তিন ঘণ্টা দেরি, চবিতে চান্স পেয়েও ভর্তি বাতিল শিক্ষার্থীর

বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক
বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক চবি
প্রকাশিত: ০৭:২০ পিএম, ১৭ জুলাই ২০২৫

নির্দিষ্ট সময়ের তিনঘণ্টা দেরিতে আসায় সুযোগ পেয়েও ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষে এক শিক্ষার্থীর ভর্তি বাতিল করেছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) কেন্দ্রীয় ভর্তি পরীক্ষা কমিটি। এতে ভর্তি অনিশ্চয়তা হওয়ায় মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন শিক্ষার্থী।

ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী কৌশিক কুমার সীমান্ত চবির ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষে ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে ৩৫৩৫তম মেরিট অর্জন করেন।

তার বাড়ি বরগুনার পাথরঘাটা উপজেলায়। পরে সংস্কৃতি বিভাগের গণবিজ্ঞপ্তিতে তিনি ১২তম পজিশনে ডাক পান। তার ভর্তি পরীক্ষার রোল নম্বর ২৪১৮৪৪।

জানা গেছে, সংস্কৃতি বিভাগের গণবিজ্ঞপ্তিতে নির্বাচিত শিক্ষার্থীদের ভর্তির সময় ছিল গত ২৬ জুনের বেলা ১১টা পর্যন্ত। কিন্তু ওই শিক্ষার্থী বিভাগে এসেছেন দুপর ২টায়। পরে ভর্তি-প্রক্রিয়ায় সংশ্লিষ্টরা জানান, যথাসময়ে উপস্থিত না হওয়ায় তার নামটি অন্তর্ভুক্ত হয়নি।

এদিকে বুধবার (১৬ জুলাই) অনুষ্ঠিত ভর্তি পরীক্ষা কমিটির সভায় ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর করা আবেদনটি গৃহীত না হওয়ায় তার ভর্তি বাতিল হয়েছে বলে জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ভর্তি পরীক্ষা কমিটির সদস্য সচিব ও ডেপুটি রেজিস্ট্রার (অ্যাকাডেমিক) এসএম আকবর হোছাইন।

গত ২৯ জুন বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. ইকবাল শাহিনের সুপারিশে উপাচার্য অধ্যাপক ড. ইয়াহইয়া আখতার বরাবর একটি আবেদনপত্র জমা দেন কৌশিক সীমান্ত।

আবেদনপত্রে সীমান্ত উল্লেখ করেছেন, নেটওয়ার্ক সমস্যার কারণে আমি নির্ধারিত সময়ে ভর্তি বিজ্ঞপ্তি দেখতে পাইনি। ২৫ জুন রাত ১২টার দিকে আমি ভর্তি বিজ্ঞপ্তি দেখতে পাই এবং তাৎক্ষণিক আমার বাবা অ্যাম্বুলেন্সের মাধ্যমে আমাকে ঢাকা পাঠান। সঠিক সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে পৌঁছানোর জন্য আমার বাবা ঋণ করে বিমানের টিকিট সংগ্রহ করেন এবং আমি দুপুর ১২টা ৩০ মিনিটের ফ্লাইটে ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম রওনা হই। এর আগে সকাল ৯ ঘটিকায় আমার এলাকার এক সিনিয়র ভাই, যিনি চবিতে অধ্যয়নরত আছেন তার মাধ্যমে আমার সব কাগজপত্রের ফটোকপিসহ ভর্তি-সংক্রান্ত কক্ষে এবং ডিন অফিসে যোগাযোগ করাই। কিন্তু সেখান থেকে তাকে জানানো হয়, ছাত্রকে সরাসরি যে কোনোভাবে ১১টার মধ্যে উপস্থিত থাকতে হবে।

