সাম্য হত্যা: ছাত্রদলের বিক্ষোভ, উপাচার্য-প্রক্টরের পদত্যাগ দাবি

বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক
বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
প্রকাশিত: ১০:৩৩ এএম, ১৪ মে ২০২৫
সাম্য হত্যার প্রতিবাদে ঢাবিতে ছাত্রদলের বিক্ষোভ মিছিল

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও ছাত্রদল নেতা শাহরিয়ার আলম সাম্য হত্যার প্রতিবাদে গভীর রাতে বিক্ষোভ মিছিল করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা। এ সময় তারা ভিসি ও প্রক্টরের পদত্যাগ দাবি করেন।

মঙ্গলবার (১৩ মে) দিনগত রাত ১২টার দিকে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যান সংলগ্ন কালীমন্দিরের সামনে ছুরিকাঘাতে নিহত হন সাম্য। ঘটনার পরপরই তার সহপাঠী, বন্ধু ও সংগঠনের নেতাকর্মীরা ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে ক্যাম্পাসের দিকে রওনা দেন।

রাত আনুমানিক পৌনে ২টার দিকে স্যার এ এফ রহমান হলের সামনে থেকেও পৃথক একটি মিছিল বের করেন ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা। এ সময় শিক্ষার্থীরা ‘আমার ভাই কবরে, খুনি কেন বাহিরে’, ‘আমার ভাই মরলো কেন, প্রশাসন জবাব দে’, ‘বিচার চাই, সাম্য হত্যার বিচার চাই’ সহ নানা স্লোগানে দেন।

পরে বিক্ষোভকারীরা উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থান নেন। উপাচার্য অধ্যাপক নিয়াজ আহমেদ খান সেখানে উপস্থিত হলে ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা তার বিরুদ্ধেও ‘শেইম-শেইম’ স্লোগান দেন। একপর্যায়ে পরিস্থিতি শান্ত হলে উপাচার্য শিক্ষার্থীদের মিছিলে অংশ নেন।

মিছিলটি রাজু ভাস্কর্য হয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গিয়ে শেষ হয়। পথে মিছিলে যোগ দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর সহযোগী অধ্যাপক সাইফুদ্দিন আহমদ।

তবে মিছিল শেষে উপাচার্য ও প্রক্টর নিহত শিক্ষার্থীকে দেখতে হাসপাতালে প্রবেশ করতে চাইলে শিক্ষার্থীরা বাধা দেন। এ সময় তারা ‘অথর্ব প্রক্টর, মানি না মানবো না’, ‘অথর্ব ভিসি মানি না, মানবো না’ ইত্যাদি স্লোগান দেন। পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়ে পড়লে অবশেষে উপাচার্য ও প্রক্টরকে অ্যাম্বুলেন্সে করে হাসপাতাল ত্যাগ করতে হয়।

পরে শিক্ষার্থীরা রাজু ভাস্কর্যে আরেকটি বিক্ষোভ মিছিল করেন। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন আবাসিক হল থেকেও শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভে অংশ নেন।

নিহত সাম্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী এবং স্যার এ এফ রহমান হল ছাত্রদলের সাহিত্য ও প্রকাশনা সম্পাদক ছিলেন। ঘটনার পর রাতেই পুলিশ দুজনকে আটক করেছে বলে নিশ্চিত করেছে শাহবাগ থানা।

এদিকে হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়লেও ছাত্রদলের কিছু কর্মসূচিকে ঘিরে সমালোচনার মুখে পড়েছে সংগঠনটি। শিক্ষার্থীদের একাংশ মনে করছেন, ছাত্রদল এই ঘটনায় ‘লাশ নিয়ে রাজনীতি’ করছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফেসবুকভিত্তিক শিক্ষার্থী গ্রুপে অনেকেই ছাত্রদলের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তাদের মতে, হত্যাকাণ্ডের বিচার চাওয়াই মূল দাবি হওয়া উচিত ছিল, কিন্তু ছাত্রদল ভিসি ও প্রক্টরের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের সমর্থন হারিয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী জুলহাস কবির লিখেছেন, ‘ক্যাম্পাসে আমার ভাইকে হত্যা করা হয়েছে শুনেই সঙ্গে সঙ্গে ছুটে গেলাম দেখতে, বিক্ষোভে অংশ নিলাম। কোন দল করে সেটা আমার কাছে মুখ্য ছিল না, কিন্তু এর মাঝেই কিছুটা লাশের রাজনীতির গন্ধ পাচ্ছি, যেটা অত্যন্ত দুঃখজনক।’

তিনি আরও লেখেন, ‘আমি সবার কাছে অনুরোধ করবো, প্লিজ এটা নিয়ে কেউ রাজনীতি কইরেন না, আমার ভাই মারা গেছে, এর বিচার দাবি করেন, ক্যাম্পাসকে নিরাপদ রাখার জোর আওয়াজ তোলেন, এটাই চাওয়া।’

সাম্য হত্যাকাণ্ডের তদন্ত চলছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পাওয়ার পর বিস্তারিত জানা যাবে বলেও পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে।

এফএআর/ইএ/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।