৩ বোনসহ একাধিক নারীকে ধর্ষণকারী কাউয়ূম আটক
অসংখ্য নারীর সর্বনাশকারী রহস্যময় এক ভয়ঙ্কর (সিরিয়াল ধর্ষক) লম্পটকে আটক করেছে নরসিংদী গোয়েন্দা পুলিশ।
প্রথমে ফেসবুক ও পরে ফোনালাপের মাধ্যমে মেয়েদের সঙ্গে পরিচিত হয় সে। তারপর নানা ছলনায় দৈহিক সম্পর্ক স্থাপন করে এর ছবি ও ভিডিও সংরক্ষণ করে এই লম্পট। এরই ধারাবাহিকতায় সে সব ভিডিও প্রকাশ করার হুমকি দিয়ে বিভিন্ন মেয়েকে ব্লাকমেইল করে আসছিল। অবশেষে নরসিংদী জেলা গোয়েন্দা পুলিশের হাতে ধরা খেল ভয়ঙ্কর এই লম্পট।
গত রোববার সকালে নরসিংদীর ড্রিম হলিডে পার্কের সামনে থেকে তাকে আটক করেন গোয়েন্দা পুলিশের উপ-পরিদর্শক আ. গাফফার। এসময় এক মেয়ের অশ্লীল ভিডিও প্রকাশ করার ভয় দেখিয়ে তার সঙ্গে পার্কে দেখা করার জন্য এসেছিল সে। আটক লম্পটের নাম কাইয়ূম (২৬)। সে নারায়ণগঞ্জ জেলার রূপগঞ্জ থানার খাইলশা গ্রামের আব্দুল মজিদের ছেলে।
আটক হওয়ার পর তার ব্যবহৃত মোবাইল ও প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে বহু নারীর সঙ্গে অবৈধ সম্পর্কের প্রমাণ পেয়েছে পুলিশ। প্রেম-ভালোবাসার অভিনয় করে প্রতারণা করায় ও দৈহিক সম্পর্ক স্থাপন করায় তার বিরুদ্ধে মাধবদী থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন রানী (ছদ্মনাম) নামের নরসিংদীর এক মেয়ে।
মামলা ও গোয়েন্দা পুলিশের দেওয়া তথ্যমতে জানা গেছে, লম্পট কাইয়ূম ২০০৭ সাল থেকে মালয়েশিয়ায় চাকরি করতো। সেখানে থাকা অবস্থায় সে রানীর (মামলার বাদী) কলেজপড়ুয়া ছোট বোন সামসুন নাহারের (ছদ্মনাম) সঙ্গে ফোনে পরিচিত হয়। একপর্যায়ে তাদের মধ্যে প্রেম ভালোবাসার সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এর দুই বছর পর ২০০৯ সালে সে বাংলাদেশে আসে। আসার পর তাকে বিয়ের প্রলোভনে ঢাকা ও বিভিন্ন স্থানে নিয়ে দৈহিক সম্পর্ক স্থাপন করে।
লম্পট কাইয়ূম কৌশলে সেই সময়ের অন্তরঙ্গ মুহূর্তের ছবি ও ভিডিও মোবাইল ফোনে সংরক্ষণ করে। ছোট বোনের সঙ্গে সম্পর্ক চলাকালীন সে তার বড় বোন মামলার বাদী রানীর সঙ্গেও ফোনে কথা বলা শুরু করে। ফোনে কথাবার্তা চলার একপর্যায়ে কাইয়ূমের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হয় রানী। তাদের মধ্যেও প্রেমের সম্পর্ক তৈরি হয়। তারপর তারা একে অপরের ঘনিষ্ঠ হয়। সেই সময়ের অন্তরঙ্গ ছবি ও ভিডিও কৌশলে তুলে নেয় লম্পট কাইয়ূম। এবং তার সঙ্গে সম্পর্ক না রাখলে তার ও তার ছোট বোনের ছবি ফেসবুকে প্রকাশ করার হুমকি দেয়। এর কিছুদিন পর সে মালয়েশিয়া চলে যায়। সেখানে থাকাকালীন সে রানীকে ফোনে নানাভাবে বিরক্ত করে মানসিক যন্ত্রণা দিতো বলে মামলায় উল্লেখ করা হয়।
