হাওরে ফাঁদের কবলে পরিযায়ী পাখিরা

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি মৌলভীবাজার
প্রকাশিত: ১০:০৩ এএম, ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২২

মৌলভীবাজার জেলার হাওরগুলোতে প্রকাশ্যে জাল দিয়ে ফাঁদ পেতে ও বিষটোপ দিয়ে পরিযায়ী পাখি শিকার হচ্ছে। শিকার বন্ধে বনবিভাগ ও প্রশাসনের কোনো উদ্যোগ নেই বলেও অভিযোগ রয়েছে। এতে জীববৈচিত্র্য হুমকির মুখে পড়বে বলে আশঙ্কা করছেন প্রকৃতিপ্রেমীরা।

জেলার উত্তর পশ্চিম অংশে অবস্থিত হাওর কাউয়া দীঘিতে গিয়ে দেখা যায়, গিরিম, মাজের বান, কুবজারি বন, কইলতা, মিটিপুরসহ হাওরের বিভিন্ন এলাকায় শিকারিরা বাঁশের খুঁটি পুঁতে জাল দিয়ে ফাঁদ পেতে প্রকাশ্যে পরিযায়ী পাখি শিকার করছে।

জানা গেছে, শিকারিরা দিনে জাল দিয়ে ফাঁদ পেতে রাখে। রাতে খাবারের সন্ধানে আসা পরিযায়ী পাখিরা এই ফাঁদে আটকা পড়ে। পরে সকালে শিকারিরা পাখিগুলো স্থানীয় পাইকারের কাছে বিক্রি করে। এর ফলে হাওরগুলোতে দিনে দিনে কমছে পরিযায়ী পাখির সংখ্যা।

শুধু জাল দিয়ে ফাঁদ পেতে নয়, বিভিন্ন জায়গায় বিষটোপ দিয়েও পাখি শিকার করা হচ্ছে। হাওর কাউয়াদিঘি ছাড়াও জেলায় আবস্থিত দক্ষিণ এশিয়ার বৃহত্তম হাওর হাকালুকি, হাইল-হাওর, বাইক্কা বিলে ছুটে আসা পরিযায়ী পাখিগুলোকে শিকার করা হচ্ছে। সাইবেরিয়া, চীনসহ এশিয়ার অন্যান্য দেশ থেকে পরিযায়ী পাখি শীতের শুরুতে একটু উষ্ণতার জন্য ছুটে আসে নিরাপদ আশ্রয়ে ও খাবারের সন্ধানে। এলাকার আশপাশের গ্রাম, হাওর-বাওড়, বিল ঝিল ও ডোবাগুলো এ সময় পরিযায়ী পাখির কলকাকলিতে মুখর হয়ে ওঠে। কিন্তু শিকারিদের অত্যাচারে পাখিরা নির্বিঘ্নে খাবার সংগ্রহে নামতে পারছে না।

দেশের যে কয়টি স্থানে পরিযায়ী পাখির সমাগম ঘটে তার মধ্যে হাকালুকি হাওর, কাউয়া দীঘি, বাইক্কা বিল অন্যতম। পরিযায়ী পাখিরা প্রতিবছর পুরো শীত মৌসুম হাওরে বিচরণ করে আবার গরমের শুরুতেই তারা ফিরে যায় স্ব-স্ব আবাসস্থলে।

হাওরপারের ইসলামপুর গ্রামের সফিকুলের সঙ্গে কথা হলে তিনি জাগো নিউজকে বলেন, শিকারিরা দিনের বেলা জাল দিয়ে ফাঁদ পেতে রাখে। রাতের বেলা পাখিরা খাবারের সন্ধানে দল বেঁধে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে উড়ে যাওয়ার সময় একেকটি জালে ১০ থেকে ১৫টি আটকা পড়ে। এ ছাড়া বিলের পানিতে কারেন্ট জাল পেতেও পাখি শিকার করা হয়। তাদেরকে পাখি শিকার না করার কথা বললে তারা উল্টো আমাদেরকে ধমক দেয়।

হাওর এলাকার কাশিম পুরের আনসার আলী জাগো নিউজকে বলেন, এক হালি পাখি ১ হাজার থেকে ১ হাজার ২০০ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে। পাখিদের মধ্যে সরালি, লেনজাসহ কিছু অচেনা পাখি রয়েছে।

বায়োডাইভারসিটি কনজারভেশন গ্রুপ মৌলভীবাজারের আহ্বায়ক হাসানাত কামাল জাগো নিউজকে বলেন, পাখি শিকার বন্ধে বন প্রশাসনিক পদক্ষেপ খুবই জরুরি। পাশাপাশি সাধারণ মানুষকে সচেতন করে তুলতে হবে। অবাধে পাখি শিকারের কারণে জীববৈচিত্র ও পরিবেশ হুমকির মুখে পড়ছে। তবে সাম্প্রতিক সময়ে বন বিভাগের তৎপরতা আমাদের আশান্বিত করে।

বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ সিলেটের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, আমার কাছে কারো বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট কোনো অভিযোগ নেই। তবে যেসব এলাকায় পাখি শিকার হচ্ছে, খোঁজ নিয়ে সেখানে অভিযান চালানো হবে।

আব্দুল আজিজ/এফএ/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।