মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় প্রথম পাবনার মুনমুন

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি পাবনা
প্রকাশিত: ০২:৪৮ এএম, ০৬ এপ্রিল ২০২১

‘লক্ষ্য ছিল অটুট, আত্মবিশ্বাস ছিল প্রবল। পরীক্ষায় সফল হব। হয়ত ঢাকা মেডিকেলেই সুযোগ পাব তবে ভর্তি পরীক্ষায় ১ম হয়ে যাব, এটা ভাবিনি। ১ম হয়ে উপলব্ধি করছি ঢাকার বাইরে পড়াশোনা করেও সেরা হওয়া যায়। আমি তার বড় উদাহরণ।’

২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষে এমবিবিএস ভর্তি পরীক্ষায় মেধা তালিকায় প্রথম স্থান অর্জন করা পাবনার মেয়ে মিশোরী মুনমুন এভাবেই তার প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করছিলেন।

পাবনার মেয়ে মিশোরী মুনমুন। তিনি পাবনা মেডিকেল কলেজ কেন্দ্র থেকে পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিলেন। তিনি পাবনা সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি ও পাবনা অ্যাডওয়ার্ড কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন মিশোরী মুনমুন। তার বাবার বাড়ি শহরের রাধানগর নারায়ণপুর গ্রামে। তার বাবা আবদুল কাইয়ুম স্কয়ার ফুড অ্যান্ড বেভারেজে চাকরি করেন।

মিশোরী মুনমুন জানান, এমন চিকিৎসক হতে চাই যেন রোগী চেম্বারে আসার পরে মনে করবে তার রোগ অর্ধেক ভালো হয়ে গেছে। তিনি পড়াশোনা শেষ করে এলাকার মানুষের সেবার জন্য মনোনিবেশ করার কথা জানান।

তার কঠোর অধ্যবসায়ের একটি নেপথ্য কারণও বলেছেন। তিনি জানান, তিনি দেখেছেন তার বাবা-মায়ের পরিশ্রম। সে পরিশ্রম সন্তানদের জন্য। তাই তিনি বাবা-মেয়ের শ্রমকে সার্থক করার জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছেন বলে জানান।

প্রতিটি মুহূর্তকে কাজে লাগিয়েছেন। এ প্রসঙ্গে জানান, সময়কে কাজে লাগানো জরুরি। তার চেয়ে অনেক অগ্রসর পরিবারের সন্তানরাও ব্যর্থ হয়েছেন। এর কারণ হিসেবে তিনি জানান, তারা সময়কে যথাযথ কাজে লাগাননি। আর কিছু নয়।

মুনমুন জানান, শৈশব থেকেই মনের মধ্যে সুপ্ত বাসনা ছিল ডাক্তার হওয়ার। কারণ এ পেশায় মানুষের সরাসরি সেবা করা যায় বলে তিনি জানান। সেই সুপ্ত বাসনা পূরণ হওয়ার পর নিজের উচ্ছ্বাসের কথা জানালেন মুনমুন।

তিনি বলেন, ‘আমার চেষ্টা, শিক্ষকদের অক্লান্ত পরিশ্রম, অভিভাবকদের সহযোগিতা সব কিছুর সম্মিলনেই তার সাফল্য এসেছে। অনেক বড় চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্ন তার। তিনি যেতে চান অনেক দূর। এজন্য সবার দোয়া চান।

মনুমুনদের পারিবারিক অবস্থা খুব ভালো নয়। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম বাবার অল্প আয়ে কিছুটা টানাপোড়েনের মধ্যেই বেড়ে ওঠেছেন। মিশোরী মুনমুনরা তিন বোন। কোনো ভাই নেই। বড় বোন ডাক্তার।

jagonews24

চুয়াডাঙ্গায় একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। মেজো বোন পাবনা অ্যাডওয়ার্ড কলেজে রসায়ন বিভাগে অনার্স ফাইনাল ইয়ারে পড়েন। তিন বোনের পরিবারে মিশোরী মুনমুন সবার ছোট। শহরের ইছামতি সরকারি প্রাইমারি স্কুল থেকে প্রাথমিক শিক্ষা নিয়ে সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে ভর্তি হন।

