দুই চিকিৎসকে খুঁড়িয়ে চলছে পাবনা বক্ষব্যাধি হাসপাতাল

লোকবল ও চিকিৎসা সরঞ্জামসহ নানা সংকটে মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে পাবনায় যক্ষ্মা চিকিৎসায় একমাত্র বিশেষায়িত বক্ষব্যাধি হাসপাতালের সেবা। হাসপাতালের দুই তৃতীয়াংশ পদই শূন্য। বন্ধ রোগ নির্ণয়ের বেশিরভাগ পরীক্ষা। হাসপাতালটিকে যুগোপযোগী ও আধুনিকায়নের দাবি জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
হাসপাতাল ও সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, যক্ষ্মাসহ বক্ষব্যাধি রোগীদের উন্নত চিকিৎসা দিতে ১৯৬২ সালে পাবনার শালগাড়ীয়ায় প্রতিষ্ঠা করা হয় ২০ শয্যা পাবনা বক্ষব্যাধি হাসপাতাল। গুরুত্বপূর্ণ এই হাসপাতালটিতে রয়েছেন একজন বিশেষজ্ঞসহ মাত্র দুজন চিকিৎসক। হাসপাতালের আবাসিক ও বহির্বিভাগ মিলিয়ে প্রতিদিন গড়ে সেবা নিতে আসেন শতাধিক রোগী। কিন্তু মেলে না মানসম্পন্ন সেবা। ল্যাব টেকনিশিয়ানের অভাবে বন্ধ রয়েছে এক্স-রে, আল্ট্রাসনোগ্রাম ও ইসিজি মেশিন।
কফ পরীক্ষা ছাড়া প্যাথলজির আর কোনো পরীক্ষা হয় না হাসপাতালটিতে। ২০ শয্যার আবাসিক হাসপাতালে নেই আয়ার কোনো পদ। সুইপার, নার্স, ওয়ার্ড বয়সহ সব পদেই তীব্র জনবল সংকট। বেহাল দশা হাসপাতাল ভবনেরও। ফলে রোগীর চাপ সামলাতে হিমশিম খাচ্ছেন চিকিৎসকরা। ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে সেবাপ্রার্থীদের।
চিকিৎসা নিতে আসা রোগী ও তার স্বজনরা বলছেন, শত শত রোগী এ হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে এলেও চিকিৎসক সংকটে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। কখনো কখনো ফিরেও যেতে হয় রোগীদের। এছাড়া এক্স-রেসহ বাকি যেসব টেস্টের দরকার হয়, তার কোনোটিই হয় না এখানে।
‘ইসিজি, ইকো ও এক্স-রে—সবই করতে বাইরে যেতে হয়। দৌড়াদৌড়ি করার মতো আমাদের লোক নেই। দরকার হলে কে বারবার বাইরে গিয়ে এসব পরীক্ষা করাবে? বাধ্য হয়ে আমাকেই যেতে হবে। আমার মতো রোগীদের ভোগান্তির শেষ নেই।’
কথা হয় সেবা নিতে আসা মো. রফিক নামের একজনের সঙ্গে। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘দেখেন এই বারান্দায় আমরা কতজন দাঁড়াই আছি। সবাই ডাক্তারের অপেক্ষায় ছিলাম। একজন মাত্র ডাক্তার। হাসলাতালে ভর্তি রোগীদের দেখতে রাউন্ডে গিয়েছিল। ফেরার পর আমাদের দেখতে শুরু করেছে। অথচ আরও দু-চারজন ডাক্তার থাকলে এই সমস্যা হতো না। উনার (ডাক্তার) ওপরও চাপ পড়তো না। সরকারের এখানে ডাক্তার বাড়ানো উচিত।’
- আরও পড়ুন:
শিশু হাসপাতালে চিকিৎসক নিয়োগ হয়েছে ‘অন্ধকারে’: ডা. খালিদুজ্জামান
সরকারি টাকায় কেনা ওষুধে ‘বেসরকারি মোড়ক’
জলাতঙ্কের ভ্যাকসিন নেই, দুশ্চিন্তায় রোগীরা
তিন বছর ধরে তালাবদ্ধ, নষ্ট হচ্ছে ৪০ কোটি টাকার ভবন
স্বামীকে নিয়ে হাসপাতালে আসা আরিফা জাহান বলেন, ‘ইসিজি, ইকো ও এক্স-রে—সবই করতে বাইরে যেতে হয়। দৌড়াদৌড়ি করার মতো আমাদের লোক নেই। দরকার হলে কে বারবার বাইরে গিয়ে এসব পরীক্ষা করাবে? বাধ্য হয়ে আমাকেই যেতে হবে। আমার মতো রোগীদের ভোগান্তির শেষ নেই।’
কাশি পরীক্ষা করিয়েছেন রশিদ মালিথা। এখন তার দরকার এক্স-রে ও রক্ত পরীক্ষা করানোর। হাসপাতালের গেট দিয়ে বের হবার সময় কথা হয় তার সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘টেস্ট লাগবে কয়েকটা। এখানে শুধু হলো কাশি পরীক্ষা। অন্যগুলোর জন্য বাইরে যাচ্ছি। এখন একগাদা টাকা গোনা লাগবে। সরকারি হাসপাতালে মাত্র একটা টেস্ট হয়। এটা কোনো কথা?’
‘টেস্ট লাগবে কয়েকটা। এখানে শুধু হলো কাশি পরীক্ষা। অন্যগুলোর জন্য বাইরে যাচ্ছি। এখন একগাদা টাকা গোনা লাগবে। সরকারি হাসপাতালে মাত্র একটা টেস্ট হয়। এটা কোনো কথা?’
হাসপাতালে ভর্তি থাকা আশিক বলেন, ‘কয়েকদিন হলো ভর্তি আছি। আজ কেবল ডাক্তার পেলাম। এসে দেখে গেলেন। এর আগে এখানকার নার্সরা এসে ওষুধ দিয়ে যেতো। সেগুলোই খাচ্ছিলাম।’
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, একজন জুনিয়র কনসালটেন্ট, একজন মেডিকেল অফিসার ও দুজন নার্স দিয়ে চলছে চিকিৎসাসেবা। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে রোগীর চাপ বাড়লেও বাড়েনি চিকিৎসক বা অন্যান্য জনবল। পদও রয়েছে সেই আমলেরই। হাসপাতাল কম্পাউন্ডে ব্যাপক জায়গা থাকলেও সেই পুরোনো জরাজীর্ণ ভবন ছাড়া আর নির্মাণ হয়নি অবকাঠামো।
এ বিষয়ে পাবনা বক্ষব্যাধি হাসপাতালের জুনিয়র কনসালটেন্ট ডা. মোখলেসুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, ‘একটা বক্ষব্যাধি হাসপাতাল একজন জুনিয়র কনসালটেন্ট ও মেডিকেল অফিসার দিয়ে চালানো সম্ভব না। এটা আমার ওপর অতিরিক্ত চাপ পড়ে যায়।’
তিনি বলেন, ‘পরীক্ষা সংক্রান্ত সরঞ্জামসহ অন্যান্য প্রয়োজন জানিয়ে ঊর্ধ্বতন মহলে আমরা চিঠি দিয়েছি। এসব সংকট কাটিয়ে উঠতে পারলে সর্বোচ্চ সেবা মিলবে।’
এসআর/জেআইএম