গোলাম আযম-নিজামীকে স্বাধীনতা যুদ্ধের ‘সূর্যসন্তান’ বলায় হট্টগোল

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি পাবনা
প্রকাশিত: ০৮:০৪ পিএম, ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫

পাবনা সরকারি এডওয়ার্ড কলেজে শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসের আলোচনা সভায় গোলাম আযম ও মতিউর রহমানকে ‌‘দেশপ্রেমিক’ ও স্বাধীনতা যুদ্ধের ‘বীর সূর্যসন্তান’ উল্লেখ করে কলেজ শাখা ছাত্রশিবিরের সেক্রেটারি হাসান আল মামুনের বক্তব্যকে ঘিরে হট্টগোল ও উত্তেজনার সৃষ্টি হয়েছে।

রোববার (১৪ ডিসেম্বর) দুপুরে কলেজের শহীদ আব্দুস সাত্তার মিলনায়তনে এ ঘটনা ঘটে।

শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসের শিবির সেক্রেটারির এ বক্তব্যকে ইতিহাস বিকৃতির প্রচেষ্টা আখ্যা দিয়ে প্রতিবাদ জানিয়েছেন ছাত্রদল নেতারা। নিন্দা জানিয়েছে কলেজ কর্তৃপক্ষও।

গোলাম আযম-নিজামীকে স্বাধীনতা যুদ্ধের ‘সূর্যসন্তান’ বলায় হট্টগোল

অনুষ্ঠানে উপস্থিত শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে কলেজ কর্তৃপক্ষ আলোচনা সভার আয়োজন করে। বাংলা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক মো. রুহুল আমিনের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি কলেজ উপাধ্যক্ষ মো. আব্দুল খালেকের উপস্থিতিতে অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে কলেজ শাখা ইসলামী ছাত্র শিবির সাধারণ সম্পাদক হাসান আল মামুনকে ডাকা হয়। বক্তব্যের শুরুতেই তিনি মহান স্বাধীনতার ঘোষক শহীদ জিয়াউর রহমানের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের পরই জামায়াত নেতা গোলাম আযম ও মতিউর রহমান নিজামীকে মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের ‘সূর্যসন্তান’ ও ‘দেশপ্রেমিক’ উল্লেখ করে শ্রদ্ধা জানান।

এসময় উপস্থিত ছাত্রদল নেতাকর্মী ও শিক্ষার্থীরা তাৎক্ষণিকভাবে প্রতিবাদ জানিয়ে এই দুই নেতাকে যুদ্ধাপরাধের দায়ে দণ্ডপ্রাপ্ত ‘চিহ্নিত স্বাধীনতাবিরোধী’ উল্লেখ করে হট্টগোল শুরু করেন। এসময় অনুষ্ঠানস্থলে তীব্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। অন্তত ১৫-২০ মিনিট হইচই হট্টগোলের পর শিক্ষকদের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি শান্ত হয়।

এ বিষয়ে সরকারি এডওয়ার্ড কজেল ছাত্রদলের সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহফুজুর রহমান শ্রাবণ বলেন, ‘গোলাম আযম স্বীকৃত রাজাকার ছিলেন—এটাই সবাই জানেন। এমনকী মতিউর রহমান নিজামী ছিলেন আলবদর বাহিনীর প্রধান। বুদ্ধিজীবী হত্যায় সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রাখা সংগঠন এই আলবদর। বুদ্ধিজীবী হত্যার মাস্টারমাইন্ড রাও ফরমান আলী পাকিস্তানে ফিরে যাওয়ার পর একটি বই লিখেছেন। ওই বইয়ে বুদ্ধিজীবী হত্যাকাজে সহযোগিতা করেছে এমন চারজনের নাম উল্লেখ করা হয়। এর মধ্যে অন্যতম একজন গোলাম আযম। যারা বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করলো বা হত্যায় সহযোগিতা করলো তাদের বুদ্ধিজীবী দিবসে দেশপ্রেমিক বা বীর সূর্যসন্তান বলে আখ্যা দেয়াকে আমরা ছাত্রদল ও সাধারণ শিক্ষার্থীরা ঘৃণাভরে প্রত্যাখান করেছি। একইসঙ্গে শিবিরকে এই অবস্থান থেকে সরে এসে এই বক্তব্যের জন্য প্রকাশ্যে ক্ষমা চাওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি।’

গোলাম আযম-নিজামীকে স্বাধীনতা যুদ্ধের ‘সূর্যসন্তান’ বলায় হট্টগোল

বক্তব্যের বিষয়ে জানতে কলেজ শাখা ইসলামী ছাত্রশিবিরের সেক্রেটারি হাসান আল মামুনের সঙ্গে ফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করলেও ফোন রিসিভ করেননি।

আলোচনা সভার সভাপতি কলেজের বাংলা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক রুহুল আমিন বলেন, ‘মামুন নামের শিবিরের ছেলেটির বক্তব্যের ওই অংশে এসেই ছাত্রদল ও অন্যান্যরা উচ্চস্বরে ওই বক্তব্যের প্রতিবাদ জানায়। এ নিয়ে পাল্টাপাল্টি স্লোগান দেয় দুই পক্ষ। ১৫-২০ মিনিটের হট্টগোল শেষে আবার অনুষ্ঠান স্বাভাবিকভাবেই শুরু হয়।’

এ বিষয়ে কলেজের উপাধ্যক্ষ অধ্যাপক মুহা. আব্দুল খালেক বলেন, ‘শিবিরের ওই ছেলেটির বক্তব্য আমরা তখনই প্রত্যাখ্যান করেছি। কলেজের প্রোগ্রামে তার এ ধরনের বক্তব্য দেওয়া উচিত হয়নি। ভবিষ্যতে এ ধরনের বক্তব্য দেওয়ার ক্ষেত্রে তাদের সতর্ক করেছি।’

আলমগীর হোসাইন নাবিল/এসআর/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।