বাকৃবি প্রশাসনের বিবৃতি

আন্দোলনকে ভিন্ন খাতে নিতে শিক্ষকদের স্বজনদের বহিরাগত আখ্যা

বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক
বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক বাকৃবি
প্রকাশিত: ১০:১০ এএম, ০২ সেপ্টেম্বর ২০২৫

 

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে (বাকৃবি) পশুপালন ও ভেটেরিনারি অনুষদের কম্বাইন্ড ডিগ্রির দাবির প্রেক্ষিতে গঠিত কমিটির সুপারিশ বাস্তবায়নের পর একাডেমিক কাউন্সিল সভার পরবর্তী পরিস্থিতি জটিল হয়ে ওঠে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন অভিযোগ করেছে, একাডেমিক কাউন্সিলের সভা শেষে প্রাথমিকভাবে শিক্ষার্থীরা সন্তুষ্ট থাকলেও একটি স্বার্থান্বেষী মহলের ইন্ধনে পরিস্থিতি পাল্টে যায় এবং পরে শিক্ষকদের অবরুদ্ধ করা হয়।

সোমবার (১ সেপ্টেম্বর) বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে এমন অভিযোগ করা হয়।

বিবৃতিতে বলা হয়, ‘৭ আগস্ট শিক্ষার্থীরা কম্বাইন্ড ডিগ্রির দাবিতে উপাচার্যের কাছে স্মারকলিপি প্রদান করে। এর প্রেক্ষিতে ১২ আগস্ট বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন একটি কমিটি গঠন করে। কমিটি শিক্ষক-শিক্ষার্থী, মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা, ভেটেরিনারি কাউন্সিল ও সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে মতবিনিময় করে সুপারিশমালা প্রস্তুত করে। ৩১ আগস্ট সকাল ১১টায় শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন মিলনায়তনে একাডেমিক কাউন্সিল সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় উপস্থিত ২৫১ জন শিক্ষকের আলোচনার পর প্রস্তাবিত ৬টি সুপারিশ সর্বসম্মতভাবে গৃহীত হয়।’

কর্তৃপক্ষের অভিযোগ, ‘সভা শেষে শিক্ষার্থীরা প্রাথমিকভাবে সন্তুষ্ট থাকলেও একটি স্বার্থান্বেষী মহলের ইন্ধনে পরিস্থিতি পাল্টে যায়। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা প্রায় ৩০০ শিক্ষক ও কর্মকর্তাকে মিলনায়তনে তালাবদ্ধ করে রাখে। এসময় ষাটোর্ধ্ব, অসুস্থ ও গর্ভবতী শিক্ষকসহ অনেকেই ভোগান্তির শিকার হন। প্রচণ্ড গরম ও অভুক্ত অবস্থাতেও শিক্ষকরা শক্তি প্রয়োগ না করে আলোচনার চেষ্টা চালান। জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনও আলোচনায় ব্যর্থ হয়। প্রায় ৮ ঘণ্টা পর মিলনায়তনের একটি গেট কে বা কারা খুলে দিলে শিক্ষকরা বের হয়ে আসেন। এসময় আন্দোলনকারীরা বাধা দিতে এলে তাদের সঙ্গে ধাক্কাধাক্কিতে কয়েকজন শিক্ষার্থী আহত হয়। আহতদের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ দুঃখ প্রকাশ করেছে।’

আরও উল্লেখ করা হয়, ‘শিক্ষকদের স্বজন ও শুভানুধ্যায়ীরা অবরুদ্ধ অবস্থায় মিলনায়তনের বাইরে অপেক্ষা করছিলেন। কিন্তু তাদের বহিরাগত আখ্যা দিয়ে শিক্ষার্থীদের উসকে দেওয়া হয় এবং আন্দোলনকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করা হয়। গেটের তালা ভাঙার ঘটনায় বহিরাগত কেউ জড়িত থাকলে স্থানীয় প্রশাসনের সহায়তায় তদন্তের মাধ্যমে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ‘প্রশাসন আন্তরিকভাবে শিক্ষার্থীদের দাবির পক্ষে ব্যবস্থা নিলেও পরে যে ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে, তাএকটি স্বার্থান্বেষী মহলের ষড়যন্ত্রের অংশ। পরিস্থিতি বিবেচনায় একইদিন রাত ৯টা ৩০ মিনিটে সিন্ডিকেটের জরুরি ভার্চুয়াল সভায় আইনশৃঙ্খলার দায়িত্ব জেলা প্রশাসনের কাছে হস্তান্তর এবং পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত সব ক্লাস ও পরীক্ষা বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত হয়। শিক্ষার্থীদের স্বার্থ ক্ষুণ্নকারী ও হামলাকারী যেই হোক, তদন্ত সাপেক্ষে সর্বোচ্চ শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে। তাদের ন্যায্য দাবি পূরণে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সচেষ্ট ছিল, আছে এবং থাকবে।’

রোববার (৩১ আগস্ট) সকাল ৯টা থেকে ভেটেরিনারি ও পশুপালন অনুষদের শিক্ষার্থীরা শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন মিলনায়তনের আশেপাশে জড়ো হতে থাকেন। বেলা ১১টায় একই মিলনায়তনে কম্বাইন্ড ডিগ্রি ইস্যু নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কাউন্সিলের জরুরি সভা শুরু হয়। বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, বিএসসি ইন অ্যানিমেল হাজবেন্ড্রি, ডক্টর অফ ভেটেরিনারি মেডিসিন এবং দুই অনুষদের সমন্বয়ে কম্বাইন্ড ডিগ্রি; এই তিনটি ডিগ্রিই বহাল থাকবে। তবে শিক্ষার্থীরা এ সিদ্ধান্ত মেনে নেননি এবং এক পেশায় এক ডিগ্রি তথা শুধুমাত্র কম্বাইন্ড ডিগ্রির দাবিতে অনড় থাকেন।

ফলে দুপুর দেড়টার দিকে শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যসহ আড়াই শতাধিক শিক্ষককে মিলনায়তনে অবরুদ্ধ করে তালা ঝুলিয়ে দেন। প্রায় ৬-৭ ঘণ্টা অবরুদ্ধ রাখার পর দ্বিতীয় দফায় একাডেমিক কাউন্সিলের বৈঠক বসে। এসময় ময়মনসিংহের জেলা প্রশাসক মুফিদুল আলমসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা ক্যাম্পাসে প্রবেশ করেন।

এর কিছুক্ষণের মধ্যেই বহিরাগতদের একটি মিছিল শিক্ষার্থীদের লাঠিসোঁটা নিয়ে ধাওয়া দেয়। হামলায় ক্যাম্পাসের কেন্দ্রীয় লাইব্রেরি ও অন্যান্য স্থাপনা ভাঙচুর হয়। কয়েকটি ককটেল বিস্ফোরণের শব্দও শোনা যায়। দেশীয় অস্ত্রধারী বহিরাগতদের হামলায় এক নারী শিক্ষার্থীসহ বেশ কয়েকজন আহত হন। এসময় মিলনায়তনে অবরুদ্ধ শিক্ষকরা পেছনের দরজা দিয়ে নিরাপদে সরে যান।

আসিফ ইকবাল/এফএ/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।