বগুড়ায় দুই সিভিল সার্জনের ‘কাগুজে যুদ্ধ’, বিপাকে স্বাস্থ্যসেবা
বগুড়ার স্বাস্থ্য বিভাগে এক অস্বাভাবিক প্রশাসনিক জটিলতা তৈরি হয়েছে। সিভিল সার্জন কার্যালয়ে বর্তমানে ডা. খুরশীদ আলম দায়িত্ব পালন করছেন, অথচ তার কক্ষের বাইরে এখনো ঝুলছে সদ্য বদলি হওয়া ডা. এ কে এম মোফাখখারুল ইসলামের নামফলক। একই পদে দুইজন কর্মকর্তার এমন পদায়ন নিয়ে শুরু হয়েছে এক ধরনের ‘কাগুজে যুদ্ধ’, যার প্রত্যক্ষ প্রভাব পড়ছে জেলার স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থাপনার ওপর।
স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের গত ১৪ সেপ্টেম্বরের এক প্রজ্ঞাপনে বগুড়ার সিভিল সার্জন ডা. মোফাখখারুল ইসলামকে মানিকগঞ্জে এবং মানিকগঞ্জের সিভিল সার্জন ডা. খুরশীদ আলমকে বগুড়ায় বদলি করা হয়। উভয়কেই ১৭ সেপ্টেম্বরের মধ্যে নিজ নিজ কর্মস্থলে যোগদানের নির্দেশ দেওয়া হয়।
এদিকে নির্ধারিত সময়েই বগুড়ায় যোগদান করতে এসে ডা. খুরশীদ আলম জানতে পারেন, পূর্ববর্তী সিভিল সার্জন ডা. মোফাখখারুল ইসলাম ছুটিতে রয়েছেন। ফলে নতুন সিভিল সার্জনের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে দায়িত্ব হস্তান্তরের প্রক্রিয়াটি আটকে যায় তার।
এই পরিস্থিতিতে সিভিল সার্জন অফিসে একধরনের প্রশাসনিক অচলাবস্থা বিরাজ করছে। সরকারি নথিপত্রে নতুন সিভিল সার্জনের নাম থাকলেও এখনো পুরোনো কর্মকর্তার নামেই চলছে বিভিন্ন দাপ্তরিক কার্যক্রম। এতে করে স্বাস্থ্যসেবা সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীরা যেমন বিভ্রান্ত হচ্ছেন, তেমনি ব্যাহত হচ্ছে জেলা স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থাপনা।
আগামী ১২ অক্টোবর দেশব্যাপী টাইফয়েড টিকাদান ক্যাম্পেইন আয়োজনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এমন গুরুত্বপূর্ণ সময়ে এই প্রশাসনিক জটিলতা চলমান থাকায় টিকাদান কর্মসূচি ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
কাহালু দেওগ্রাম থেকে সেবা নিতে আসা শফিকুল ইসলাম জানান, তিনি ওমরাহ হজে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। ডান হাতের একটি আঙুল না থাকার কারণে ফিঙ্গারপ্রিন্ট নিয়ে সমস্যা হওয়ায় তিনি সিভিল সার্জনের কার্যালয়ে এসেছেন।
তিনি বলেন, এখানে আসার পর জানতে পারলাম সিভিল সার্জন ছুটিতে আছেন। বাধ্য হয়ে আমাকে ফিরে যেতে হচ্ছে।
বগুড়ায় সদ্য পদায়ন হওয়া সিভিল সার্জন ডা. খুরশীদ আলম জানান, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী তাকে যোগদান করতে হয়। তিনি ১৬ সেপ্টেম্বর মানিকগঞ্জ থেকে রিলিজ নিয়ে ১৭ সেপ্টেম্বর বগুড়ায় সিভিল সার্জন হিসেবে যোগদান করতে এলেও পূর্ববর্তী সিভিল সার্জন ছুটিতে থাকায় তা সম্ভব হয়নি।
