শাবিপ্রবি
র্যাগিংয়ের শাস্তিতে শিক্ষার্থীদের ক্ষোভ, সিদ্ধান্ত বাতিলের দাবি
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (শাবিপ্রবি) র্যাগিংয়ের ঘটনায় এক শিক্ষার্থীকে আজীবন বহিষ্কার এবং ২৪ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে শাস্তি দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
সম্প্রতি অনুষ্ঠিত সিন্ডিকেট সভায় নেওয়া এ সিদ্ধান্ত প্রকাশ্যে আসতেই শিক্ষার্থীদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা বহিষ্কারের এ সিদ্ধান্তকে হয়রানি উল্লেখ করে নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছেন।
ইতিমধ্যে বহিষ্কারের ঘটনাকে উদ্বেগজনক উল্লেখ করে বিবৃতি দিয়েছেন একাধিক বিভাগের শিক্ষার্থীরা। তাদের দাবি, প্রায় এক বছর আগের তুচ্ছ মনোমালিন্যের বিষয়, যা পারষ্পরিক সমঝোতার মাধ্যমে সমাধান হয়েছিল, সেটিকে নতুনভাবে সামনে এনে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন শাস্তি দিয়েছে। শিক্ষার্থীরা দ্রুত এ সিদ্ধান্ত বাতিলের দাবি জানিয়েছেন।
শাস্তির ঘটনাকে ব্যক্তিগত আদর্শের প্রভাব হিসেবেও দেখছেন শিক্ষার্থীদের অনেকে। ফয়সাল হোসেন নামে এক শিক্ষার্থী ফেসবুকে লিখেছেন, গত এক কিংবা দেড় বছর আগের একটা ছোট বিষয়কে বড় করে দেখিয়ে শাস্তি দেওয়া হচ্ছে। এরকম একটা তদন্ত করতে তো সর্বোচ্চ এক মাসের বেশি লাগার কথা নয়। সেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের কি কাজ এটা হয়ে দাঁড়িয়েছে শিক্ষার্থীদের হয়রানি? র্যাগিংয়ের বিরুদ্ধে সবাই। সেটার জন্য প্রশাসন। কিন্তু শিক্ষক নামক এলিট শ্রেণীর ইগো আর ব্যক্তিগত আদর্শের জন্য আমাদের শিক্ষার্থীদের জীবন ধ্বংস না হয়ে যাক।
মো. আবুল হাসনাত নামে আরেক শিক্ষার্থী বলেছেন, র্যাগিংয়ের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতিকে সমর্থন করলেও, প্রায় এক বছর আগে মীমাংসিত বা সামান্য বিষয়গুলো হঠাৎ সিন্ডিকেটে তোলা সম্পূর্ণ অগ্রহণযোগ্য এবং শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যতের প্রতি অবিবেচক সিদ্ধান্ত।
গণিত বিভাগের শিক্ষার্থী শেখ ওবাইদুল্লাহ লিখেছেন, প্রশাসনের নেওয়া এই বহিষ্কার সিন্ধান্তকে ঘৃণাভরে প্রত্যাখান করলাম। লঘু পাপের গুরুদণ্ড কখনো কাম্য নয়। পারলে আপনারা বিগত সময়ে হলে থাকা সাধারণ শিক্ষার্থীদের উপর সিনিয়র-জুনিয়র বন্ডিংয়ের নামে যারা সারারাত নির্যাতন চালাতো, অনেকেরই হল ছাড়তে বাধ্য করেছে তাদেরকে শাস্তির আওতায় আনেন।
র্যাগিংয়ের ঘটনাকে মিথ্যা ও সাজানো বলেও দাবি করেছেন ঘটনাস্থলে থাকা শিক্ষার্থীরা। তাদের অভিযোগ, প্রক্টর অফিসে ডেকে ভয়ভীতি দেখিয়ে তাদের কাছ থেকে বক্তব্য নেওয়া হয়।
অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী সাব্বির ভূঁইয়া দাবি করেছেন, তাদের বৈঠকটি ছিল বাস্কেটবল খেলা ও বিভিন্ন প্রোগ্রাম নিয়ে আলোচনা। সামান্য মনোমালিন্য মুহূর্তেই মিটে গিয়েছিল। কিন্তু প্রক্টর অফিসে ভর্তি বাতিলের হুমকি দিয়ে তাদের কাছ থেকে বক্তব্য নেওয়া হয়।
পরিসংখ্যান বিভাগের শিক্ষার্থী রিফাহ সানজিদা বলেছেন, তারা ঘটনাস্থলে থেকেও সেদিন কী র্যাগ হয়েছিল, তা বুঝতে পারেননি। এক বছর পর তা সংবাদে জানতে হচ্ছে। তিনি এটিকে উদ্দেশ্যমূলকভাবে ‘র্যাগিং’ হিসেবে উপস্থাপন করার একতরফা দৃষ্টিভঙ্গি বলে মন্তব্য করেছেন।
অভিযোগের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক মোখলেসুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, র্যাগিংয়ের শিকার হওয়া শিক্ষার্থীদের মধ্যে একজন বিষয়টি কর্তৃপক্ষকে অবগত করেন এবং তার পরিচয় গোপন রাখা হয়েছে। তিনি দাবি করেন, প্রক্টরিয়াল বডির কাছে জিজ্ঞাসাবাদে শিক্ষার্থীদের দেওয়া বক্তব্যের ভিডিও রেকর্ড রয়েছে।
শহীদ মিনারের ঘটনার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, পরিসংখ্যান বিভাগের শিক্ষার্থীদের র্যাগের বিষয়টি নিয়ে পাঁচজন সিনিয়র শিক্ষকের উপস্থিতিতেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তিনি প্রশ্ন তোলেন, শিক্ষকদের প্রেশারে পড়ে কেউ যদি আগের অভিযোগ উঠিয়ে নেয়, তাহলে কি অপরাধ মাফ হয়ে যায়? তাদের অপরাধের কারণেই শাস্তি হয়েছে।
এসএইচ জাহিদ/কেএইচকে/এএসএম