৩০ মিনিটে এক হাজার কর্মহীন-হতদরিদ্র পেল বিনামূল্যে সেনা বাজার
পর্যটন শহর কক্সবাজারের সৈকতে ফটোগ্রাফি করে ভালোই চলতো হাসান আলীর সংসার। ৩৫ হাজার টাকায় কেনা ডিএসএলআর ক্যামেরাতেই পরিবারের পাঁচ সদস্যের জীবিকার সংস্থান হতো ভালোই। কিন্তু বিগত দুই মাসেরও বেশি সময় ভূতুড়ে নগরী কক্সবাজার। জনমানব শূন্য সৈকতের বালিয়াড়ি। করোনার প্রাদুর্ভাবের কারণে স্বল্প আয়ের মানুষদের পথে বসার উপক্রম হয়েছে। তবে আকস্মিক সেনাবাহিনীর উদ্যোগে বিনামূল্যের সেনা বাজার তৃষ্ণায় পানি দেয়ার মতোই কাজ করেছে। সহযোগিতা পাওয়া দরিদ্ররা পরিবারের সবাইকে নিয়ে ঈদের আনন্দ উপভোগ করছেন।
পবিত্র ঈদুল ফিতরকে সামনে রেখে কক্সবাজারে করোনায় কর্মহীন অসহায় মানুষদের নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য সামগ্রী এবং কাঁচা বাজারের চাহিদা পূরণ করতে শুক্রবার (২২ মে) সেনা বাজার ও ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্পেইনের আয়োজন করা হয়। সেনাবাহিনীর ১০ পদাতিক ডিভিশনের তত্ত্বাবধানে সকাল সাড়ে ১০টা হতে বেলা ১১টা পর্যন্ত ৩০ মিনিটের বাজারে সামাজিক দূরুত্ব নিশ্চিত করে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য চাল, আটা, তৈল, লবণ, ডাল এবং বিভিন্ন ধরনের সবজি সংগ্রহ করেছে এ হাজার পরিবার। বিনামূল্যে খাদ্য সামগ্রীর পাশাপাশি দেয়া হয়েছে ২০০ অসুস্থকে চিকিৎসা সেবা ও ওষধ সামগ্রী।
রামু ১০ পদাতিক ডিভিশনের গণমাধ্যম সমন্বয়ক মেজর তানজিল জানান, লকডাউন ও সাম্প্রতিক ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের কারণে এ অঞ্চলের যে সকল প্রান্তিক কৃষক তাদের উৎপাদিত সবজি বাজারে বিক্রি করতে পারছিলেন না, সেনা সদস্যরা সরাসরি সেসব কৃষকদের কাছ থেকে সবজি কিনে বিনামূল্যের বাজারে নিয়ে আসে। ফলে অসহায় মানুষদের পাশাপাশি কৃষকরাও তাদের সবজির ন্যায্যমূল্য পেয়ে উপকৃত হয়েছেন।
সকালে কক্সবাজার শেখ কামাল ক্রিকেট স্টেডিয়ামে সেনাবাহিনীর সার্বিক ব্যবস্থাপনায় বাজারের প্রবেশ পথে জীবাণুনাশক বুথ ও হাত ধোয়ার ব্যবস্থা রাখা হয়। প্রকৃত অভাবি মানুষ তাদের প্রয়োজনীয় বাজার কোনো প্রকার ঝামেলা ছাড়াই সম্পূর্ণ বিনামূল্যে সংগ্রহ করেছেন।
কলাতলীর আবদুর রহিম নামে এক হোটেল কর্মচারী বলেন, করোনা ধার দেনায় ফেলেছে। কষ্টে দিন যাপন করছিলাম। এ সময়ে সেনা বাজার থেকে চাল, আলু, বরবটি, কচুর লতি, কাঁচা মরিচসহ নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র পেয়ে কি যে আনন্দ লাগছে বলে বুঝানো যাবে না।
আরেক হোটেল কর্মচারী লিয়াকত জানান, কানের ব্যথায় গত এক সপ্তাহ যাবত কষ্ট পাচ্ছিলাম। সেনাদের মেডিকেল ক্যাম্পেইনে বিশেষজ্ঞ ডাক্তার দেখিয়ে ফ্রি ওষুধও পেয়েছি। সেনাবাহিনীর এ কার্যক্রম অসহায়দের ঈদের আনন্দকে উপভোগ করার সুযোগ করে দিয়েছে।
এদিকে ঈদের ঠিক আগ মুহূর্তে সেনাবাহিনীর এ ধরনের মহতী উদ্যোগ অসহায় মানুষের জন্য যেমন ঈদের বোনাসের মতো তেমনি কৃষকদের জন্যও ঈদের উপহার হিসেবে গণ্য করছেন কক্সবাজারের সুধী মহল।
সায়ীদ আলমগীর/আরএআর/জেআইএম