‘এক সময় যে বাজার করতো সে এখন মুক্তিযোদ্ধা ফুটবল দল চালায়'

রফিকুল ইসলাম
রফিকুল ইসলাম রফিকুল ইসলাম , বিশেষ সংবাদদাতা
প্রকাশিত: ০৬:২৮ পিএম, ১৮ জুলাই ২০২৩

দেশের ৪৫ বছরের ঐতিহ্যবাহী ক্লাব মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ক্রীড়া চক্র প্রথমবারের মতো শীর্ষ ফুটবল লিগ থেকে নেমে গেছে। ১৯৭৮ সালে প্রতিষ্ঠিত ক্লাবটি দেশের শীর্ষ লিগে খেলছে আশির দশকের গোড়ার দিক থেকে। এরপর ক্লাবটি দেশের ফুটবলে জায়গা করে নিয়েছিল শক্তপোক্তভাবেই।

দুইবার লিগ চ্যাম্পিয়ন হয়েছে, ফেডারেশন কাপ জিতেছে। এমন কি দেশের বাইরেও প্রতিনিধিত্ব করেছে ক্লাবটি। সেই মুক্তিযোদ্ধা ক্রীড়া সংসদ বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ থেকে নেমে গেছে এবার। ২০০৭ সালে পেশাদার লিগ প্রবর্তন হওয়ার পর থেকেই খেলে আসছিল ক্লাবটি। কয়েক বছর ধরে অর্থ সংকটে ধুঁকছিল মুক্তিযোদ্ধা সংসদ। এবার আর শেষ রক্ষা হয়নি।

মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ক্রীড়া চক্রের সাবেক ফুটবলার জাহিদ হাসান এমিলি দেশের ঐতিহ্যবাহী এই ক্লাবটির প্রিমিয়ার লিগ থেকে নেমে যাওয়ার কারণ হিসেবে দুর্বল ও অদক্ষ ব্যবস্থাপনাকেই দায়ী করছেন। পাশাপাশি তিনি এটা দেশের ফুটবল ও ফুটলারদের জন্য অত্যন্ত দুঃখজনক হিসেবেও উল্লেখ করেছেন।

জাগো নিউজ: আপনি মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ক্রীড়া চক্রে খেলেছেন। দলটি এবার প্রথমবারের মতো দেশের শীর্ষ লিগ থেকে নেমে গেলো। কীভাবে দেখছেন তাদের এ ব্যর্থতাকে?

এমিলি: আসলে ইদানীং ফুটবলের জন্য যা হয় সেটাই খারাপ হয়। মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ক্রীড়া চক্র নেমে গেছে এটা ফুটবলের জন্য অবশ্যই খারাপ খবর। এখানে ৩৫-৪০ জন ফুটবলারের ক্যারিয়ারের বিষয় ছিল। সবচেয়ে বড় কথা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ক্রীড়া চক্রের মতো দল নেমে যাবে সেটা ভাবা যায় না। একটা প্রতিষ্ঠিত দল হিসেবে মুক্তিযোদ্ধার বাংলাদেশ ফুটবলের শীর্ষ লিগে থাকা উচিত ছিল।

জাগো নিউজ: মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ক্রীড়া চক্রের সঙ্গে আমাদের বীর শহীদদের স্মৃতি জড়িয়ে আছে। সেই দলটির এমন পরিণতি কি শুধুই ফুটবলের ক্ষতি?

এমিলি: আসলে মুক্তিযোদ্ধা নামটিই তো আবেগের। আমি মনে করি, এমন কেন হলো তা খতিয়ে দেখা উচিত। এই দলটি এক সময় লিগ চ্যাম্পিয়ন হয়েছে, ফেডারেশন কাপ চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। সব টুর্নামেন্টেই তারা ফাইট দিতো। সেই দলটির অবস্থা ধীরে ধীরে খুবই খারাপ হয়ে গেলো। খুবই খারাপ লাগছে। এটা ফুটবল ও ফুটবলার- সব দিক দিয়েই ক্ষতি হয়ে গেলো।

জাগো নিউজ: দলটি কীভাবে চলছিল তা তো দেখার দায়িত্ব ছিল মন্ত্রণালয়ের তাই না?

