আহত রাবি শিক্ষার্থী

বড় ভাইকে বাঁচাতে গিয়ে নিজের চোখ হারাতে বসেছি

বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক
বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়
প্রকাশিত: ১০:১৪ এএম, ১৪ মার্চ ২০২৩
স্থানীয়দের সঙ্গে সংঘর্ষ চলাকালীন চোখে রাবার বুলেট এসে লাগে শিক্ষার্থী আলিমুল সাকিবের

বড় ভাইয়ের শরীরে যখন পুলিশ গুলি চালায় তখন তাকে উদ্ধারের জন্য আমি ছুটে যাই। তাকে নিয়ে আসার সময় আমরা পুলিশকে বলছিলাম, আমরা চলে যাচ্ছি। কিন্তু পুলিশ আমাদের কথায় কর্ণপাত না করে অঝোরে রাবার বুলেট ছোড়ে। এতে আমার পুরো শরীর, মাথাসহ দুটি বুলেট আমার এক চোখে এসে পড়ে। এখন আমি নিজেই এক চোখ হারাতে বসেছি। আমাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য রাজশাহী মেডিকেল থেকে ঢাকায় রেফার করা হয়েছে।

এভাবেই কথাগুলো বলছিলেন পুলিশের অতর্কিত হামলার শিকার রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) শিক্ষার্থী আলিমুল সাকিব। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের ২০১৯-২০ সেশনের শিক্ষার্থী। পুলিশের ছোড়া রাবার বুলেট তার চোখে লেগে গুরুতর আহত হন তিনি। বর্তমানে তিনি রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তবে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে ঢাকায় রেফার করা হয়েছে।

আরও পড়ুন: সব দাবি মেনে নেওয়ার আশ্বাস, কাল থেকে ক্লাস-পরীক্ষা শুরু-

শুধু আলিমুল সাকিব নয়, আরও দুই শিক্ষার্থী এ সংঘর্ষে পুলিশের রাবার বুলেটে তাদের চোখ হারাতে বসেছেন। তাদেরও উন্নত চিকিৎসার জন্য আজ ঢাকায় পাঠানো হচ্ছে।

অন্য দুই শিক্ষার্থী হলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী আল-আমিন ইসলাম। তার দুচোখেই রাবার বুলেট লাগায় তাকাতে পারছেন না এ শিক্ষার্থী। তার অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।

আরেকজন হলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের আইসিই বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী মাহফুজ। তার চোখ ইটের আঘাতে ক্ষতবিক্ষত। তাকেও ঢাকায় রেফার করা হয়েছে।

jagonews24

শনিবার (১১ মার্চ) সন্ধ্যায় বাসের ভাড়া নিয়ে সুপারভাইজার ও হেলপারের সঙ্গে বাগবিতণ্ডা হয় এক রাবি শিক্ষার্থীর। এ নিয়ে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে স্থানীয়দের দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।

আরও পড়ুন: বহিরাগত ঠেকাতে কঠোর হচ্ছে রাবি প্রশাসন, কমানো হবে গেটের সংখ্যা-

ব্যবসায়ীদের ইটপাটকেল ও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে পুলিশের ছোড়া টিয়ার গ্যাস ও রাবার বুলেটে দুই শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হন। এদের মধ্যে শতাধিক শিক্ষার্থী রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। তাদের অনেকেই সুস্থ হয়ে ক্যাম্পাসে ফিরেছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এখনো বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের গুরুতর আহত ১৫ শিক্ষার্থী চিকিৎসা নিচ্ছেন। অনেকেই অপারেশন থিয়েটারে আছেন। আবার অনেককেই ঢাকায় রেফার করা হয়েছে। রোববার (১২ মার্চ) উপাচার্যসহ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কর্মকর্তারা তাদের দেখতে আসেন।

সংঘর্ষে আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে চোখ মেলে তাকাতে পারছেন না আইন বিভাগের শিক্ষার্থী আল-আমিন আকাশ। হাসপাতালে দুচোখ বন্ধ রেখেই জাগো নিউজের সঙ্গে কথা বলেন তিনি।

ওইদিনের রাতের ঘটনা বর্ণনা দিয়ে আল-আমিন বলেন, ‘আমরা সবাই নিরস্ত্র ছিলাম। ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া হওয়ার সময় পুলিশের সহযোগিতায় স্থানীয়রা আমাদের ওপর ইটপাটকেল ও পেট্রল বোমা ছুড়ছিল। একপর্যায়ে স্থানীয়রা পালিয়ে যায়। তখন শিক্ষার্থীরা বিনোদপুর গেট খুলে রাস্তায় শান্তিপূর্ণ অবস্থান করলে পুলিশ পানি ছিটাতে শুরু করে। আমরা ক্যাম্পাসের ভেতরে চলে আসছিলাম। তখন পুলিশ আমাদের ওপর টিয়ার গ্যাস ও রাবার বুলেট ছুড়ে অতর্কিত হামলা চালায়। আমার দুই চোখে গুলি লাগায় আমি মাটিতে লুটিয়ে পড়ি। ছাত্রদের ওপর পুলিশ কেন অতর্কিত গুলি চালালো তা আমার বুঝে আসে না।’

jagonews24

আরও পড়ুন: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে বহিরাগত প্রবেশ নিষিদ্ধ

গুলিবিদ্ধ আরেক শিক্ষার্থী জয় চন্দ্র রয় বলেন, ‘আমার শরীর ও পায়ের মধ্যে অসংখ্য স্প্লিন্টার। অসহনীয় যন্ত্রণা অনুভব করছি। আমাদের আকুল আবেদন, আমাদের চিকিৎসার সব ব্যয়ভার যেন প্রশাসন বহন করে।’

এদিকে আহত শিক্ষার্থীদের চিকিৎসার ব্যয়ভার প্রশাসন দেখবে বলে সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. গোলাম সাব্বির সাত্তার। তিনি বলেন, কোনো শিক্ষার্থীর উন্নত চিকিৎসার প্রয়োজন হলে তাকে ঢাকায় পাঠানো হবে।

মেডিকেলে শিক্ষার্থীদের দেখাশোনা করছেন ছাত্র উপদেষ্টা এম তারেক নূর। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকে আমরা আহত শিক্ষার্থীদের সবসময় খোঁজখবর রাখছি। তাদের চিকিৎসার সব ব্যয়ভার আমরা বহন করছি। তাদের মধ্যে যারা গুরুতর আহত তাদের উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠানো হচ্ছে। উপাচার্য স্যার এসে তাদের দেখেও গেছেন।’

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বগুড়া থেকে মোহাম্মাদ নামের একটি বাসে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে যাচ্ছিলেন এক ছাত্র। যাত্রাপথে ভাড়া নিয়ে তার সঙ্গে বাসের সুপারভাইজার ও হেলপারের বাগবিতণ্ডা হয়। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিনোদপুর গেটে বাসেট কাউন্টারে এসে বিষয়টি নিয়ে কথা বললে স্থানীয়দের সঙ্গে কথা-কাটাকাটিতে জড়িয়ে পড়েন। পরে তা সংঘর্ষে রূপ নেয়।

মনির হোসেন মাহিন/এসআর/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।