নীতিমালা উপেক্ষা করে ১৪ বছর একই কর্মস্থলে সরকারি কর্মকর্তা

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি নীলফামারী
প্রকাশিত: ০৯:১৯ পিএম, ১৩ ডিসেম্বর ২০২৫
নুরুন্নাহার শাহাজাদী

নিরবচ্ছিন্ন, জনবান্ধব ও হয়রানিমুক্ত সেবা নিশ্চিত করতে সরকারি কর্মকর্তারা তিন বছরের বেশি একই কর্মস্থলে থাকতে পারবেন না, এমন নীতিমালা থাকলেও এর ব্যত্যয় ঘটেছে নীলফামারীর সৈয়দপুর উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা নুরুন্নাহার শাহাজাদীর ক্ষেত্রে। দীর্ঘ ১৪ বছর ধরে তিনি একই কর্মস্থলে দায়িত্বপালন করছেন। অভিযোগ রয়েছে, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে ‘ম্যানেজ’ করে তিনি বহাল তবিয়তে রয়েছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নুরুন্নাহার শাহাজাদী সৈয়দপুর উপজেলায় মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তা হিসেবে যোগদান করেন ২০১২ সালের ১ ফেব্রুয়ারি। বাংলাদেশ জাতীয় তথ্য বাতায়ন অনলাইন সাইটে একই দিন ও তারিখ উল্লেখ রয়েছে। সেই থেকে এক যুগের বেশি সময় ধরে একই কর্মস্থলে আছেন তিনি। এছাড়া তিনি একই জেলার বাসিন্দা। বিষয়টি নিয়ে স্থানীয়দের মাঝে আলোচনার সৃষ্টি হয়েছে।

সূত্র মতে, সরকারি চাকরিবিধি ও সর্বশেষ মন্ত্রিপরিষদের পরিপত্র অনুযায়ী একই কর্মস্থলে তিন বছরের অধিক কর্মরত থাকার কোনো নিয়ম নেই। কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ অফিসে কীভাবে ১৪ বছর ধরে কর্মরত নুরুন নাহার শাহাজাদী এমন প্রশ্ন এখন অনেকের।

এদিকে ওই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে সেবাগ্রহিতাদের বিরুদ্ধে অসদাচরণ ও যোগসাজশ করে ৩৪ জন নারীর নামে অন্য একজনকে ঋণ দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। যে ঋণের বিষয়ে ভুক্তভোগীরা অবহিত ছিলেন না।

ভুক্তভোগীরা জানান, উপজেলা কাশিরাম বেলপুকুর ইউনিয়নের সাতপাই কাগজীপাড়া গ্রামে অবস্থিত নীলপল্লী মহিলা উন্নয়ন সমিতির সভাপতি কামরুন্নাহার ইরা তিনি ২০২৩ সালে মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা নুরুন্নাহার শাহাজাদি সঙ্গে যোগসাজশ করে ৩৪ জন সদস্যের নামে মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর থেকে ৫ লাখ টাকা ঋণ নেন। এ সদস্যরা কিছু জানতেন না। পরবর্তীতে তাদের অফিস থেকে ঋণ খেলাপির নোটিশ দেওয়া হলে এ বিষয়ে জানতে পারেন।

উপজেলার নিজামের চৌপথী এলাকার মিনা আক্তার বলেন, নীলপল্লী সমিতির মাধ্যমে তার নামে মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর থেকে ঋণ নেওয়া হয়েছে। অথচ তিনি কোনো ঋণ নেননি, এমনকি আবেদনও করেননি।

মিনার দাবি, তিনি সমতির সদস্য নন। ঈদুল ফিতরের আগে ওই সমিতির সভাপতি ইরা সেমাই, চিনি দেওয়ার কথা বলে জাতীয় পরিচয় পত্রের ফটোকপি নিয়েছিলেন। সেইটা নিয়ে তিনি ঋণ তুলেছেন। নিমার মতো একই ঘটনা ঘটেছে বেশ কয়েকজনের সঙ্গে।

এছাড়াও শাহাজাদীর বিরুদ্ধে সেবাগ্রহীদের সঙ্গে অসদাচরণ ও সময়মতো অফিস না করারও অভিযোগ রয়েছে।

সৈয়দপুর নাগরিক পরিষদের আহ্বায়ক দেলোয়ার হোসেন জাভিস্কো বলেন, একই কর্মস্থলে তিন বছরের বেশি থাকার নিয়ম নেই। সরকার বদলির জন্য পরিপত্র জারি করলেও এই কর্মকর্তার ক্ষেত্রে কেন মানা হচ্ছে না তা খতিয়ে দেখা দরকার। একজন কর্মকর্তা দীর্ঘদিন ধরে থাকলে দুর্নীতি, ক্ষমতার অপব্যবহার ও স্বজনপ্রীতির সুযোগ বাড়ে। নেপথ্যে তার কে আছে তা জেনে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান তিনি।

অভিযোগের বিষয়ে কর্মকর্তা নুরুন্নাহার শাহাজাদী বলেন, নিজের ইচ্ছায় তিনি একই কর্মস্থলে চাকরি করছেন না। কর্তৃপক্ষ বদলির আদেশ দেয়নি, তাই তিনি রয়েছেন। তার ভাষ্য, তিনি সৎ ও নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করছেন, এ কারণে হয়ত কর্তৃপক্ষ তাকে বদলি করছে না।

এই বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফারাহ ফাতিমা তাকমিলার সঙ্গে কথা হলে তিনি জাগো নিউজকে জানান, এ উপজেলায় তিনি সদ্য যোগদান করেছেন। সব স্টাফদের সঙ্গে পরিচয়ও হয়নি। তবে একজন কর্মকর্তা কেন এতদিন থেকে একই কর্মস্থলে আছেন, বিষয়টি খোঁজ নিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে ব্যবস্থা নেবেন।

আমিরুল হক/এমএন/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।