হাফেজ হওয়া হলো না ইব্রাহিমের


প্রকাশিত: ১২:৩৬ পিএম, ০৭ আগস্ট ২০১৬

বড় সাধ ছিল ছেলে ইব্রাহিম খলিল (১৩) কোরআন মুখস্থ করে দেশের একজন বড় হাফেজ হবে। পাঁচ ভাই-বোনের সংসারের ছোট ছেলে সবার মুখ উজ্জ্বল করবে। কিন্তু ইব্রাহিমের আর হাফেজ হওয়া হলো না।

ভৈরবের মাদরাসাছাত্র ইব্রাহিম খলিলের ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করার পর এভাবে বিলাপ করছিলেন তার মা-বাবা। রহস্যে ঘেরা এ মৃত্যু নিয়ে গত তিনদিন ধরে কিছুতেই পরিবারের কান্না থামছে না।  

বাবা মোমতাজ ভৈরবের একটি সমিল শ্রমিক। ছেলে হাফেজ হবে, এ স্বপ্ন নিয়ে মা-বাবা তাকে মাদরাসায় ভর্তি করান। কিন্তু ছেলের মৃত্যুতে তাদের স্বপ্ন ভেঙে যায়। রোববার তাদের বাসায় গিয়ে দেখা যায় পরিবারের কান্না এখনো চলছে।


গত শুক্রবার বিকালে ভৈরব রানীর বাজার শাহী মসজিদের দোতালার একটি স্টোর রুমে থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়। মাদরাসা শিক্ষক রুম খুলে তার ঝুলন্ত মরদেহ দেখতে পান।

পরে তিনি সহকর্মীদেরসহ পরিবারকে ঘটনাটি জানান। আচমকা মৃত্যুর খবর পেয়ে পরিবারের সদস্যরা ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন। মরদেহ দেখে বাকরুদ্ধ হয়ে যান ইব্রাহিমের মা-বাবা।  

তিনি অভিযোগ করে বলেন, আমার ছেলে আত্মহত্যা করেনি, তাকে কেউ হত্যা করে ঝুলিয়ে রেখেছে।

পুলিশ মরদেহ উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায়। গত শনিবার ময়নাতদন্তের পর মরদেহ বিকেলে ভৈরব পৌঁছালে স্থানীয় কবরস্থানে দাফন করা হয়।

জানা যায়, গত শুক্রবার মাদরাসা ছুটির দিন থাকায় ইব্রাহিম দুপুরে বাসায় খেতে আসে। খাওয়ার পর বিকেলে নামাজ পড়ার কথা বলে বের হয়। মাদরাসায় লেখাপড়া খাওয়া দাওয়াসহ রাতেও সেখানে থাকতো ইব্রাহিম। এ বছর সে তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ছিল। বাসা থেকে বের হওয়ার ২ ঘণ্টার মধ্য তার মৃত্যুর সংবাদ শুনে হতবাক হয়ে যান মা-বাবা।

মৃত ইব্রাহিমের মা সুলতানা রাজিয়া অভিযোগে করেন, শিক্ষকের হাতে তার মৃত্যু হয়েছে। তাকে হত্যার পর মরদেহ ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে।

বাবা মোমতাজ উদ্দিন বলেন, আমার অবুঝ শিশু আত্মহত্যা করতে পারে না। মাদরাসা শিক্ষকরাই বলতে পারবেন কীভাবে তার মৃত্যু হয়েছে। মাদরাসায় সবসময় ছাত্র-শিক্ষক থাকে। এত লোকজন থাকতে স্টোর রুমে কীভাবে ইব্রাহিম আত্মহত্যা করতে পারে।

এ ব্যাপারে মাদরাসা শিক্ষক হাফেজ নুর উদ্দিন বলেন, শুক্রবার সকাল ৭টার পর তার সঙ্গে আর দেখা হয়নি। কীভাবে এ ঘটনা ঘটছে আমি বলতে পারছি না।

ভৈরব থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. বদরুল আলম তালুকদার জানান, মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারকে বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে। তবে ময়নাতদন্ত রিপোর্টে হত্যাকাণ্ডের কোনো আলামত পাওয়া গেলে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

আসাদুজ্জামান ফারুক/এএম/এবিএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।