মাছ চাষে কোটিপতি মেজবা
২০০০ সালের কথা। ডিগ্রি পরীক্ষা খারাপ হলে হতাশায় পড়ে যান। পরে এক বড় ভাইয়ের অনুপ্রেরণায় ছোট্ট পরিসরে মাছ চাষের শুরু করেন মেজবাউল আলম। সেই থেকে শুরু। এরপর আর পেছনে তাকাতে হয়নি তাকে। মেজবাউল আলম এখন একজন সফল মাছচাষি। ২০২২ সালে জাতীয় মৎস্য সপ্তাহে তিনি উপজেলার শ্রেষ্ঠ মাছচাষির পুরস্কার অর্জন করেন।
মেজবাউল আলম মিরসরাই উপজেলার ৬ নম্বর ইছাখালী ইউনিয়নের সাহেবদিনগর গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা সফিউল আলমের ছেলে। তিনি ইছাখালী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বে রয়েছেন।

মেজবাউল আলম বলেন, ১৯৯৯ সালে নিজামপুর কলেজ থেকে ডিগ্রি পরীক্ষা দিই। ফলাফল খারাপ হলে হতাশার সৃষ্টি হয়। পরে তেমুহানির বড় ভাই নুরুল আলম আমাকে চট্টগ্রামে নিয়ে যান। তখন আমি ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। শহরে বসে পরিকল্পনা করি, কিছু একটা করতে হবে। ২০০০ সালের প্রথম দিকে কাটাছরা ইউনিয়নের মুরাদপুর গ্রামে দুটি পুকুর ইজারা নিয়ে মাছচাষ শুরু করি। ওই বড় ভাইসহ তিন বছর মাছ চাষ করে অনেক টাকা লোকসান হয়। তখন আলম ভাই বললেন কিছুই হবে না শহরে চল। আমি হতাশ হয়নি, মনেমনে ঠিক করলাম আবার নতুন করে শুরু করবো। এরপর ২০০৩ সালে আলম ভাইকে না জানিয়ে ইছাখালীর চরে ছয় একর আয়তনের দুটি দিঘীতে মাছ চাষ শুরু করি। তারপর একদিন আলম ভাইকে নিয়ে গেলাম। তিনি দেখে অনেক খুশি হলেন এবং আমাকে উৎসাহ যোগালেন। সেদিন তিনি আমাকে সঙ্গে সঙ্গে পাঁচ লাখ টাকা দিয়ে বলেন আরও ভালো করে শুরু করো। সেই থেকে শুরু। এখন আল্লাহ রহমতে আমার কাছে অনেক দিঘী রয়েছে। সফলতার সঙ্গে মাছচাষ করে যাচ্ছি।

তিনি আরও বলেন, আমার এখন ৭৫ একর জায়গায় মাছ চাষ রয়েছে। পাশাপশি আমার ইকুভমেন্ট ড্রেজার, স্কেবেটরের ব্যবসা রয়েছে। রয়েছে একটি ডেইরি ফার্মও। এসব প্রকল্পে ২০ জন শ্রমিক কাজ করে। মৎস্য প্রকল্পে কার্প জাতীয় ও উন্নত জাতের তেলাপিয়া মাছের চাষ করছি। আমার এ অবস্থায় আসার পেছনে বড় অবদান নুরুল আলম ভাইয়ের। তিনি সহযোগিতা না করলে এখানে আসা সম্ভব হতো না। আমি উনার কাছে কৃতজ্ঞ।
মেবজবা বলেন, মাছ চাষ করা বর্তমানে কঠিন হয়ে পড়েছে। খাদ্যের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। মাছচাষিরা চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। গত ৬ মাসে প্রতিটন খাদ্যে ২১-২২ হাজার টাকা বেড়েছে। দাম যেভাবে বাড়ছে সেভাবে মাছের দাম বাড়ছে না। চাষিদের জন্য জামানত বিহীন স্বল্প সুদে ঋণের ব্যবস্থা করা অনুরোধ করেন তিনি।
এ বিষয়ে উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা নাসিম আল মাহমুদ বলেন, সফল মাছচাষি নির্ধারণের অনেক গুলো বিষয় রয়েছে। আমরা দীর্ঘ যাচাই-বাছাই করে দেখেছি মেজবাউল আলম একজন সফল মাছচাষি। তিনি মাছ চাষের মাধ্যমে নিজে প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন। পাশাপাশি অনেকের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেছেন। জাতীয় অর্থনীতিতে অবদান রেখে আমিষের পুষ্টি চাহিদা পূরণে অবদান রাখায় জাতীয় মৎস্য সপ্তাহে তাকে সফল মাছচাষির সম্মাননা দেওয়া হয়েছে।
এম মাঈন উদ্দিন/আরএইচ/জিকেএস