মাদকের সরঞ্জাম জব্দ

‘নারীসঙ্গীর’ কক্ষে গুলিবিদ্ধ হন এনসিপি নেতা মোতালেব শিকদার

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি খুলনা
প্রকাশিত: ০৬:৪৬ পিএম, ২২ ডিসেম্বর ২০২৫
ওই কক্ষ থেকে মাদকের সরঞ্জাম উদ্ধার করেছে পুলিশ। ইনসেটে গুলিবিদ্ধ মোতালেব শিকদার ও পলাতক তরুণী

খুলনায় জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নেতা মোতালেব শিকদারকে গুলি করার ঘটনার অনুসন্ধান শুরু করেছে পুলিশ। প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, এক নারীর কক্ষে গুলিবিদ্ধ হন মোতালেব। ওই কক্ষ থেকে মাদকের সরঞ্জাম উদ্ধার করেছে পুলিশ। অভ্যন্তরীণ কোন্দলে তাকে গুলি করা হয় বলে ধারণা করা হচ্ছে।

সোমবার (২২ ডিসেম্বর) দুপুর ১২টার দিকে সোনাডাঙ্গা থানার সার্জিক্যাল (গাজী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল) সংলগ্ন আল আকসা মসজিদ সরণির ১০৯ নম্বর রোডের মুক্তা হাউজের নিচতলায় গুলিবিদ্ধ হন মোতালেব শিকদার। পরে স্থানীয়রা তাকে হাসপাতালে নিয়ে যান।

মোতালেব শিকদার এনসিপির শ্রমিক সংগঠন জাতীয় শ্রমিক শক্তির কেন্দ্রীয় সংগঠক ও খুলনা বিভাগীয় আহ্বায়ক। তিনি গত বছরের ৫ আগস্টের আগে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সম্পৃক্ত ছিলেন বলে জানা গেছে।

সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, মোতালেব শিকদারকে দু-তিনজন ধরে বেলা ১১টা ১০ মিনিটের দিকে হাঁটতে হাঁটতে আল আকসা গলি থেকে মেইন রোডের দিকে যাচ্ছেন। এসময় তিনি নিজে মাথার কাছে চেপে ধরেছিলেন। একই সময় একটি মোটরসাইকেলে একজন ও পায়ে হেঁটে আরেকজন গলির একটি সংযোগ সড়ক দিয়ে অন্যদিকে চলে যান।

‘নারীসঙ্গীর’ কক্ষে গুলিবিদ্ধ হন এনসিপি নেতা মোতালেব শিকদারশেখ হাসিনার চাচাতো ভাই শেখ সোহেলের (মাঝে) সঙ্গে মোতালেব শিকদার (ডানে)

পুলিশের একাধিক সূত্র জানায়, রাতে মোতালেব শিকদারের সহযোগীরা ইয়াবা সেবন, মদ্যপান এবং নারী সঙ্গ নিয়ে ছিলেন। নিজেদের মধ্যে মতবিরোধের জেরে সহযোগীদের কেউ একজন তাকে হত্যার উদ্দেশ্যে গুলি করেন। গুলিবিদ্ধ অবস্থায় তিনি রিকশাযোগে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য যান। ঘটনার পর থেকে ওই ফ্ল্যাট নেওয়া তরুণীর কোনো সন্ধান পাওয়া যাচ্ছে না।

আরও পড়ুন:
খুলনায় গুলিবিদ্ধ এনসিপি নেতা শঙ্কামুক্ত

অন্য একটি সূত্র জানায়, গুলিবিদ্ধ মোতালেব শিকদার আগে শ্রমিক লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। সরকার পরিবর্তনের পর তিনি এনসিপির শ্রমিক সংগঠন জাতীয় শ্রমিক শক্তির সঙ্গে যুক্ত হন। তিনি শেখ হাসিনার চাচাতো ভাই শেখ সোহেলের সঙ্গে সম্পৃক্ত থেকে আওয়ামী লীগের রাজনীতি করতেন।

ঘটনাস্থল মসজিদ সরণির মুক্তা হাউজের মালিকের স্ত্রী আশরাফুন্নাহার বলেন, ‘স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে ওই তরুণী নভেম্বর মাসে বাড়ির নিচতলার ফ্ল্যাটটি ভাড়া নেন। তিনি নিজেকে এনজিওকর্মী হিসেবে পরিচয় দিতেন এবং প্রায়ই বাড়ির বাইরে থাকতেন। তার কক্ষে একাধিক পুরুষের আসা-যাওয়া ছিল। পরে অন্যদের মাধ্যমে তার অসামাজিক কার্যকলাপের বিষয়টি জানতে পেরে এ মাসে বাড়ি ছাড়ার নোটিশ দেওয়া হয়। তবে ছাড়ার আগেই এ ঘটনা ঘটে।’

‘নারীসঙ্গীর’ কক্ষে গুলিবিদ্ধ হন এনসিপি নেতা মোতালেব শিকদারসিসিটিভির ফুটেজে দেখা যায়, কয়েকজন তাকে ধরে আল আকসা গলি থেকে মেইন রোডের দিকে নিয়ে যাচ্ছেন

খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের (কেএমপি) উপ-পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম বলেন, ‘শুরুতে ঘটনাস্থলে সাক্ষী পাওয়া যাচ্ছিল না। পরে মোতালেব শিকদারের প্রাইভেট গাড়ি পড়ে আছে দেখে আমরা অনুসন্ধান শুরু করি। সার্জিকাল সংলগ্ন লাজফার্মা থেকে একটি ভিডিও ফুটেজ সংগ্রহ করি। সেখানে দেখা যায়, রাত সাড়ে ১২টার দিকে ভিকটিমসহ আরও দুজন ওই এলাকায় আসেন এবং কোথাও অবস্থান করেছেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘মুক্তা হাইজের কক্ষ থেকে মাদক সেবনের বিভিন্ন উপকরণ উদ্ধার করা হয়েছে। প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, তারা এখানে অসামাজিক কার্যকলাপে জড়িত ছিলেন এবং নিজেদের মধ্যে কোন্দলের কারণেই গুলির ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় আরও অনেকে জড়িত। মোতালেবকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে বাকিদের নাম জানা যাবে।’

‘নারীসঙ্গীর’ কক্ষে গুলিবিদ্ধ হন এনসিপি নেতা মোতালেব শিকদারকক্ষ থেকে উদ্ধার মাদকের সরঞ্জাম

উপ-পুলিশ কমিশনার জানান, গুলিটি তার মাথার ভেতরে ঢোকেনি, চামড়া ভেদ করে বেরিয়ে গেছে। বর্তমানে গুলিবিদ্ধ এনসিপি নেতা শঙ্কামুক্ত। তার চিকিৎসা চলছে।

আরিফুর রহমান/এসআর/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।