আবেদনপত্রে তিনি উল্লেখ করেন, বিলম্বে পৌঁছানোর বিষয়টি উপলব্ধি করে আমার বাবা উপাচার্য স্যারকে ফোন করে বিলম্বে পৌঁছানোর বিষয়টি ক্ষমা-সুন্দর দৃষ্টিতে দেখার জন্য অনুরোধ করেন। উপাচার্য সংশ্লিষ্ট ডিন মহোদয়ের কাছে জানানোর পরামর্শ দেন। অতঃপর আমি দুপুর ২টায় ভর্তি-সংক্রান্ত কক্ষে উপস্থিত হই। কক্ষে দায়িত্ব-কর্তব্যরত ব্যক্তিগণ, যাদেরকে আমি নামে চিনি না। তাদের আমার পরিচয় দিলে তারা আমাকে অপেক্ষা করতে বলেন। পরে আমাকে ৪.৫০ মিনিটে তারা জানান যে যথাসময়ে উপস্থিত না হওয়ায় আমার নাম অন্তর্ভুক্ত করা যাবে না।

এ বিষয়ে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী কৌশিক কুমার সীমান্ত বলেন, আমি অত্যন্ত প্রত্যন্ত উপকূলীয় এলাকার একজন দরিদ্র পরিবারের সন্তান। আমার এলাকা প্রতি বছর প্রাকৃতিক দুর্যোগ বৃষ্টি, বন্যা এবং প্রতিকূল আবহাওয়ার সম্মুখীন হয়। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিজ্ঞপ্তি দেওয়ার সময় নেটওয়ার্কের সমস্যার কারণে আমি অনলাইনে ঢুকতে পারিনি। ফলে ২৪ জুন সকাল ৯টায় গণবিজ্ঞপ্তি দিলেও আমি ২৫ জুন রাত ১২টায় ভর্তির নোটিশটি দেখতে পাই। তাৎক্ষণিক আমি অ্যাম্বুলেন্সযোগে ঢাকা যাত্রা করি।

তিনি আরও বলেন, ২৯ জুন আমি উপাচার্য বরাবর একটি আবেদনপত্র জমা দেই। এরপর গত ৪ জুলাই আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেপুটি রেজিস্ট্রার (অ্যাকাডেমিক) এসএম আকবর হোছাইনের কাছে আমার ভর্তির অগ্রগতির বিষয়ে জানতে চাই। তিনি জানান, আগামী ১৬ জুলাই একটি মিটিং হবে, আমি যেন তখন পর্যন্ত অপেক্ষা করি। সে অনুযায়ী আজ (বৃহস্পতিবার) সকালে ডেপুটি রেজিস্ট্রার (অ্যাকাডেমিক) স্যারের সঙ্গে দেখা করলে তিনি জানান, আমার আবেদন মিটিংয়ে গৃহীত হয়নি।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেপুটি রেজিস্ট্রার (অ্যাকাডেমিক) ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা কমিটির সদস্য সচিব এসএম আকবর হোছাইন বলেন, ওই শিক্ষার্থীর আবেদনটি বুধবার অনুষ্ঠিত ভর্তি পরীক্ষা কার্যক্রম কমিটির সভায় গৃহীত না হওয়ায় বাতিল হয়েছে।

কলা ও মানববিদ্যা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. ইকবাল শাহিন খান বলেন, তিন ঘণ্টা পরে ভর্তি হতে আসা শিক্ষার্থী বিষয়টি আমরা জানতে পেরেছি। ওই শিক্ষার্থী আমার থেকে সুপারিশ নিয়ে উপাচার্য বরাবর আবেদনপত্র দিয়েছিল। তবে গতকাল অনুষ্ঠিত কেন্দ্রীয় ভর্তি পরীক্ষা কমিটির সভায় তার আবেদনটি গৃহীত হয়নি। ফলে তার ভর্তি বাতিল হয়েছে। গতকালের সিদ্ধান্তের পরে আর সুযোগ দেওয়া সম্ভব নয়। তার মতো এরকম সমস্যায় আরও অনেকেই ছিল। তাদের ভর্তি বাতিল করা হয়েছে। তাই নিয়মানুযায়ী তাকে ভর্তির সুযোগ দেওয়া যাচ্ছে না।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (অ্যাকাডেমিক) অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ শামীম উদ্দিন খান বলেন, তিনঘণ্টা কেন, তিন মিনিট দেরি করে আসলেও এসব বিষয়ে সুযোগ দেওয়া হয় না। যথাসময়ে না আসায় গতকাল অনেকের ভর্তি বাতিল হয়েছে। কাউকে সুযোগ দেওয়া হবে না।

সোহেল রানা/আরএইচ/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।