গাজীপুরে ১০ মাসে ৬৬১ অগ্নিকাণ্ড
গাজীপুরে প্রতিনিয়ত ঘটছে অগ্নিকাণ্ড। আর এসব অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতি হচ্ছে কোটি কোটি টাকার সম্পদ। ১০ মাসে জেলায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে সাড়ে ছয়ন শতাধিক। অগ্নিকাণ্ডের কারণ হিসেবে প্রতিষ্ঠানগুলোকে অগ্নিকাণ্ড নিরোধের সঠিক পদক্ষেপ না নেওয়া ও আইন না মনাকে দায়ী করছে ফায়ার সার্ভিস কর্তৃপক্ষ।
ফায়ার সার্ভিসের এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, গাজীপুরে গত ১০ মাসে ৬৬১টি অগ্নিকাণ্ডে ৩৬ কোটি টাকার বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এসব অগ্নিকাণ্ডে পাঁচজন নিহত হয়েছেন।
জেলা ফায়ার সার্ভিসের তথ্য মতে, গাজীপুরে ১০ মাসে যে ৬৬১টি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে মার্চ মাসে। এ মাসে জেলায় ১০৩টি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে।
জানুয়ারি থেকে অক্টোবর মাস পর্যন্ত ১০ মাসে বৈদ্যুতিক গোলযোগ থেকে ২৭৯টি, গ্যাস সরবরাহ লাইনের লিকেজ থেকে ৫১টি, বিড়ি-সিগারেটের জ্বলন্ত টুকরা থেকে ৪৪টি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। এসব আগুনে প্রায় ৩৬ কোটি টাকার ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছে বলে ফায়ার সার্ভিস সূত্র জানিয়েছে।
অগ্নিকাণ্ড প্রতিরোধে জনসচেতনতাসহ নানা পদক্ষেপ নেওয়া কথা জানিয়েছেন ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারা।
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স সূত্রে জানা গেছে, শিল্প এলাকাসমৃদ্ধ ও ঘনবসতি হওয়ায় গাজীপুর সবসময় আগুন লাগার ঝুঁকিতে থাকে। বিশেষ করে টঙ্গী, কোনাবাড়ি, কাশিমপুর ও শ্রীপুর এলাকায় পোশাক কারখানার পরিত্যক্ত কাপড় (ঝুট) থেকে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে বেশি। এছাড়া বিভিন্ন পোশাক কারখানা, কেমিক্যালের গুদাম, সুতার গুদাম, ব্রয়লার বিস্ফোরণ, গ্যাস লিকেজ থেকে আগুন, গ্যাস সিলিন্ডার লিকেজ, শ্রমিক অসন্তোষের কারণে লাগানো আগুন, বাসা বাড়িতে আগুন লেগে থাকে।
সূত্র জানিয়েছে, গাজীপুরে জানুয়ারি মাসে ৬৫টি, ফেব্রুয়ারিতে ৯২টি, মার্চে ১০৩টি, এপ্রিলে ৭৩টি, মে মাসে ৫৮টি, জুনে ৪৪টি, জুলাইতে ৪৫টি, আগস্টে ৪৯টি, সেপ্টেম্বরে ৬২টি ও অক্টোবরে ৭০টি অগ্নিকাণ্ড হয়েছে। জানুয়ারি থেকে এপ্রিল মাস পর্যন্ত আগুন লাগার সংখ্যা বেশি থাকে। গাজীপুরে দশ মাসে আগুনে দগ্ধ হয়ে ৫ জন মারা গেছেন।
সূত্র মতে, গাজীপুরে বিপুলসংখ্যক কলকারখানা, আবাসিক ও বাণিজ্যিক ভবন এবং কয়েকটি কেপিআই প্রতিষ্ঠানও অগ্নি ঝুঁকিতে আছে।
গাজীপুর ফায়ার সার্ভিস সূত্র জানায়, গাজীপুরের কলকারখানাগুলোতে ফায়ার সেফটি প্লান করছে প্রতিষ্ঠানগুলো। যারা অগ্নি নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা না নেবে তাদের লাইসেন্স নবায়ন করা হচ্ছে না। রপ্তানিমুখী প্রতিষ্ঠানগুলো ফায়ার সার্ভিসের নীতিমালা মানলেও অনেক কলকারখানা তা মানছে না। যারা মানছেন না তাদের বিরুদ্ধে লাইসেন্স নবায়ন বন্ধসহ বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
এদিকে গাজীপুরের বিভিন্ন বস্তি ও ঘন বসতিপূর্ণ জায়গাগুলোতে অগ্নিঝুঁকি থাকায় সে সব এলাকা বিশেষ নজরদারি মধ্যে রাখা হয় এবং ওই এলাকাগুলোর সাধারণ মানুষের মাঝে সচেতনতামূলক কার্যক্রম চালানো হয় বলে জানিয়েছে ফায়ার সার্ভিস।
গাজীপুর ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের উপ-সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ মামুন বলেন, অগ্নিকাণ্ড ও ভূমিকম্পসহ প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে রক্ষা পেতে জেলাব্যাপী ব্যাপক সচেতনতামূলক কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। এরই মধ্যে ১২৪ জন স্বেচ্ছাসেবীকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। এসব স্বেচ্ছাসেবীকে পরিচয়পত্র ও আত্মরক্ষা সামগ্রী দেওয়া হয়েছে। প্রতি শনিবার গাজীপুরের বিভিন্ন উন্মুক্ত স্থানে সচেতনতামূলক ভিডিও প্রদর্শনী করা হচ্ছে। যাতে আগুন ও ভ‚মিকম্প থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। কেমিক্যাল গুদামে আগুন নেভানোর জন্য ঢাকার বিশেষায়িত ইউনিট রয়েছে। তারা সব সময় প্রস্তুত থাকে।
তিনি আরও বলেন, অগ্নিকাণ্ডের ব্যাপারে এখন আগের চাইতে অনেক বেশি সতর্ক হচ্ছেন কলকারখানা মালিক ও সাধারণ মানুষ। অনেক বড় শিল্প গ্রুপের মালিকরা অগ্নি নিরাপত্তার জন্য আলাদা ইউনিটও গঠন করেছেন। অনেককে প্রশিক্ষণ দিয়ে রাখছেন সম্ভাব্য বিপদ এড়ানোর জন্য।
মো. আমিনুল ইসলাম/এমএন