অনলাইন ক্লাসে উৎসাহ হারাচ্ছেন শিক্ষকরা

বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক
বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়
প্রকাশিত: ১২:২৪ পিএম, ২৭ আগস্ট ২০২০

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে অনলাইন ক্লাস পরিচালনায় নবীন শিক্ষকদের কেউ কেউ ধৈর্যের পরীক্ষা দিয়ে সামলে নিলেও ক্লাসবিমুখ প্রবীণ শিক্ষকরা। ঈদের পর ক্লাস নেয়া বন্ধ করে দিয়েছেন অনেকেই। বলছেন শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি কম, ক্লাসের আবহ না পাওয়ায় ক্লাস চালিয়ে যেতে উৎসাহ পাচ্ছেন না তারা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্র উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. লায়লা আরজুমান বানু বলেন, অনলাইন ক্লাস শুরু হলে শিক্ষার্থী উপস্থিতি অর্ধেকের বেশি ছিল। তবে ঈদের পর উপস্থিতি অনেক কমেছে। কখনও কখনও ১০০ জনের মধ্যে ১০-১৫ জন উপস্থিত হচ্ছে। ক্লাসের আবহ পাওয়া যাচ্ছে না। অনেক সময় ব্যক্তিগত আলাপ আলোচনায় ক্লাস চলে যাচ্ছে। সবমিলিয়ে ক্লাসের সেই পরিবেশ না পাওয়ায় এখন ক্লাসে যাচ্ছি না।

বিভাগের অধিকাংশ শিক্ষক ক্লাস বন্ধ করেছেন বলেও জানান তিনি।

শিক্ষকদের প্রণোদনার বিষয়টি উত্থাপন করে বলেন, অনলাইন ক্লাস পরিচালনার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়কে ইউজিসি থেকে একটা বড় অংকের টাকা দেয়া হয়েছে। তবে সেটি শিক্ষকদের জন্য বা শিক্ষার্থীদের জন্য ব্যয় করা হচ্ছে না।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. আহমেদ ইমতিয়াজ বলেন, প্রথম থেকেই অনলাইন ক্লাসের প্রতি মত দেননি তিনি।

অনলাইন ক্লাস একধরনের অপচয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, অন্যরা ক্লাস করাচ্ছে তাই আমি না করলে কেমন দেখায়। সেই দেখাদেখি ক্লাসে যাচ্ছেন অনেকে। বিভাগে মোট ২৭ জন শিক্ষকের প্রায় অর্ধেক শিক্ষক ক্লাস নেয়া বন্ধ করেছেন বলেও জানান তিনি।

এর কারণ হিসেবে বলছেন, একটা ক্লাসে নির্দিষ্ট বিষয় বুঝানোর জন্য আরও বিভিন্ন বাস্তব বিষয়ের উদাহরণ দিয়ে থাকি। তবে অনলাইনে সেটি নিয়ে আসা যায় না। অন্যদিকে শিক্ষার্থীরাও বাধ্য হয়ে ক্লাসে আসছে। এর মধ্যে ক্লাসে কেউ ঘুমাচ্ছে, কেউ ক্লাস অন করে বাইরে ঘুরতে গেছে, কেউ বা অন্য কাজে ব্যস্ত। ক্যামেরার মধ্যে ছাত্রের মা-বাবা আসছে, ছোট বাচ্চা আসছে।

তাই এ ধরনের অনলাইন ক্লাস অর্থহীন জানিয়ে তিনি বলেন, যদি ক্লাস করতে হয় তাহলে কোর্স কারিকুলাম পরিবর্তন করতে হবে। অনলাইন ক্লাস ৩০ মিনিটের বেশি করা যাবে না।

বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান বিভাগের ডিন অধ্যাপক ফখরুল ইসলাম বলেন, ঈদের পর থেকে উপস্থিতির হার ৩০-৩২ শতাংশে নেমে এসেছে। এর পেছনে শিক্ষার্থীদেরও নানান সমস্যা উঠে আসছে, কারো বাড়িতে বন্যা, কারো বিদ্যুৎ নাই, ডিভাইস নাই, স্পিড পাচ্ছে না। এসব নানা সমস্যায় শিক্ষার্থীরা ক্লাসগুলোতে ঠিকমতো উপস্থিত হতে পারছে না। শিক্ষক হিসেবে এটা আমাদের জন্য অস্বস্তিকর। কারণ সবাইকে নিয়ে আমাদের ক্লাস করার কথা। বিভিন্ন কারণে ৫-১০ শতাংশ শিক্ষার্থী আসবে না সেটাও হয়, কিন্তু অর্ধেকও আসবে না সে অবস্থায় ক্লাস নেয়া স্বস্তিদায়ক কথা নয়।

অধ্যাপক ফখরুল ইসলামের মতে, বিশ্ববিদ্যালয়ের অপেক্ষাকৃত তরুণ প্রজন্মের শিক্ষকরা যাদের ডিভাইসগুলোর সঙ্গে পরিচিতি আছে তারা কোনোভাবে চালিয়ে নিলেও সিনিয়ররা সেভাবে নিতে পারছেন না। জুনিয়ররা বারবার চেষ্টা করে কোনোভাবে সামাল দিতে পারলেও এসব চ্যালেঞ্জে পড়লে আর নিতে না পেরে একদমই বাতিল করে দিচ্ছেন প্রবীণ শিক্ষকরা।

তবে এভাবে ক্লাসবিমুখ হয়ে পড়া শিক্ষকদের সঠিক কোনো সংখ্যা জানাতে পারেননি তিনি।

তাহলে কী হতে পারে খুড়িয়ে চলা অনলাইন ক্লাসের ভবিষ্যৎ? এমন প্রশ্নের জবাবে অধ্যাপক ফখরুল বলছিলেন, আপাতত আপদকালীন সময়ে শিক্ষার্থীদের কোনোরকমে ব্যস্ত রাখা। একদম বন্ধ করে না দিয়ে কোনোভাবে তাদের সঙ্গে যোগাযোগটা রাখা যায় সেই প্রচেষ্টা করে যেতে হবে।

তবে তার ব্যক্তিগত মতামত হলো, করোনা মহামারির এ সময় অনেক বেশি দীর্ঘায়িত হতে পারে। রাজস্থান, দক্ষিণ কোরিয়া, আমেরিকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান চালুর অভিজ্ঞতায় বলা যায় সহসাই আমরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলতে পারব না। সেজন্য অনলাইন শিক্ষা-কার্যক্রমকে একটা সাসটেইনেবল উপায়ে এর একটা কাঠামো বা রূপরেখা তৈরি করতে হবে। যেখানে আমরা অনলাইনেই অর্ধেক ক্লাস বা পরীক্ষা নিয়ে নিব। মহামারি থেমে গেলেও আমরা এ ব্যবস্থা যেন সচল রাখতে পারি সেটার ব্যবস্থাও করতে হবে।

সালমান শাকিল/এফএ/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।