সিলেটে তাবলীগের আমীর খুনে স্ত্রীর স্বীকারোক্তি
সিলেট নগরের চারাদিঘিরপারের সওদাগরটুলায় খুন হওয়া তাবলীগের আমির ইব্রাহিম আবু খলিল (৫৫) কে জবাই করে হত্যার কথা স্বীকার করেছেন তার স্ত্রী ফাতেমা মাশকুরা।
পুলিশ ও পরিবার সূত্রে জানা গেছে, ইব্রাহিম আবু খলিল তিনটি বিয়ে করেছেন। সওদাগরটুলায় থাকতেন এক স্ত্রী ফাতেহা মাশকুরা। লাশ উদ্ধারের পর ফাতেহাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করে কোতোয়ালী থানা পুলিশ। দিনভর জিজ্ঞাসাবাদের পর রাতে ফাতেহা স্বামীকে হত্যার কথা স্বীকার করেছে বলে পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তা দাবি করেছেন।
পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে খুন হওয়া ইব্রাহিম আবু খলিলের স্ত্রী ফাতেহা জানান, রোববার রাতে ঘুমিয়ে থাকা ইব্রাহিম খলিলকে প্রথমে একটি ভারি লোহার স্লীপার দিয়ে মাথায় আঘাত করেন। এরপর তাকে ধারালো বটি দিয়ে জবাই করেন। সর্বশেষ পেটে ৩টি কোপ দিয়ে তার মৃত্যু নিশ্চিত করেন।
রোববার রাতে নগরের চারাদিঘীরপাড় এলাকার তাবলীগের আমির ইব্রাহিম আবু খলিল ভারত থেকে তাবলীগ জামায়াত শেষে বাসায় ফেরেন। ওইরাতেই তাকে জবাই করে হত্যা করেন স্ত্রী। সোমবার সকাল ১০টায় খবর পেয়ে পুলিশ ইব্রাহিমের বাসা থেকে লাশ উদ্ধার করে। দুপুরে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ইব্রাহিমের স্ত্রী ফাতেহা মাশকুরা, ছোট ছেলে সাজিদ (১৬) ও বাসার গৃহকর্মীকে থানায় নিয়ে যায় পুলিশ। তাদের ৩ জনকে আলাদাভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। এক পর্যায়ে স্ত্রী ফাতেহা মাসকুরা পুলিশের কাছে হত্যার দায় স্বীকার করে হত্যার বর্ণনা ও কারণ জানান। তিনি নিজেই তার স্বামীকে হত্যা করেছেন বলে স্বীকার করেন।
ফাতেহা বলেন, তার স্বামী ৩টি বিয়ে করেছেন। তিনি বাসায় খুব কম আসতেন। পরিবারকে কম সময় দিতেন। দিনাজপুরে একটি বিয়ে করেন। পরে ওই স্ত্রীকে তালাক দিয়েছেন। আরেক স্ত্রী থাকেন সিলেট নগরের বালুচর এলাকায়। পরিবারের খোঁজ খবর না নেয়ার কারণেই স্বামীকে হত্যা করেছেন বলে দাবি তার।
সিলেট মহানগর পলিশের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (গণমাধ্যম) মো. রহমত উল্লাহ নিহতের স্ত্রী ফাতেহার বরাত দিয়ে সোমবার রাতে বিষয়টির বর্ণনা দিয়েছেন জাগো নিউজকে। তিনি বলেন, লাশ উদ্ধারের ৩ ঘন্টার মাথায় রহস্য উদঘাটন হয়েছে। ইব্রাহিমকে তার স্ত্রীই হত্যা করেছেন। স্ত্রী ফাতেহা তা পুলিশের কাছে স্বীকার করেছেন। একাধিক বিয়ে করা ও পরিবারকে সময় না দেয়ার কারণেই ইব্রাহিমকে খুন করেছেন তার স্ত্রী।
এক প্রশ্নের জবাবে রহমত উল্লাহ বলেন, পুলিশ যখন লাশ উদ্ধার করতে বাসায় যায় তখনই আলামত দেখে বুঝা যায় বাইরের কেউ তাকে হত্যা করেনি। তাই ঘরে ইব্রাহিমের স্ত্রী, ছোট ছেলে সাজিদ ও বাসার গৃহকর্মীকে পৃথকভাবে জিজ্ঞাসা করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে ইব্রাহিমের স্ত্রী নিজেই স্বামীকে হত্যা করেন বলে জানান।
কোতোয়ালি থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সোহেল আহমদ জানান, লাশের ময়নাতদন্ত শেষে স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এ ঘটনায় থানায় হত্যা মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে।
পারিবারিক সূত্র জানায়, তাবলীগ জামায়াতের কাজ শেষে রোববার দেশে ফেরেন ইব্রাহীম খলিল। চারাদিঘীর পাড়ে তার রয়েছে বিশাল সম্পত্তি। তার বাসার সামনে রয়েছে একটি মার্কেট। ওই মার্কেটের আয় দিয়ে সংসার এবং তাবলীগে যাওয়ার ব্যয় নির্বাহ করেন। তিনি যে কক্ষে ঘুমাতেন ওই কক্ষের দরজা সব সময় খোলা থাকত। রোববার রাতেও তিনি দরজা খুলে ঘুমান।
রাতে খাবার শেষে তিনি তার কক্ষে, স্ত্রী অন্য কক্ষে এবং ছোট ছেলে এসএসসি পরীক্ষার্থী সাজিদ আলাদা আরেকটি কক্ষে ঘুমাতে যায়। নিহত ইব্রাহিমের বড় দুই ছেলে মাওলানা হুজায়েফ ও তানজিদ বর্তমানে তাবলীগের কাজে পাটুয়াখালী ছিলেন। খবর পেয়ে সোমবারই তারা সিলেটের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়েছেন।
ছামির মাহমুদ/এমএস/এমএস