বাজারে দাম বেশি
লক্ষ্মীপুরে সরকারি গুদামে ধান-চাল সংগ্রহে ভাটা
লক্ষ্মীপুরে চলতি আমন মৌসুমে সরকারিভাবে ধান-চাল সংগ্রহ অভিযানে ভাটা পড়েছে। কার্যক্রম শুরুর দুই মাসে সামান্য কিছু ধান-চাল সংগ্রহ করা সম্ভব হয়েছে।
সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে খোলা বাজারে ধান-চালের দাম বেশি পাওয়ায় প্রান্তিক কৃষকরা খাদ্যগুদামে ধান সরবরাহে আগ্রহ দেখাচ্ছেন না। তারা হয়রানি মুক্তভাবে বেশি দামে বাজারে ধান বিক্রি করছেন।
জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় সূত্র জানায়, চলতি আমন মৌসুমে সরকারিভাবে ধান-চাল সংগ্রহ অভিযান গত ১৭ নভেম্বর শুরু হয়। আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত এ কার্যক্রম চলবে। লক্ষ্মীপুরে ৪ হাজার ২৭৮ মেট্রিক টন ধান কেনার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। প্রতি কেজি ২৮ টাকা দরে (মণ ১ হাজার ১২০ টাকা) ধান কেনা হবে।
আরও পড়ুন: গুদামে চাল দিয়ে লোকসানে চালকল মালিকরা
রোববার (১৫ জানুয়ারি) পর্যন্ত লক্ষ্মীপুরে ১২০ মেট্রিক টন ধান সংগ্রহ করা হয়। এর মধ্যে সদরে ১৫, রামগতিতে ৯০, রায়পুরে তিন, কমলনগরে ১২ মেট্রিক টন কেনা হয়। রামগঞ্জে দুইমাসে এক কেজি ধানও কেনা হয়নি।
এছাড়া তিন হাজার ৮০৫ মেট্রিক টন চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও রোববার পর্যন্ত ৪৯৪ মেট্রিক টন কেনা হয়। এর মধ্যে সদরে ৪৫০ ও রামগঞ্জে ৪৪ টন চাল কেনা হয়। প্রতিকেজি চাল ৪২ টাকা দরে কেনা হচ্ছে।
সদরের পূর্ব ভবানীগঞ্জ, রায়পুরের সাইচা ও দক্ষিণ চরলক্ষ্মী গ্রামের অন্তত ১২ জন কৃষকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এ বছর আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় আমনের ভালো ফলন হয়েছে। বাজারে ধানের দামও গত বছরের তুলনায় কিছুটা বেশি। বাজারে প্রতি মণ ধান বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৩০০ টাকায়।
আরও পড়ুন: ধান-চাল সংগ্রহে ব্যর্থ খাদ্যবিভাগ
ব্যবসায়ীরা ক্ষেত এবং কৃষকদের বাড়ি থেকেই ধান নিচ্ছেন। অথচ সরকারি খাদ্যগুদামে ধান বিক্রি করতে গেলে পদে-পদে হয়রানি হতে হয়। কৃষি কার্ড, অনলাইন, ব্যাংক হিসাব, লটারি, পরিবহন সমস্যা, গুদামে কমিশন, সিন্ডিকেট, ধান বাছাইসহ অনেক হয়রানি। সময় মতো টাকাও পাওয়া যায় না। এসব কষ্ট থেকে রেহায় পেতে কৃষকরা সরকারি গুদামে ধান না দিয়ে বাজারেই বিক্রি করছেন।
রায়পুর উপজেলার উদমার গ্রামের কৃষক মো. ইসমাইল বলেন, সরকারিভাবে ধানের দাম বাড়াতে হবে। সহজ পদ্ধতিতে মাঠ থেকে ধান সংগ্রহ করার বিষয়টি দেখতে পারে সরকার। এছাড়া অনলাইনের নামে কৃষকরা সিন্ডিকেটের কারণে অনেক হয়রানি হয়েছে। অনেককেই গুদামে মাসের পর মাস ধান রেখে যেতে হয়েছিল। তাই আর কৃষকরা গুদামে ধান দিতে আগ্রহী হচ্ছে না।
রামগঞ্জ উপজেলা খাদ্যগুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসিএলএসডি) সমীর দেবনাথ বলেন, রামগঞ্জে এখন পর্যন্ত কোনো ধান কেনা সম্ভব হয়নি। তবে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করতে আমরা ইউনিয়ন পরিষদের মাধ্যমে প্রচারণা চালাচ্ছি। আমন মৌসুমে ফরিয়াদের প্রভাব থাকে। লটারির মাধ্যমে কৃষকরা যেন সরকারকে ধান সরবরাহ করতে পারে সে লক্ষ্যে কাজ করছি।
আরও পড়ুন: কৃষকের সাড়া কম, তবু বাড়ছে অ্যাপে ধান কেনার পরিসর
লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার ধান-চাল সংগ্রহ কমিটির সদস্য মো. কামাল উদ্দিন হাওলাদার বলেন, বাজার মূল্যের সঙ্গে মিল রেখে সরকারকে ধানের মূল্য বৃদ্ধি করতে হবে। সরকারি সংগ্রহে ধানের আদ্রতাসহ গুণগত বিভিন্ন বিষয়ে যাচাই করা হয়। এসব প্রয়োজন হয় না বলেই কৃষকরা খোলা বাজারে ধান বিক্রি করেন। মূল্যবৃদ্ধি ও পরিবহন সুবিধা দিতে পারলে কৃষকরা খাদ্যগুদামে সরবরাহ করবেন।
এ বিষয়ে লক্ষ্মীপুর জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক হুমায়ুন কবির বলেন, বাজারে ধানের দাম বেশি হওয়ায় কৃষকদের কাছ থেকে আশানুরূপ সংগ্রহ করা যাচ্ছে না। তারা ফরিয়া, দাদনদার ও ব্যবসায়ীদের কাছেই বিক্রি করছেন। এছাড়া দাম কম থাকায় চালের মিলাররা লক্ষ্যমাত্রা মোতাবেক চুক্তিবদ্ধ হয়নি। তারপরও আমরা অনেক চেষ্টার পর কিছু ধান-চাল কিনতে পেরেছি।
কাজল কায়েস/এমআরআর/এএসএম