ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন
নকল সিল-সই দিয়ে গ্রাহকের অর্ধ কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ

রাজবাড়ীতে ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির (ওজোপাডিকো) শতাধিক গ্রাহকের প্রায় অর্ধ কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে মিটার রিডারম্যান মো. মুক্তার বিশ্বাসসহ কিছু অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে।
এদিকে ঘটনা জানাজানি হওয়ার পর থেকে গা ঢাকা দিয়েছেন অভিযুক্ত রিডারম্যান। দায় এড়াতে তড়িঘড়ি করে মিটার রিডারম্যানকে অব্যাহতি দেওয়ার পাশাপাশি তার বিরুদ্ধে যথাযথ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণে থানায় অভিযোগ করা হয়েছে।
অন্যদিকে প্রতারণার বিচার ও বিদ্যুৎ বিল মওকুফ চেয়ে জেলা প্রশাসক বরাবর আবেদন করেছেন ভুক্তভোগী প্রায় অর্ধশত গ্রাহক।
ওজোপাডিকোর অস্থায়ীভাবে নিয়োগপ্রাপ্ত মিটার রিডারম্যান মো. মুক্তার বিশ্বাস প্রায় ১৫ বছর ধরে রাজবাড়ী সদর উপজেলার আলীপুর ও শহীদওহাবপুর ইউনিয়নে বিল তৈরি ও বিতরণের দায়িত্ব পালন করে আসছেন। এ সময় গ্রাহকদের সরলতার সুযোগ নিয়ে অসাধু কিছু কর্মকর্তাদের যোগসাজশে অনৈতিক সুবিধা নিয়ে নতুন সংযোগ দিতেন। ২৩ থেকে ২৫ সালের মে মাস পর্যন্ত বিকাশ ও ব্যাংকের মাধ্যমে বিল পরিশোধের কথা বলে টাকা নিয়ে প্রতারণার মাধ্যমে অধিকাংশ গ্রাহককে স্ট্যাম্প লাগানো নকল সিল-স্বাক্ষর করা ভুয়া বিল প্রদান করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে তিনি।
অভিযুক্ত মো. মুক্তার বিশ্বাস রাজবাড়ী সদরের মিজানপুরের চরনারায়ণপুর গ্রামের সেলিম রেজা ওরফে সেলিম মাস্টারের ছেলে। তিনি অস্থায়ী ভাবে রাজবাড়ী ওজোপাডিকোতে চাকরি করতেন।
ভুক্তভোগী জহিরুল ইসলাম বলেন, ২০২৩ সাল থেকে এখন পর্যন্ত আমার কোনো বকেয়া বিল নাই। কিন্তু মে মাসে আমার ২৩ সালের দুটি ও ২৪ সালের সাতটাসহ তিন মিটারের ২৭টি বিলের দুই লাখ ১২ হাজার টাকা বকেয়া দেখানো হয়েছে। এ বিলগুলো পরিশোধের বিকাশ ও ব্যাংকের সিল মারা কপি আছে। কিন্তু অফিস বলতেছে এগুলো নকল। আমি বিলের এ টাকা মিটার রিডার মুক্তারের কাছে দিয়েছিলাম।
বাবুল শেখ নামে আরেক ভুক্তভোগী বলেন, আমি ভ্যান চালিয়ে সংসার চালাই। হঠাৎ মে মাসের বিলের কাগজে দেখি আমার ৭৫ হাজার ৫৬৩ টাকা বিল বাকি। এরপর অফিসে গেলে তারা বলে আমি অনেক বিল দেই নাই। আমি জানি দুই মাস বিল না দিলে লাইন কেটে দেয় কিন্তু এতোদিন আমার লাইন কাটা হয় নাই। এখন এতো টাকার বিল আমি কিভাবে দিব। এ টাকার একটা বিল বিকাশে, কিছু ব্যাংকে ও মুক্তারের কাছে দিয়েছি। এ বিষয়ে প্রকৌশলীর কাছে কয়েকবার অভিযোগ নিয়ে গেলেও তিনি জমা নেন নাই।
কোরবান গাজী বলেন, প্রতিমাসে আমি বিল দিয়েছি মুক্তারের মাধ্যমে। পরে মুক্তার ব্যাংকের সিলসহ স্ট্যাম্প লাগানো কাগজ দিয়েছে। স্ট্যাম্প ও সিল দেখে ভাবছি বিল দিয়েছে। এখন আমার ১৫ মাসের এক লাখ ৩৩ হাজার টাকা বিল বাকি দেখাচ্ছে।
সিরাজুল ইসলাম মুন্সি বলেন, প্রায় ১৫ বছর মিটার রিডারম্যান মুক্তার আমাদের এলাকায় বিলের কাগজ প্রদানের কাজ করে আসছে। আমরা জানতাম সে সরকারি লোক। ২০২৩ সালে মুক্তার বলে আপনারা তো বিকাশ বা ব্যাংকে বিল দেন আমি সেটাও করি। তার কথায় বিশ্বাস করে ওই সময় থেকে আমরা তার কাছে প্রতি মাসের বিলের কাগজসহ টাকা দিতাম। পরে সে আমাদের ব্যাংক ও বিকাশের সিল-স্বাক্ষর মারা কাগজ ফেরত দিতেন। এখন শুনি তিনি সেসব বিল দেননি।
রাজবাড়ীর ওজোপাডিকোর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মামুন-অর-রশিদ বলেন, কয়েকজন গ্রাহকের অভিযোগের বিষয়টি তদন্ত করে অভিযোগের কিছুটা সত্যতা পেয়েছি। মিটার রিডারম্যানকে অব্যাহতি দিয়ে তার বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ করা হয়েছে।
তিনি বলেন, দুই বছর কেন অনেক জায়গায় ১০ বছর আগের বিদ্যুৎ বিল বকেয়া রয়েছে। তাদের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়। শতভাগ কাভার করা সম্ভব হয় না। কতজন গ্রাহকের সঙ্গে এরকম হয়েছে তার সঠিক তথ্য এখন আমার কাছে নাই।
রাজবাড়ী জেলা প্রশাসক সুলতানা আক্তার বলেন, অভিযোগ পেয়ে ভুক্তভোগী গ্রাহকদের কথা শুনেছি। এর দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হচ্ছে রাজবাড়ী ওজোপাডিকোর নির্বাহী প্রকৌশলী। আমি বিষয় নিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করবো। আশা করছি সবার সহযোগিতায় এ সমস্যা সমাধান করতে পারবো।
রুবেলুর রহমান/আরএইচ/জেআইএম