ক্যাম্পাসে বাঁশি বিক্রি করে সংসার চলে গণেশের
নিজের হাতে বাঁশি তৈরি করে রাবি ক্যাম্পাসে তিনযুগ ধরে বিক্রি করছি। আগে ক্যাম্পাসে বাঁশি বিক্রির আলাদা একটা হিড়িক ছিল। ব্যবসাও ভালো হতো। তখন সঙ্গীতের প্রতি মানুষের প্রবল আবেগ ছিল। দিনের পর দিন সে আবেগ কমছে। এখনও প্রতিদিন সকালে একটি ব্যাগে করে শতাধিক বাঁশি নিয়ে বের হই। কোনো দিন ৪-৫টি, কোনো দিন একটি বাঁশিও বিক্রি হয় না।
কথাগুলো বলছিলেন বয়সের ভারে নুয়ে পড়া রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) ক্যাম্পাসে বাঁশি বিক্রেতা গণেশ চন্দ্র দাস। ৩৬ বছর ধরে এ ক্যাম্পাসে বাঁশি বিক্রি করেন তিনি। যা দিয়েই কোনো রকম চলছে তার সংসার।
গণেশ চন্দ্র দাস রাজশাহীর পুঠিয়া উপজেলার কান্দ্রা গ্রামের বাসিন্দা। তিন ছেলে ও এক মেয়ের জনক তিনি। তিন ছেলেই বিবাহিত। তবে ১৫ বছর আগে চিকিৎসার অভাবে ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মারা যায় তার স্ত্রী। পরে দ্বিতীয় বিয়ে করেন। এ স্ত্রীও ক্যান্সারে আক্রান্ত।
আরও পড়ুন: বাঁশির সুরে চানাচুর বেচে সংসার চলে সানির
পারিবারিক অস্বচ্ছলতার কারণে লেখাপড়া করার সুযোগ হয়নি তার। তারপরও নিজের আকাঙ্ক্ষায় পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করেছেন। তার সাদামাটা জীবনে নেই কোনো বিলাসিতা। দুবেলা দুমুঠো ভাত জুটলেও কখনো অর্ধাহারে কাটিয়ে দিতে হয়। জীবিকার তাগিদে অন্য দশজনের মতোই ছুটতে হয় তাকে।
এ বিষয়ে গণেশ চন্দ্র দাস বলেন, এক সময় বাঁশি বিক্রি করেই আমার সংসার ভালোভাবে চলে যেত। কিন্তু এখন বয়সের ভারে নুইয়ে পড়েছি। আমার স্ত্রী খুবই অসুস্থ। তার চিকিৎসার জন্য প্রায় ৬০ হাজার টাকা লাগবে। আগের মতো বাঁশি বিক্রি হয় না। টাকার অভাবে তার চিকিৎসা করাতে পারি না।
বাঁশির দাম নিয়ে তিনি বলেন, বিভিন্ন গ্রেডের বাঁশি রয়েছে। ১৫০ টাকায় বাঁশি কেনা যায়। এ বাঁশির দাম ৭০০ টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে।
তিনি বলেন, এ পেশাকে আমি ছাড়তে চাই না। আমৃত্যু এ পেশাতেই থাকতে চাই। ৩৬ বছর ধরে যে বাঁশির ওপর আমার জীবিকা নির্বাহ হয়ে আসছে আশা করি বাকি দিনগুলোও তার ওপর দিয়েই কাটবে।
ক্লাস শেষে বাঁশির সুর শুনতে অন্যদের মতো ভিড় জমিয়েছেন সারতী আক্তার। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, আমি প্রায়ই ক্লাস শেষে উনার (গণেশ) বাঁশি বাজানোর সুর শুনতে এখানে আসি। উনি অসম্ভব সুন্দর বাঁশি বাজান। তবে হয়তো উনি আগের মতো বাঁশি বিক্রি করতে পারেন না। আমাদের সবার উনার পাশে দাঁড়ানো উচিত।
আশিকুর রহমান নামের বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেক শিক্ষার্থী বলেন, অনেকদিন ধরে তাকে ক্যাম্পাসে দেখছি। উনি আগের মতো বাঁশি বিক্রি করতে পারেন না। বয়েসের ভারে এখন উনি আগের মতো চলতেও পারে না। সকলেই তার পাশে দাঁড়ানো উচিত।
বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন দপ্তরের প্রশাসক মোকছিদুল হক জাগো নিউজকে বলেন, ২০০৩ সালে আমি রাবিতে ভর্তি হই। তখন থেকে উনাকে চিনি। ইমন নামের তার এক ছেলে ছিল। তাকে সঙ্গে নিয়ে তার বাবার বাঁশি বাজানো শুনতাম। প্রায় ২০ বছর হয়ে গেছে এখনো উনাকে ক্যাম্পাসে দেখি। তবে বর্তমানে আগের মতো ব্যবসা হয়না তার। আমাদের সবার তার পাশে দাঁড়ানোর উচিত।
মনির হোসেন মাহিন/আরএইচ/জিকেএস