মিয়ানমার সীমান্তে গোলাগুলি-বিস্ফোরণ, টেকনাফে আতঙ্ক কাটেনি
মিয়ানমারে জান্তা সরকার ও আরাকান আর্মির লড়াইয়ের জেরে টেকনাফ সীমান্তে এখনো আতঙ্ক বিরাজ করছে। শনিবার (১৩ ডিসেম্বর) টানা গোলাগুলি ও মর্টারশেল বিস্ফোরণের সময় ওপার থেকে ছোড়া গুলি এসে পড়ে এপারের বসতঘরে, যার ফলে স্থানীয়রা নির্ঘুম রাত কাটিয়েছেন। একদিন পেরিয়ে গেলেও ভীতি কমেনি, বরং রাতে গুলির শব্দ শোনা যাওয়ায় সীমান্তবর্তী এলাকার মানুষ চরম উদ্বেগে রয়েছেন।
জানা যায়, মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের অধিকাংশ শহর ও সীমান্ত এলাকা আরাকান আর্মির দখলে যাওয়ার পর প্রায় দুই বছর ধরে সেগুলো তাদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। এ অবস্থায় রোহিঙ্গাদের কয়েকটি বিদ্রোহী গোষ্ঠীও রাখাইনে সক্রিয় রয়েছে। ফলে প্রায়ই কক্সবাজারের টেকনাফ সীমান্তে গোলাগুলি ও বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়, পাশাপাশি সংঘর্ষে ছোড়া গুলি এসে এপারের এলাকায় পড়ছে। এতে আতঙ্কে রয়েছে স্থানীয়রা।
স্থানীয় বাসিন্দা ও জেলে হাসান আলী বলেন, শনিবার টানা গোলাগুলি ও বিস্ফোরণের বিকট শব্দে এলাকার বাড়িঘর কেঁপে ওঠে। আতঙ্কে অনেক পরিবার সন্তানদের নিয়ে ঘরের ভেতরে নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নেয়। ভয়ে অনেকে সারা রাত ঘুমাতে পারেননি। নিরাপত্তাহীনতার কারণে মাছ শিকারে যাওয়া সম্ভব হয়নি।
হোয়াইক্যং বালুখালির বাসিন্দা সরওয়ার আলম বলেন, শনিবার যেভাবে গোলাগুলি হলো ও আমার ঘরে গুলি এসে পড়লো তাতে আমরা সবাই খুব ভয় পেয়েছি। এখনও মনে হচ্ছে যেকোনো সময় আবার গুলি এসে পড়তে পারে। মধ্যরাতে আবারও কয়েকটি গুলির শব্দ শোনা গেছে।
হোয়াইক্যং ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য সিরাজুল মোস্তফা লালু বলেন, হোয়াইক্যংয়ের সীমান্তের নিকটে ওপারে মিয়ানমার সীমান্তে গতকাল বৃষ্টির মতো গোলাগুলি ও মর্টারশেল বিস্ফোরণের ঘটনায় সীমান্তবর্তী এলাকায় চরম আতঙ্ক সৃষ্টি হয়। একদিন পেরিয়ে গেলেও ভীতি কমেনি। রোববার মধ্যরাতে সীমান্ত থেকে কয়েক রাউন্ড গুলির শব্দ ভেসে আসায় স্থানীয়রা আবার সতর্ক হয়ে উঠেছেন। তবে বড় ধরনের কোনো সংঘর্ষ ঘটেনি।
তিনি আরও বলেন, নাফনদী সংলগ্ন এলাকায় ভয়ে স্থানীয়রা চিংড়ি ঘের, চাষের জমি ও নদীতে যেতে পারছেন না। শনিবার কয়েকটি বসতঘরে গুলি পড়ে টিনের চাল ছিদ্র হয়েছে ও তাজা গুলি পাওয়া গেছে। তবে বেশিরভাগ গুলি চিংড়ি ঘের ও চাষের জমিতে পড়েছিল।
টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. ইনামুল হাফিজ নাদিম বলেন, সীমান্তে গোলাগুলির ঘটনা সম্পর্কে আমরা অবহিত। অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাশাপাশি বিজিবির সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখা হচ্ছে। সীমান্তবর্তী মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, এ বিষয় নিয়ে কক্সবাজার জেলা আইনশৃঙ্খলা মিটিংয়ে গুরুত্বসহকারে আলোচনা হয়েছে ও আমরা পরিস্থিতি মনিটরিংয়ে রাখছি।
মিয়ানমার জান্তা সরকারের বিরুদ্ধে লড়াই করে রাখাইনের গুরুত্বপূর্ণ শহর, সেনা ও পুলিশ ক্যাম্প এবং বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তের প্রায় ২৭০ কিলোমিটার এলাকা ও চৌকি বিদ্রোহী সংগঠন আরাকান আর্মি দখলে নিলেও সেগুলো পুনর্দখলের চেষ্টা চালাচ্ছে জান্তা সরকার। এদিকে রোহিঙ্গাদের কয়েকটি সশস্ত্র গোষ্ঠীও রাখাইনে সক্রিয় রয়েছে। ফলে চলমান সংঘাতে বিস্ফোরণের শব্দ ও ছোড়া গুলি মাঝে মধ্যে এপারে এসে পড়ে। বিশেষ করে টেকনাফ সীমান্তসংলগ্ন সংঘর্ষে এপারের মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত ও আতঙ্কিত হচ্ছে।
জাহাঙ্গীর আলম/এমএন/জেআইএম