বাংলাদেশ উদ্ভিদ রোগতত্ত্ব সমিতির কমিটি
সভাপতি আব্দুল মান্নান সম্পাদক সালাহউদ্দিন মাহমুদ
বাংলাদেশ উদ্ভিদ রোগতত্ত্ব সমিতির দশম দ্বিবার্ষিক সম্মেলনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বশেমুরকৃবি) সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আব্দুল মান্নান আকন্দকে সভাপতি ও শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শেকৃবি) প্ল্যান্ট প্যাথলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. সালাহউদ্দিন মাহমুদ চৌধুরীকে সাধারণ সম্পাদক করে ২১ সদস্যের কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। আগামী দুই বছরের জন্য নতুন এ কমিটি তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাবে।
শনিবার (১০ জুন) শেকৃবির শেখ রাসেল টিএসসি কমপ্লেক্সে বাংলাদেশ উদ্ভিদ রোগতত্ত্ব সমিতির দ্বিবার্ষিক সম্মেলন আয়োজন করা হয়। এতে সারাদেশের প্রায় ৩৫০ জন উদ্ভিদ রোগতত্ত্ববিদ উপস্থিত ছিলেন।
দ্বি-বার্ষিক এ সম্মেলনে শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন অধ্যাপক ড. মো. সালাহউদ্দিন মাহমুদ চৌধুরী। তিনি ‘বাংলাদেশে উদ্ভিদ রোগবালাইয়ের বর্তমান পরিস্থিতি ও আগামীর চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন।
বাংলাদেশ উদ্ভিদ রোগতত্ত্ব সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. ইসমাইল হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বশেখমুরকৃবির সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আব্দুল মান্নান আকন্দ। প্রধান পৃষ্ঠপোষক ছিলেন শেকৃবির ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য ড. অলোক কুমার পাল।
বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহা-পরিচালক ড. মো. শাহজাহান কবীর, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহা-পরিচালক ড. দেবাশীষ সরকার, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের সভাপতি ড. শেখ মোহাম্মদ বখতিয়ার।
মূল প্রবন্ধে বলা হয়, বিশ্বব্যাপী প্রতিনিয়ত জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে খাদ্যের চাহিদা। ধারণা করা হচ্ছে, ২০৫০ সালের মধ্যে বিশ্বের জনসংখ্যা ১০ বিলিয়নে দাঁড়াবে, যার জন্য প্রয়োজন হবে অতিরিক্ত ৬০ শতাংশ খাদ্য।
জলবায়ু পরিবর্তনের পাশাপাশি বাড়ছে ফসলের রোগবালাই ও তা দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে। রোগ ও পোকার আক্রমণে ফসলের বড় অংশ নষ্ট হচ্ছে। গবেষণায় দেখা যায়, বিশ্বব্যাপী ধানে ৩০ দশমিক ৩ শতাংশ, গমের ২১ দশমিক ৫ শতাংশ, ভূট্টার ২২ দশমিক ৬৬ শতাংশ, আলুর ১৭ দশমিক ২ শতাংশ, সয়াবিনের ২১ দশমিক ৪ শতাংশ ফসল নষ্ট হচ্ছে।
বাংলাদেশে রোগের আক্রমণে ১৫-২০ শতাংশ ফসল নষ্ট হচ্ছে। এটা বেড়ে ৩০-৪০ দশমিক বা তার বেশিও হতে পারে। বাংলাদেশে দিন দিন উদ্ভিদ ও ফসলের রোগবালাই বাড়ছে। নতুন নতুন রোগ ফসল উৎপাদনে হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে।
ধানের বিএলবি, নেক ব্লাস্ট, ফলস স্মাট, গমের ব্লাস্ট, সবজির গামি স্টেম ব্লাইট, পেপের রিং স্পট ভাইরাসের মতো রোগ দেখা দিচ্ছে। তাছাড়া স্টেম রট রোগে পাটের ৫০ শতাংশ ও লিফ কার্ল ভাইরাসে টমেটোর ৪০-১০০ শতাংশ উৎপাদন হ্রাস পেতে পারে।
বিদেশে কৃষিপণ্য রপ্তানিতে অন্যতম বাঁধা এসব রোগবালাই। এরই মধ্যে সরকার বেশকিছু কৃষিপণ্য, বিশেষ করে আলু, সবজি, আম ও লেবু রপ্তানির ক্ষেত্রে বিভিন্ন প্রকল্প হাতে নিয়েছে। আগামীর কৃষিতে আমাদের বেশকিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে।
বৈশ্বিক উষ্ণায়ন ও আবহাওয়া পরিবর্তনের কারণে নতুন নতুন রোগবালাই দেখা দিতে পারে। আবহাওয়ার পরিবর্তনে নতুন জীবাণুর সংক্রমণ হতে পারে। এছাড়া জীবাণুর স্থায়িত্বকালও বাড়তে পারে।
আমাদের দেশে রোগের আক্রমণের আরও একটি কারণ হলো, কৃষি উপকরণ আমদানি। নিয়মবহির্ভূতভাবে এসব উপকরণ দেশে প্রবেশ করায়, সেগুলোর সঙ্গে রোগের জীবাণুও প্রবেশ করছে।
আগামীতে এসব রোগ মোকাবিলায় গবেষণা বাড়াতে হবে। পরিবেশবান্ধব কার্যকরী জৈব বালাইনাশক বের করতে হবে। রোগ প্রতিরোধী জাত উদ্ভাবন, কৃষি প্রযুক্তি, সেন্সিং, কৃষি গবেষণা প্রতিষ্ঠান ও কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণায় আরও দায়িত্বশীল হতে হবে।
অনুষ্ঠানে উদ্ভিদ রোগতত্ত্বে গবেষণা ও অবদান রাখার জন্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ গোলাম আলী ফকির (মরণোত্তর), অধ্যাপক ড. এম. এ ওয়াদুদ মিয়া (মরনোত্তর) ও ড. হামিজুদ্দিন আহমেদকে আজীবন সম্মননা দেওয়া হয়।
তাসনিম আহমেদ তানিম/এসএএইচ