ছন্নছাড়া জীবন ছেড়ে ১৮ বেদে নারীর রূপান্তরের গল্প

ছন্নছাড়া বেদে জীবন থেকে ফিরেছেন স্বাভাবিক জীবনে। শুরু করেছেন ব্যবসা বাণিজ্য। নিজেদেরকে গড়ে তুলেছেন উদ্যোক্তা হিসেবে। সন্তানদের স্কুল-মাদরাসায় ভর্তি করিয়েছেন। অনেক বাধা বিপত্তিকে পেছনে ফেলে জীবনযুদ্ধে সংগ্রাম করে চলেছেন ১৮ জন বেদে নারী।
খুলনার সাত নম্বর ঘাট এলাকায় পরিবার নিয়ে তারা এখন স্বাভাবিক জীবন অতিবাহিত করছেন। কাপড়ের ব্যবসা, ব্যাগ বানানো, মুদি দোকান, সবজি ব্যবসা এবং ছাগল পালন করে তারা অর্থ উপার্জন করছেন। সন্তানদের স্কুল-মাদরাসায় ভর্তি করিয়েছেন। প্রতিনিয়ত নিজেদের জীবনমান উন্নত করতে কঠোর পরিশ্রম করছেন। জাগো নিউজকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে উঠে আসে তাদের এমন সংগ্রামী জীবনের কথা।
আরও পড়ুন-
তারা জাগো নিউজকে বলেন, আগে সিঙ্গা লাগাতাম। সাপের খেলা দেখাতাম। গ্রামে গ্রামে ঘুরতে হতো। কষ্টের জীবন পার করতাম। করোনার সময় মানুষজন আমাদের ঘরে উঠতে দিতো না। তাচ্ছিল্য করতো। ভিক্ষা পর্যন্ত করতে হয়েছে। সেই জীবন থেকে এখন স্বাভাবিক জীবনে ফিরে এসেছি আমরা। এখন আর আগের পেশায় নেই। করোনার পর ২০২২ সালে আমরা ‘রূপান্তর’ এনজিওতে ১০ দিনের প্রশিক্ষণ নিয়েছি। প্রশিক্ষণের পর তাদের সহযোগিতায় নিজেরা ব্যবসা শুরু করি। শাড়ি-কাপড় বিক্রি করি। এখন আয়ও বেড়েছে। আগে মানুষ আমাদের জায়গা দিত না। এখন সবাই আমাদের ভালোবাসে।
স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসা খোদেজা বেগম বলেন, প্রায় তিন বছর আগে বেদে জীবন ছেড়ে ছাগল পালন শুরু করি। একটা ছাগল মারা গেলে অন্যটি বিক্রি করে কাপড়ের ব্যবসা শুরু করি। এখন ভালো দিন কাটাচ্ছি।
বেদে সম্প্রদায়ের কপালি বেগম বলেন, ছন্নছাড়া জীবন পার করে এসেছি। সে জীবনে আমাদের সন্তানদের ফিরতে দিতে চাই না। এজন্য আমরা এখনো সংগ্রাম করে চলেছি।
আরও পড়ুন-
কেয়া খাতুন কষ্টের কথা মনে করে দীর্ঘশ্বাস নিয়ে বলেন, বেদে জীবনের বেড়াজাল থেকে বের হয়েছি। এখন সিমেন্টের বস্তা কিনে ব্যাগ বানিয়ে বিক্রি করি। আগে সাপখেলা দেখিয়ে টাকা আয় করতে হতো। মানুষের কাছে টাকা চেয়ে ভিক্ষাও করতে হয়েছে। এখন খুব শান্তিতে আছি।
মিনারা খাতুন বলেন, বেদে সম্প্রদায়ের বাইরে আমাদের ছেলে মেয়েদের বিয়ে দিতে পারতাম না। একটা গণ্ডির মধ্যে ছিলাম। স্বাভাবিক জীবনে ফিরে ব্যবসা করছি। সবাই এখন আমাদের সম্মান করে।
তিনি আরও বলেন, আমরা যেমন সুস্থ জীবনে এসেছি, তেমনটা আমাদের সম্প্রদায়ের অনেকেই চায়। কিন্তু সুযোগের অভাবে অনেকে তা পারেন না। তাই সরকারের সহযোগিতা চাই আমরা। সরকার সহায়তা করলে অনেকেই স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারবে।
রূপান্তর এনজিওর প্রতিষ্ঠাতা ও নির্বাহী পরিচালক স্বপন কুমার গুহ জাগো নিউজকে বলেন, তারা (বেদে সম্প্রদায়) অনেক পরিশ্রমী এবং কর্মঠ। প্রশিক্ষণের দশদিন তারা প্রশিক্ষণে আসতে এক মিনিট দেরি করেননি। তাদের ইচ্ছাশক্তির জোরেই তারা তাদের ভাগ্য বদলাতে সক্ষম হয়েছে।
এফএ/এমএস