এমিলি: আসলে টিমটা চলছিল কোনো রকম মনিটরিং ছাড়াই। কয়েক বছর ধরেই করুণ অবস্থা চলছিল ক্লাবটির। মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয় পৃষ্ঠপোষকতা করে; কিন্তু তারা ফেলে রেখেছে। কে চালায়, কে ম্যানেজমেন্ট? কারা খেলছে, বিদেশি কারা, কোচ কে? সে সম্পর্কে তাদের কারও ধারণাই নেই।

জাগো নিউজ: অনেক দিন ধরেইতো শুনে আসছিলাম মুক্তিযোদ্ধা ফুটবল দলটির অবস্থা ভালো নয়। এর কারণ কি আপনার মনে হয়?

এমিলি: সত্যি কথা কি, আমরা যখন মুক্তিযোদ্ধায় খেলেছি তখন দারুণ পরিবেশ ছিল। আমি নাম বলছি না। এখন যে দলটি চালায়, আমরা দেখেছি এই ব্যক্তি এক সময় ক্লাবের বাজার করতো। এগুলো তো চিন্তাই করা যায় না। যারা বাজার করতো তারা এখন ক্লাব চালায়। এটাতেই বোঝা যায় ক্লাবের অবস্থা কি!

জাগো নিউজ: মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণলায় তো টাকা দিয়েছে। সেভাবে কি ভালো দল হয়ে আসছিল আপনি মনে করেন?

এমিলি: মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় কেবল টাকাই দিয়েছে। কোনো খবর রাখেনি। মুক্তিযোদ্ধা দলটি অবহেলিত ছিল। এই দলটি নেমে যাবে এটা হতে পারে না। চরম অবহেলার ফল এটা।

জাগো নিউজ: এক সময়তো জমজমাট অবস্থা ছিল ক্লাবটির। চোখের সামনেই কি হলে গেলো। আপনি যখন খেলেছেন তখন পরিবেশ কেমন ছিল?

এমিলি: একটা সময় যারা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ক্রীড়া চক্র চালাতেন তারা আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতেন। বড় বড় অফিসিয়ালরা ক্লাবে আসতেন। দল ভালো রেজাল্ট করলেও আসতেন, খারাপ করলেও আসতেন। মন্ত্রণালয় টাকা দেয়। টাকা দেওয়ার পর আরও যে কাজ আছে সেটা তারা মাথায়ই রাখে না। এখন না, আরও ১০ বছর আগেই মন্ত্রণালয়ের দলের খোঁজ নেওয়া উচিত ছিল। তাদের অবহেলার কারণেই আজ মুক্তিযোদ্ধা নেমে গেছে।

জাগো নিউজ: দলের এ পরিণতির জন্য কার দায় বেশি বলে আপনি মনে করেন?

এমিলি: এটা পুরো জাতির জন্য দুঃখজনক ঘটনা। কেবল মন্ত্রণালয়ই নয়, আরও অনেকেরই মুক্তিযোদ্ধা ক্লাবটির খবর নেওয়া উচিত ছিল। মুক্তিযোদ্ধা ক্লাব চালানোর মানুষের অভাব হওয়ার কথা নয়। মুক্তিযোদ্ধায় খেলেছেন, এমন একজন সাবেক ফুটবলারকেও দায়িত্ব দেওয়া যেতো। ফুটবলের বাইরে যারা ক্লাব চালায় তারা ফুটবলের কি বুঝবে?

জাগো নিউজ: মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ক্রীড়া চক্রকে এমন ভাগ্যবরণ করতে হবে তা আঁচ করা গিয়েছিল কয়েক বছর ধরেই। তারপরও কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি?

এমিলি: এমন একজন মানুষকে ক্লাব চালানোর দায়িত্ব দেওয়াটা মন্ত্রণালয়ের বড় গাফিলতি। প্রতি বছরই তো রেলিগেশনের ঝুঁকিতে পড়েছে ক্লাবটি। অথচ তখন তারা দায়িত্বের হাত বদল করেনি। এ ধরনের মানুষের হাতে ক্লাবের দায়িত্ব দেওয়া ঠিক হয়নি। দক্ষ কাউকে দায়িত্ব না দেওয়ায়ই ডুবেছে মুক্তিযোদ্ধা ফুটবল দল।

জাগো নিউজ: এ লজ্জা আসলে কার?

এমিলি: আমি মনে করি, ক্লাবের যে অভিভাবক সেই মন্ত্রণালয়ের লজ্জার বিষয়। আর আমরা যারা খেলেছি তাদের জন্য দুঃখের ও কষ্টের।

জাগো নিউজ : ধন্যবাদ।

এমিলি: আপনাকেও ধন্যবাদ।

আরআই/আইএইচএস/

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।