভব হয়েছে। এটা ছিল (বিশ্বকাপ জয়) আমার সারা জীবনের স্বপ্ন।’
প্রথম কোনো আর্জেন্টাইন গোলরক্ষক হিসেবে বর্ষসেরার ট্রফি জিতলেন মার্টিনেজ। এ জন্য নিজের মা-বাবার প্রতি সবচেয়ে বেশি কৃতজ্ঞ তিনি। মার্টিনেজ বলেন, ‘আমার আদর্শ হচ্ছেন আমার বাবা-মা। এই অর্জন আমি তাদের উৎসর্গ করতে চাই।’
ফিফাডটকমকে দেয়া সাক্ষাৎকারে বর্ষসেরা এই গোলরক্ষক বলেন, ‘এখন দিনে দিনে আমার নিজেকে প্রমাণ করে যেতে হবে। কারণ আমি শিরোপা জিতেছি। আমি চাই এভাবে একের পর এক জয় পেতে। গোলপোস্টের নিচে আমি আমার অবস্থানকে আরও দৃঢ় করতে চাই। গোলকিপিংকে আমি আমার আদর্শ হিসেবে বেছে নিয়েছি। তবে আমার সেরা আদর্শ হলেন আমার বাবা-মা। তারা আমার জন্য দিনে ১২ ঘণ্টা পর্যন্ত কাজ করেছেন এবং এ কারণেই আজ আমি এ পর্যায়ে এসে পৌঁছাতে পেরেছি।’
আইএইচএস/