ভোট গণনা করতে যাচ্ছি: বাবাকে জাবি শিক্ষিকা জান্নাতুলের শেষ মেসেজ

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি পাবনা
প্রকাশিত: ০৮:১৩ পিএম, ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৫
জাবি শিক্ষিকা জান্নাতুল ফেরদৌস

‘ভোট গণনা করতে যাচ্ছি’ - এটিই ছিল জাকসু নির্বাচনে ভোট গণনা করতে গিয়ে মারা যাওয়া জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগের শিক্ষিকা জান্নাতুল ফেরদৌসের বাবাকে দেওয়া শেষ ফোন ম্যাসেজ।

শুক্রবার (১২ সেপ্টেম্বর) সকাল সোয়া ৮টার দিকে বাবাকে এই ম্যাসেজ দেন তিনি। পরে জাকসু নির্বাচন অফিসে গিয়ে পৌনে ৯টার দিকে অসুস্থ হয়ে পড়েন। এরপর নেন চিরবিদায়। তার অপ্রত্যাশিত এ বিদায়ে বিষাদের গাঢ় কালো অন্ধকারে নিমজ্জিত পরিবার ও স্বজনরা। একমাত্র সন্তানের বিয়োগে পাগলপ্রায় বাবা-মা। শুক্রবার জান্নাতুলের পাবনা শহরস্থ বাবার বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় এমন চিত্র।

জান্নাতুলের বাবা রুমী খন্দকার পাবনার সংবাদকর্মী। বর্তমানে দৈনিক ইত্তেফাকের জেলা প্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি পাবনা প্রেস ক্লাবের সভাপতির দায়িত্বও পালন করেছেন এক সময়। ওই মেয়াদেই সাধারণ সম্পাদক ছিলেন মাছরাঙা টেলিভিশনের বর্তমানের উত্তরাঞ্চলীয় ব্যুরো চিফ উৎপল মীর্জা। তিনি জানান, রুমি ভাই একদম ভেঙে পড়েছেন। জান্নাতুল তাদের একমাত্র সন্তান। বলা যেতে পারে বেশ সাধনা ও আদরের সন্তান ছিলেন জান্নাতুল। মারা যাবার দিন সকালে বাবার সঙ্গে কথা না হলেও ফোন ম্যাসেজে কথা হয়েছিলো তার। দিয়েছিলেন একটি ম্যাসেজ- ভোট গণনা করতে যাচ্ছি। এরপর আর কথা বা ম্যাসেজ আদান-প্রদান হয়নি বাবা ও মেয়ের মধ্যে। এর ঘণ্টাখানেক পরেই মেয়ে বিদায় নেন।

জান্নাতুলের বাবার এ সহকর্মী বলেন, তবে গতরাতে জান্নাতুল বাবা-মায়ের সঙ্গে ফোনে কথা বলেছেন। অসুস্থ মায়ের খোঁজ নিয়েছিলেন। বাবা ও মা উভয়কেই ঠিকমতো ঔষধ খেতে ও শরীরের যত্ন নিতে বলেন। এসময় বাবা রুমী খন্দকার মেয়েকে জাকসু নির্বাচন সম্পর্কেও জিজ্ঞেস করেন। এ নিয়েও টুকটাক আলাপ হয় বাবা-মেয়ের।

স্বজনরা জানান, রুমী খন্দকারের অত্যন্ত আদরের একমাত্র মেয়ে ছিলেন জান্নাতুল ফেরদৌস। ঢাকায় গেলে বাবা-মা তার ওখানেই উঠতেন। ছোটবেলা থেকেই জান্নাতুল ছিলেন অসম্ভব মেধাবী। শিক্ষাজীবনের সব ক্ষেত্রেই তার ফলাফল ছিল ঈর্ষণীয়। ২০০৯ সালে পাবনা সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষায় গোল্ডেন এ প্লাস ও ২০১১ সালে পাবনা সরকারি মহিলা কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষাতেও গোল্ডেন এ প্লাস নিয়ে উত্তীর্ণ হন তিনি। এরপর ২০১২ সালে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে চারুকলায় ভর্তি হন। এরপর কৃতিত্বের সঙ্গে অনার্স ও মাস্টার্স সম্পন্ন করে নিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২১ সালে চারুকলা বিভাগে শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন। সম্প্রতি সাভারের বাসিন্দা বিশ্ববিদ্যালয় সহপাঠীর সঙ্গে বিয়ে ঠিক হয় ও সবশেষ রেজিস্ট্রি হয়।

পাবনা সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের তৎকালীন প্রধান শিক্ষিকা রোখসানা খানম ডেইজি বলেন, জান্নাতুল খুব চুপচাপ ও শান্ত স্বভাবের ছিল। অত্যন্ত মেধাবী ছিল। আকস্মিকভাবে তার মৃত্যুর খবরে আমরাও শোকাহত।

জান্নাতুলের বাবার সহকর্মী সাংবাদিক উৎপল মীর্জা বলেন, ছয় মাস আগে তাদের বিয়ে ঠিক হয় এবং আপাতত রেজিস্ট্রি করে রাখা হয়। আগামী বছরের ৫ জানুয়ারি তাদের ধুমধাম করে বিয়ের অনুষ্ঠান সম্পন্ন হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সেটি আর হলো না। জাকসু নির্বাচনে দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে জীবনের ইতি টানলেন তিনি। আনুষ্ঠানিকভাবে মেহেদী রাঙা হাতে সংসারজীবনে প্রবেশ করা হলো না তার। এসব জানিয়ে জান্নাতুলের বাবা কান্নায় ভেঙে পড়েন।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী সংসদ (জাকসু) নির্বাচনে ভোট গণনা কার্যক্রমে অংশ নিতে এসে অসুস্থ হয়ে মারা যান জান্নাতুল ফেরদৌস (৩১)। শুক্রবার সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ভবনে ভোট গণনার কক্ষের দরজার সামনে হঠাৎ পড়ে যান তিনি। পরে সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে তাকে মৃত ঘোষণা করেন কর্তব্যরত চিকিৎসক।

ওই শিক্ষিকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ও জাকসু নির্বাচনে প্রীতিলতা হলে পোলিং কর্মকর্তার দায়িত্বে ছিলেন। শুক্রবার বাদ জুমা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে তার জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। রাতে তার মরদেহ পাবনায় আনা হবে। বাদ এশা শহরের কাচারিপাড়া মসজিদে জানাযা শেষে তাকে দাফন করা হবে।

তার এমন মৃত্যুতে পাবনা প্রেস ক্লাবের সভাপতি আখতারুজ্জামান আখতার, সাধারণ সম্পাদক জহুরুল ইসলাম, সাবেক সভাপতি এ বি এম ফজলুর রহমানসহ অন্যান্য সাংবাদিকরাও গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। একই সঙ্গে শোক সন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানিয়েছেন তারা।

আলমগীর হোসাইন নাবিল/এএমএ/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।