জেএসসি পরীক্ষায় তিনি জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হন। এসএসসিতে জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণের পর পাবনা সরকারি অ্যাডওয়ার্ড কলেজে ভর্তি হন। সেখান থেকে এইচএসসিতেও জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হন মিশোরী মুনমুন।

করোনা পরিস্থিতিতে চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে গত কয়েকমাস নিজ বাড়িতেই রাত-দিন কঠোর পরিশ্রম করে মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার জন্য নিজেকে প্রস্তুত করেন তিনি। তার সাফল্যে খুশি পরিবারের সবাই। সাফল্যে গর্বিত গোটা পাবনা জেলা। তিনি অনেক বিদ্যোৎসাহী ব্যক্তির সংবর্ধনা, শুভেচ্ছা পেয়েছেন। সবার ভালোবাসায় সিক্ত তার পরিবার।

মুনমুনের বাবা আব্দুল কাইয়ুম বলেন, অনেক কষ্ট করে হলেও সন্তানদের ভবিষ্যৎ গড়ার উদ্যোগ নিয়েছি। তার মেয়ে ভর্তিতে দেশ সেরা হয়েছে এটা ভাবতেই তিনি পুলকিত, আনন্দিত ও গর্বিত বলে জানান।

মুনমুনের মা মুসলিমা বেগম বলেন, মেয়েরা অবহেলিত নয়। সুযোগ দিলে তারাও সমাজ দেশকে অনেক কিছু দিতে পারে। তার কিছু হতে পারে। তার মেয়েই তা প্রমাণ করেছেন বলে জানান।

তিনি তার মেয়র জন্য সবার কাছে দোয়া চার। এছাড়া তার মেয়ে যেন এলাকার মানুষের জন্য ভবিষ্যতে ভাল কিছু করতে পারে সেজন্য দোয়া চান।

পাবনা সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবদুল জব্বার জানান, মিশোরি ছোট থেকেই মেধাবী ছিল। তৃতীয় শ্রেণিতে সে এসসসি এখানে পড়াশোনা করে। সব সময় সে ক্লাসের ফার্স্ট হত।

অন্য ছাত্রীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, সবাইকে বলব তোমরা মিশোরী মুনমুনকে অনুসরণ করো, তার থেকে শিক্ষা নাও। সে মফস্বল শহরের মেয়ে হয়ে মেডিকেলে ভর্তি পরীক্ষায় সারাদেশে প্রথম হয়েছে।

পাবনা সরকারি অ্যাডওয়ার্ড কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর ড. হুমায়ুন কবির মজুমদার বলেন, মিশোরী মুনমুনের সাফল্যে আমরা খুবই গর্ববোধ করছি। শিক্ষকরা সব সময় তার খোঁজখবর নিয়েছেন। মেয়েটি আমাদের কলেজের মুখ উজ্জ্বল করেছে।

বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ) পাবনার সেক্রেটারি ডা. আকসাদ আল মাসুর আনন জানান, তিনিও পাবনার মানুষ। পাবনার একজন কৃতী শিক্ষার্থী মেডিকেলে ভর্তি পরীক্ষায় ১ম হয়েছেন এটা বিরাট আনন্দ সংবাদ। পাবনার চিকিৎসক সমাজও আনন্দিত বলে তিনি জানান।

পাবনার বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও সমাজসেবক পাবনা কলেজের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ আলহাজ মাহাতাব উদ্দিন বিশ্বাস বলেন, তিনিও একজন ডাক্তার মেয়ের বাবা। ভর্তি পরীক্ষায় এই প্রতিযোগিতার যুগে মফস্বল শহর থেকে ১ম হওয়া কম গৌরবের কথা নয়। তারপর মধ্যবিত্ত বা নিম্ন মধ্যবিত্ত একটি পরিবারের একজন মেয়ের এমন সাফল্যে পাবনাবাসী হিসেবে তিনিও গর্ববোধ করছেন বলে জানান।

উল্লেখ্য, রোববার (৪ এপ্রিল) মেডিকেল কলেজের এমবিবিএস ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হয়। ভর্তি পরীক্ষার ১০০ নম্বরের মধ্যে তিনি ৮৭.২৫ নম্বর পেয়ে মেধা তালিকায় প্রথম হয়েছেন পাবনার মেয়ে মিশোরী মুনমুন।

আমিন ইসলাম/এমআরএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।