তিনি বলেন, আগের সিভিল সার্জনের ১৮ সেপ্টেম্বর রিলিজ নেওয়ার কথা ছিল। আমি জানতে পারি তিনি ছুটিতে আছেন। পরে বিভাগীয় পরিচালক ডা. হাবিবুর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি তার বরাবর একটি যোগদানপত্র দাখিল করতে বলেন। সেই যোগদানের পরিপ্রেক্ষিতে তিনি আমাকে যোগদান করান। ১৮ সেপ্টেম্বর থেকে আমি নিয়মিত বগুড়ার সিভিল সার্জন হিসেবে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছি।
পুরোনো সিভিল সার্জন এখনো অফিসের বলয়ে আছেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ বিষয়ে আমার কিছু জানা নেই। ১৮ তারিখ থেকে যোগদানের পর আমি তাকে অফিসে পাইনি। তার সঙ্গে আমার কোনো যোগাযোগও হয়নি। তবে জানা গেছে, তিনি এখনো মানিকগঞ্জে তার পদায়িত জেলায় যোগদান করেননি।
অফিসের নামফলক পরিবর্তনের বিষয়ে তিনি বলেন, আগামী দু-এক দিনের মধ্যে এটি সংশোধন করা হবে।
আরও পড়ুন:
মৃত মেম্বারের সই জালিয়াতি করে প্রকল্পের টাকা আত্মসাৎ
জোড়া হত্যা মামলার আসামি আদালত থেকে উধাও, ৬ পুলিশ প্রত্যাহার
টাইফয়েড টিকাদান কর্মসূচির ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা প্রসঙ্গে ডা. খুরশীদ আলম আশ্বস্ত করে বলেন, টাইফয়েড নিয়ে আমাদের প্রচারণা, মিটিং, প্রশিক্ষণ চলমান রয়েছে। আশা রাখি, সামনে বাকি কয়েক দিনের মধ্যে খুব দ্রুত আমরা আমাদের মাঠ পর্যায়ে কাজ সম্পূর্ণ করতে পারব।
অন্যদিকে, পূর্ববর্তী সিভিল সার্জন ডা. এ কে এম মোফাখখারুল ইসলাম জানান, বগুড়ায় তার যোগদান মাত্র ছয় মাস। তিনি বগুড়াতেই থাকতে চেয়েছেন, যার কারণে মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেছেন।
তিনি বলেন, এখন যদি তারা আমার আবেদন গ্রহণ না করে, তাহলে আমি মানিকগঞ্জে যোগদান করব।
দাপ্তরিক কাজ বুঝিয়ে দেওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, যেহেতু আমি বগুড়াতে থাকার জন্য মন্ত্রণালয়ে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি, সে জন্য আমি এখনো তাকে দাপ্তরিক কাজ বুঝিয়ে দেইনি। যদি আমার আবেদন বাতিল হয়ে যায়, তাহলে আমি তাকে সবকিছু বুঝিয়ে দিয়ে মানিকগঞ্জ যোগদান করব।
বগুড়ার জেলা প্রশাসক হোসেনা আফরোজা বলেন, প্রজ্ঞাপন দেখার পর ডা. এ কে এম মোফাখখারুল ইসলামের সঙ্গে মোবাইলফোনে যোগাযোগ করলে তিনি দ্রুত চলে যাওয়ার কথা জানিয়েছিলেন। মানিকগঞ্জ থেকে ডা. খুরশীদ আলম যোগদানের পরই আমার সাক্ষাৎ হয়েছে।
দাপ্তরিক দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়ার বিষয়টি জানা ছিল না জানিয়ে জেলা প্রশাসক বলেন, বিষয়টি আমি মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে কথা বলবো। আশা করি দ্রুত সমাধান হবে।
দ্রুত এই প্রশাসনিক সংকটের সমাধান না হলে বগুড়ার জনগণের স্বাস্থ্যসেবা ঝুঁকির মুখে পড়বে বলে আশঙ্কা করছেন জেলার স্বাস্থ্যসেবা সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও নাগরিকেরা।
এলবি/এনএইচআর/জেআইএম