সুন্দরবনের দুবলার চরে শুরু হচ্ছে ঐতিহ্যবাহী রাস উৎসব

উপজেলা প্রতিনিধি উপজেলা প্রতিনিধি মোংলা (বাগেরহাট)
প্রকাশিত: ০৭:৫৭ এএম, ০৩ নভেম্বর ২০২৫
ছবি- সংগৃহীত

সুন্দরবনের দুবলার চরে শুরু হচ্ছে তিন দিনব্যাপী ঐতিহ্যবাহী রাস উৎসব। সোমবার ভোর থেকে সুন্দরবন পূর্ব বনবিভাগের চাঁদপাই ও ঢাংমারী স্টেশন থেকে পাস নিয়ে হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা যেতে শুরু করেছেন দুবলার চরে।

সোমবার (৩ নভেম্বর) রাতে দুবলার চরের আলোরকোলে স্থাপিত অস্থায়ী মন্দিরে রাস পূজার আনুষ্ঠানিকতা শুরু হবে। আর বুধবার ভোরে সাগরে পূর্ণ স্নানের মধ্য দিয়ে শেষ হবে এ রাস উৎসব।

তবে এবারও সেখানে থাকছে না রাস উৎসবের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও মেলা। এবারও রাস উৎসবকে ঘিরে দুবলার চরে যেতে পারছেন না হিন্দু বাদে অন্য ধর্মের লোকজন। বিশেষ করে করোনা মহামারির পর থেকে দুবলার চরে যাওয়া বন্ধ করে দেওয়া হয় হিন্দু ছাড়া অন্য ধর্মের লোকজনের। সেই সাথে বন্ধ করে দেওয়া হয় সেখানে রাসের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও মেলার আয়োজন। শুধু পূজা ও স্নান শেষে ফিরতে হবে পুণ্যার্থীদের।

সুন্দরবন পূর্ব বনবিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. রেজাউল করিম চৌধুরী জানান, নির্ধারিত রাজস্ব জমা দিয়ে ও বনবিভাগ থেকে পাস (অনুমতি) নিয়ে পূর্ব নির্ধারিত রুট দিয়ে পুণ্যার্থীরা রাস উৎসবে যেতে পারবেন এবং একই রুট দিয়ে তাদের ফিরতে হবে। সুন্দররবনের দুবলার চরের রাস উৎসব ঘিরে এবারও ব্যাপক কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে। শুধু সনাতন ধর্মাবলম্বী পূণ্যার্থী ছাড়া অন্য কোনো ট্যুরিস্টও যাওয়ার অনুমতি নেই। বনের প্রাকৃতিক পরিবেশ রক্ষা, হরিণ শিকার ও প্লাস্টিক বর্জ্য দূষণরোধে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।

jagonews24

জানা যায়, ১৮শ শতকের শেষভাগে বা ১৯ শতকের শুরুর দিকে সুন্দরবনের দুবলার চরে রাস পূজা শুরু হয়। হরভজন দাস নামে এক হিন্দু সন্ন্যাসী এই রাস পূজার গোড়াপত্তন করেন। তিনি তার ভক্তদের নিয়ে রাস পূর্ণিমার তিথিতে দুবলার চরে পূজা অর্চনা ও সাগরের লোণা জলে পুণ্যস্নান করতেন। সেই ধর্মীয় অনুষ্ঠান থেকেই ধীরে ধীরে ‘দুবলার চরের রাস মেলা’র প্রচলন ঘটে।
এরপর থেকে দুবলা ফিশারম্যান গ্রুপের আয়োজনে দুবলার চরের আলোরকোলে রাস পূর্ণিমায় সনাতনীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব হিসেবে উদযাপিত হয়ে আসছে।

রাস উৎসব উদযাপন কমিটির সভাপতি ও দুবলা ফিশারমেন গ্রুপের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. কামাল উদ্দিন আহমেদ জানান, ৩ নভেম্বর থেকে রাস উৎসবের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হবে। বনবিভাগের অনুমতি নিয়ে মূল পূজাস্থল আলোরকোলে শুরু হবে রাধা-কৃষ্ণের অস্থায়ী মন্দিরে নানা আনুষ্ঠানিকতা। এই মন্দিরে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে হিন্দু ধর্মের ভক্তরা এসে তাদের মনোবাসনা পূরণের আশায় পূজাঅর্চনা করবেন। ৫ নভেম্বর প্রত্যুষে সাগরের প্রথম জোয়ারে পুণ্যস্নান শেষে যে যার গন্তব্যে ফিরে যাবেন পুণ্যার্থীরা। উৎসবকে কেন্দ্র করে যাতে কোনো ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা না ঘটে সে ব্যাপারে সতর্ক রয়েছে কমিটি।

বনবিভাগের তথ্যমতে, প্রতি পুণ্যর্থীকে তিন দিনের জন্য ৭৫ টাকা, নিবন্ধন যুক্ত প্রতিটি ট্রলারের (তিনদিন) জন্য ৩০০ টাকা, নিবন্ধনবিহীন প্রতিটি ট্রলারের (তিনদিন) জন্য ১ হাজার টাকা এবং প্রতিটি ট্রলারের অবস্থান ফি (প্রতিদিন) ৩০০ টাকা রাজস্ব দিতে হবে।

আবু হোসাইন সুমন/এমআরএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।