জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
ভর্তি পরীক্ষার ৬ মাস পর ক্লাস, গণরুমেই ঠাঁই মিললো নবীনদের
ভর্তি পরীক্ষার প্রায় ছয় মাস পর প্রথম ক্লাস পেয়েছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের (৫১ ব্যাচ) স্নাতকের শিক্ষার্থীরা। কিন্তু প্রশাসন নবীন শিক্ষার্থীদের নবনির্মিত হলে আসন বরাদ্দের প্রতিশ্রুতি দিলেও শেষপর্যন্ত ঠাঁই মিলেছে পুরাতন হলগুলোর গণরুমে।
মঙ্গলবার (৩১ জানুয়ারি) সকাল ১০টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের নবীন শিক্ষার্থীরা প্রথম ক্লাসে অংশ নেন। এর আগে সোমবার রাতে বিভিন্ন হলের গণরুমে থাকার সুযোগ পান তারা।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত বছরের ৩১ জুলাই থেকে ৪ আগস্ট পর্যন্ত চলে ২০২১-২০২২ শিক্ষাবর্ষের স্নাতক (সম্মান) শ্রেণিতে প্রথম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষা। প্রথম বর্ষের ক্লাস শুরুর কথা ছিল ১৫ জানুয়ারি। কিন্তু নতুন হলে জনবল সংকটের কারণ দেখিয়ে সংশোধিত বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়। তবে ক্লাস পিছিয়ে গেলেও শেষ পর্যন্ত নবনির্মিত হলে ঠাঁই মেলেনি নবীন শিক্ষার্থীদের। নতুন হলে আসন পেয়েছেন অন্য বর্ষের শিক্ষার্থীরা।
আরও পড়ুন: ১০তলা হলেও চালু হয়নি লিফট, নেই খাবারের ব্যবস্থা
সংশ্লিষ্টরা জানান, অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্পের অধীনে নবনির্মিত আবাসিক হলগুলো চালু করা সাপেক্ষে পুরাতন হলগুলোতে গণরুম না রাখার ঘোষণা দেয় কর্তৃপক্ষ। তবে নানা জটিলতায় ছাত্রদের জন্য দুটি এবং ছাত্রীদের জন্য দুটি ১০ তলা বিশিষ্ট নতুন হল উদ্বোধন করতে পারেনি প্রশাসন। ফলে কয়েকদফা সময়সূচি পিছিয়ে মঙ্গলবার প্রথম বর্ষের ক্লাস শুরু হয়েছে।
তবে এ প্রকল্পের অধীনে নির্মিত ছাত্রদের জন্য একটি এবং ছাত্রীদের জন্য একটি হল সম্প্রতি চালু করা হয়। হল দুটিতে আসন বরাদ্দ পায় অন্য বর্ষের শিক্ষার্থীরা। এদিকে পুরাতন হলগুলোতে অব্যবস্থাপনা ও সাবেকদের দাপটে প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের গণরুমেই ঠাঁই মিলেছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, নবীন শিক্ষার্থীরা হলের কমন রুম, ডাইনিং রুম, নামাজের কক্ষে গাদাগাদি করে থাকছেন। চারজনের এক রুমে থাকছেন ২২-২৫ জন শিক্ষার্থী। এছাড়া দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থীরা গণরুম ছেড়ে ‘মিনি গণরুমে’ উঠেছেন। সেখানে তারা দু’জনের রুমে ছয় থেকে আটজন এবং চার জনের রুমে ১৪ থেকে ১৬ জন থাকছেন।
নবীন ছাত্র নাহিদ বলেন, ‘নতুন স্বপ্ন নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে এসেছি। কিন্তু সেই স্বপ্ন প্রথমেই হোঁচট খেলো গণরুমে এক রাত থাকার পর। মশার কামড়, এরওপর গাদাগাদি করে থাকায় রাতে ভালোভাবে ঘুমাতেও পারিনি। এদিকে আমাদের সেশনের অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক বন্ধুদের প্রথম সেমিস্টার শেষ হয়েছে। তাই বলতে গেলে ক্লাস শুরুর আগেই আমরা সেশনজটে পড়েছি।’
আরও পড়ুন: অপর্যাপ্ত সুবিধা নিয়ে হলে উঠলো জাবির ৯০০ ছাত্রী
দিনাজপুর থেকে আগত বিশ্ববিদ্যালয়ের জীববিজ্ঞান অনুষদের এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক আব্দুল কাদের বলেন, ‘অনেক স্বপ্ন নিয়ে ছেলেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি করেছি। কিন্তু এখানে এসে থাকার ও খাবার ব্যবস্থা দেখে হতাশ হয়েছি। নতুন হলে ছেলের থাকার ব্যবস্থা হবে শুনে খুশি হয়েছিলাম। কিন্তু ভিন্ন চিত্র।’
বিশ্ববিদ্যালয় সংসদ ছাত্র ইউনিয়নের সাংগঠনিক সম্পাদক আলিফ মাহমুদ জাগো নিউজকে বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের ছেলেদের হলগুলোতে প্রশাসনের বিন্দুমাত্র কর্তৃত্ব নেই বললেই চলে। কাগজে স্বাক্ষর করা ও হল অফিস পরিদর্শনেই যেন তাদের কাজ শেষ। আসন বরাদ্দ ও শিক্ষার্থীদের সুবিধা-অসুবিধায় তাদের খুব একটা পাওয়া যায় না। কারণ তাদের অনেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে থাকেন।’
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভোস্ট কমিটির সভাপতি ও অধ্যাপক আব্দুল্লাহ হেল কাফি জাগো নিউজকে বলেন, নতুন হলে প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের ওঠানো হয়নি। তবে শিগগির নবনির্মিত অন্য চারটি হল চালু করে আবেদনের ভিত্তিতে শিক্ষার্থীদের ওঠানো হবে। স্নাতকোত্তর শেষ করা শিক্ষার্থীদের বের করতে সবগুলো হলের প্রাধ্যক্ষদের নির্দেশ দিয়েছি। তাদের বের করতে পারলে এবং নতুন হলগুলো চালু হলে গণরুম সংকট নিরসন হবে।
উপাচার্য অধ্যাপক নূরুল আলম জাগো নিউজকে বলেন, নতুন হলগুলোতে যারা আসন পেয়েছেন, তারা সেখানে গেলে পুরাতন হলগুলোর বেশ কিছু আসন ফাঁকা হবে। এছাড়া নির্মাণাধীন অপর চারটি হল ফেব্রুয়ারি মাসের মধ্যে চালুর পরিকল্পনা আছে। হলগুলো চালু হলে আর গণরুম থাকবে না।
এসজে/এমএস