গত ৫ জুলাই সে পুনরায় বাংলাদেশে আসে এবং রানীকে তার সঙ্গে মিলিত হবার জন্য বারবার ফোন দিতে থাকে। তা না হলে সে বিভিন্ন প্রচার মাধ্যমে তার ও তার ছোট বোনের অশ্লীল ভিডিও প্রকাশ করার হুমকি দেয়। একপর্যায়ে সে ফেসবুকে দুটি ফেক আইডি খুলে কয়েকটি আপত্তিকর ছবি প্রকাশ করে। তার হুমকিতে ভীত হয়ে তার সঙ্গে দেখা করার জন্য রাজি হয় রানী। স্থান নির্ধারণ করা হয় নরসিংদীর পাঁচদোনায় অবস্থিত ড্রিম হলিডে পার্ক।
স্বামীর সঙ্গে আলোচনা করে নরসিংদী জেলা গোয়েন্দা পুলিশের উপ-পরিদর্শক আ. গাফফারকে বিষয়টি তুলে ধরে সাহায্য চায় রানী। কথামতো ২৪ জুলাই সকালে পার্কের সামনে দেখা করে রানী ও লম্পট কাইয়ূম। সেখানে দেখা করার পর রানীকে পার্কের ভেতর যাওয়ার জন্য জোর করতে থাকে কাইয়ূম। এসময় আগে থেকে ওঁৎ পেতে থাকা গোয়েন্দা পুলিশের দল তাকে আটক করে। তাকে আটক করার পর জেলা গোয়েন্দা পুলিশের কার্যালয়ে নিয়ে আসা হয়। এসময় তার ব্যবহৃত দুটি মোবাইল ফোন জব্দ করা হয়। তার ব্যবহৃত দুটি মোবাইল ফোনে বিভিন্ন বয়সী মেয়েদের নগ্ন ও অর্ধনগ্ন ছবি পাওয়া যায় এবং প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, শুধু রানী ও সামসুন নাহার নয়, তাদের আরেক ছোট বোন যে ভৈরবের একটি কলেজে পড়ে তার সঙ্গেও অনুরূপভাবে দৈহিক সম্পর্ক স্থাপন করে। এছাড়া তার ফেসবুক ও ম্যাসেঞ্জার পর্যালোচনা করে বিভিন্ন মেয়ে ও নারী এমনকি তার বাড়ির আশপাশের ভাবিদের সঙ্গেও তার অবৈধ সম্পর্ক রয়েছে।
গোয়েন্দা পুলিশ ধারণা করছে, সে একজন ভয়ঙ্কর নারী লোভী। প্রেম ভালোবাসার অভিনয় করে সে অসংখ্য নারীর সঙ্গে প্রতারণা করে আসছে।
এ ব্যাপারে গোয়েন্দা পুলিশের উপ-পরিদর্শক আব্দুল গাফফার জানান, তার বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলার অভিযোগ, তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোন থেকে পাওয়া অশ্লীল ছবি, ভিডিও তার ফেসবুক থেকে পাওয়া বিভিন্ন ছবি বার্তা থেকে বোঝা গেছে, সে একজন সিরিয়াল ধর্ষক ও নারী লোভী লম্পট। তবে সে বিভিন্ন ছল-চাতুরি করে এই কাজ করে আসছিল, যার ফলে সে এতদিন পার পেয়ে গেছে। এবার এক মেয়ে নিরূপায় হয়ে আমাদের কাছে সাহায্য চেয়েছে বলেই তাকে আইনের আওতায় আনা সম্ভব হয়েছে। তার বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলায় আদালতে ৭ দিনের রিমান্ড আবেদন করেছি। তাকে রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করলে তার কাছ থেকে বহু মেয়ের আপত্তিকর ছবি, ভিডিও এবং কতগুলো মেয়ের সঙ্গে প্রতারণা করেছে তা জানা সম্ভব হতে পারে।
এমএএস/এবিএস