অর্থের অভাবে পিছিয়ে পড়ছে কাঁকড়া চাষ

যখন দেশের মানুষ খাওয়ার জন্য সাগর, নদী-নালা-ডোবা এবং মুক্ত জলাশয় থেকে কাঁকড়া সংগ্রহ করতো, তখন কাঁকড়া খাওয়ার প্রচলনটা ব্যাপকভাবে ছিল না। দিন বদলের সঙ্গে সঙ্গে কাঁকড়া পৃথিবীর অধিকাংশ দেশের মানুষের খাদ্য তালিকায় পুষ্টিকর এবং সুস্বাধু খাবার হিসেবে স্থান করে নিয়েছে।
বর্তমানে বিদেশে কাঁকড়া রফতানি হওয়ায় এর মূল্য এবং ব্যবসায়িক গুরুত্ব বাড়ছে দিন দিন। চাহিদার তুলনায় প্রাকৃতিকভাবে কাঁকড়ার উৎপাদন অনেক কম, ফলে বাজারে এর প্রচুর চাহিদা এবং চড়া মূল্য থাকায় মানুষ বর্তমানে ঘেরে কাঁকড়ার চাষ শুরু করেছে।
অল্প সময়ে উৎপাদন করে অধিক লাভ। সে আশায় দাকোপের সুন্দরবন এলাকার প্রত্যন্ত গ্রামে দিন দিন কাঁকড়ার ঘেরের সংখ্যা বাড়ছে। সময় বদলের সঙ্গে বদলে যাচ্ছে মানুষের চিন্তা-ভাবনা প্রযুক্তি। তাই আবার অনেকে ট্রেতে স্পেশাল কেয়ারে পালন করছেন কাঁকড়া।
সরেজমিনে দেখা যায়, দাকোপের ৯টি ইউনিয়ন এবং একটি পৌরসভার সব এলাকায় কমবেশি কাঁকড়ার চাষ হয়েছে।
উপজেলা মৎস্য অফিস সূত্রে জানা যায়, দাকোপে কাঁকড়ার ঘেরের সংখ্যা প্রায় ৭ হাজার। তবে সুন্দরবন সংলগ্ন গ্রামগুলোতে এ ঘেরের সংখ্যা বেশি।
সুন্দরবন এলাকায় কৈলাশগঞ্জের রামনগর গ্রামের ঘের মালিক রাজ্জাক সরদার, আব্দুর রহমান শেখ বলেন, সুন্দরবনের নদী-খালে প্রচুর কাঁকড়া পাওয়া যায়। তাই এখানে কাঁকড়ার ঘের করতে সুবিধা বেশি।
তারা বলেন, বাঁশ নেট দিয়ে ভালো করে ঘের আটকাতে হয়। যেন কাঁকড়া বেরিয়ে যেতে না পারে। তারপর ছোট ছোট কাঁকড়া ঘেরে ছাড়তে হয়। বর্তমানে প্রতি মণ ছোট কাঁকড়া ৫ থেকে ৬ হাজার টাকায় কিনতে হচ্ছে। তিন থেকে চার মাস এ কাঁকড়া ঘেরে রাখতে হয়।
তখন কাঁকড়াকে ছোট মাছ, শামুক এবং কুঁচে জাতীয় মাছ খাবার হিসেবে দেয়া হয়। এক মণ কাঁকড়ার খাবারের জন্য ব্যয় হয় প্রায় ২ হাজার টাকা। তিন-চার মাস পর প্রতিটি কাঁকড়া ওজনে দ্বিগুণ হয়। তখন এর মূল্য প্রতি মণে দাঁড়ায় ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা। কাঁকড়ার রোগ-বালাই কম তাই কাঁকড়ার ঘের করে লোকসান হওয়ার সম্ভাবনাও খুবই কম।
একই গ্রামের মো. কওসার আলী গাজী, রাজ্জাক গাজী, মহাদেব রায়, কৃষ্ণপদ রায়সহ অনেকেই সামর্থ্য অনুযায়ী কাঁকড়ার চাষ করেছেন এবং কয়েকবার কাঁকড়া চাষ করে আর্থিকভাবে লাভবানও হয়েছেন।
রামনগর গ্রামের গোবিন্দ বৈদ্য তার ঘেরের মধ্যে ট্রেতে পৃথকভাবে কিছু কাঁকড়া চাষ করেছেন। তিনি বলেন, ট্রেতে পরীক্ষামূলকভাবে কাঁকড়া চাষ করে দেখা গেছে এতে খাবার কম নষ্ট হয় এবং ঘেরে ছেড়ে দেয়া কাঁকড়া থেকে ট্রেতে চাষ করা কাঁকড়া দ্রুত বড় হয়।
কাঁকড়া লবণ ও মিষ্টি পানিতে চাষ করা যায়। তাই যে কেউ ইচ্ছা করলে তার বাড়ির পুকুর ডোবা এবং জলাশয়ে কাঁকড়ার চাষ করতে পারেন। কাঁকড়া চাষে বেশি জমির প্রয়োজন হয় না। প্রতি শতকে ১ মণ কাঁকড়া চাষ করা যায়।
কাঁকড়া চাষ ব্যাপকভাবে হলে সরকার প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে যেমন অধিক রাজস্ব পাবে তেমনি বিদেশে রফতানি করে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করতে পারে।
চাষীরা জানান, সুন্দরবন এলাকায় ব্যাপকভাবে কাঁকড়া চাষের অনুকূল পরিবেশ থাকা সত্যেও প্রয়োজনীয় অর্থের অভাবে অনেক চাষী কাঁকড়া চাষ করতে পারছেন না। এ খাতে প্রয়োজনীয় কৃষিঋণ পেলে কৃষক ও বেকার যুবকরা কাঁকড়া চাষ করে যেমন স্বাবলম্বী হতে পারবেন, তেমনি সৃষ্টি হবে বহু মানুষের কর্মসংস্থানের পথ।
আলমগীর হান্নান/এএম/এবিএস