বেতনস্কেল কার্যকরের দাবি টেক্সটাইল শ্রমিক-কর্মচারীদের

বেতনস্কেল চালু ও শ্রমিক হয়রানি বন্ধের দাবিতে কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন বরিশালের সোনারগাঁও টেক্সটাইল লিমিটেড শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়নের নেতারা।
শুক্রবার (২৭ জানুয়ারি) বেলা ১১টায় নগরীর ফকিরবাড়ি রোড শ্রমিক ফ্রন্ট কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে এ হুঁশিয়ারি দেন তারা।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে নেতারা বলেন, সোনারগাঁও টেক্সটাইলের শ্রমিক-কর্মচারীদের অধিকার আদায়ে দীর্ঘদিন ধরে লড়াই-সংগ্রাম করে আসছি। ২০২০ সালের মার্চ মাসে হঠাৎ করে মালিক কারখানা বন্ধ করে দেয়। এর পর ১১ মাস শ্রমিকরা ধারাবাহিকভাবে আন্দোলন করায় মালিক কারখানা পুনরায় চালু করতে বাধ্য হয়। ২০২১ সালে পুলিশ প্রশাসন ও জেলা প্রশাসনের প্রতিনিধিসহ আন্দোলনকারীদের সঙ্গে বৈঠকে মালিকপক্ষ শ্রমিকদের ছয় দফা দাবি মেনে কারখানা চালু করে। এই ছয় দফার মধ্যে অন্যতম ছিল ৯ মাসের বকেয়া বেতন পরিশোধ, ২০১৮ সালের গেজেটঘোষিত বেতনস্কেল চালু করা, ৮ ঘণ্টা কর্মঘণ্টা চালু করা, শ্রমিক ইউনিয়ন গঠনের কার্যক্রমে সহায়তা করা ইত্যাদি। এরমধ্যে শুধু ৯ মাসের বকেয়া বেতন ৪৫ কিস্তিতে পরিশোধের প্রক্রিয়া শুরু করা ছাড়া আর কোনো দাবিই কর্তৃপক্ষ পূরণ করেনি।
আরও পড়ুন: মেয়রের দুর্নীতির অভিযোগ তুলে ৫ কাউন্সিলরের সংবাদ সম্মেলন
এছাড়া বাংলাদেশের শ্রম আইনে অনুমোদিত শ্রমিক ইউনিয়ন গঠন করতে গিয়ে আমাদের সন্ত্রাসী হামলার স্বীকার হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়েছে। শ্রমিকদের দাবি দাওয়ার কথা উত্থাপন করায় হুমকি-হয়রানির স্বীকার হতে হয়েছে। ৮ ঘণ্টার বদলে ১২ ঘণ্টা কর্মঘণ্টা চলছে, ২০১৮ সালের গেজেটঘোষিত বেতনস্কেল ২০২৩ সালে এসেও চালু করা হয়নি।
লিখিত বক্তব্যে আরও বলা হয়, ২০১৮ সালে টেক্সটাইল খাতের জন্য সরকারি গেজেটে একটি বেতনস্কেল ঘোষণা করা হয় যা ২০২৩ সালে এসেও সোনারগাঁও টেক্সটাইল কর্তৃপক্ষ বাস্তবায়ন করেনি। সরকারের ঘোষিত ন্যূনতম মজুরি বাস্তবায়ন না করা বাংলাদেশ শ্রম আইন ২০০৬ সালের ১৪৯(১) ধারার সুস্পষ্ট লক্ষণ। কর্তৃপক্ষের এই বেআইনি আচরণ নিয়ে আমরা কলকারখানা পরিদর্শন অধিদপ্তর, জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসনসহ সবার কাছে ৩ বছর ধরে লিখিত অভিযোগ জানিয়ে আসলেও এখন পর্যন্ত এবিষয়ে কোনো পক্ষ থেকেই কার্যকর পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি এবং আমাদের বেতনস্কেল বাস্তবায়ন হয়নি।
আরও পড়ুন: বরিশালে ইউএনওর বিরুদ্ধে বীর মুক্তিযোদ্ধার স্থাপনা উচ্ছেদের অভিযোগ
বর্তমান দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির বাজারে এই নিম্নমানের বেতন নিয়ে আমাদের জীবনযাপন মুশকিল, পাঁচ বছর আগের সরকারঘোষিত বেতনস্কেলও বর্তমান বাজারের জন্য মোটেই যথেষ্ট নয়। তবুও মালিক শ্রমিকদের এতটুকু বেতন বৃদ্ধি করতেও রাজি নয়। এ বছরেও আমরা সরকারঘোষিত ন্যূনতম মজুরি বাস্তবাযনের কোনো আশ্বাস পাচ্ছি না। যদি জানুয়ারি মাসের মধ্যে আমাদের বেতনস্কেল বাড়ানো না হয় তাহলে আমাদের সামনে কঠোর আন্দোলনে যাওয়া ছাড়া আর কোনো রাস্তা খোলা থাকবে না। তাই ফেব্রুয়ারির ১০ তারিখের মধ্যে আমাদের ২০১৮ সালের বেতনস্কেলে বেতন দিতে হবে। আর তা না হলে শ্রমিকদের রাজপথে অবস্থান নেওয়া ছাড়া আর কোনো রাস্তা খোলা থাকবে না।
আরও পড়ুন: বরিশালে সাবেক ইউপি সদস্যের বাড়ি থেকে মা-পুত্রবধূর মরদেহ উদ্ধার
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন সোনারগাঁও টেক্সটাইল লিমিটেডের শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়নের (প্রস্তাবিত) সভাপতি গাজী মো. বেল্লাল হোসেন, সাধারণ সম্পাদক মো. নুরুল হক, সহ-সাধারণ সম্পাদক মাসুম গাজী, কোষাধ্যক্ষ মোশারফ হোসেন, মহিলা সম্পাদিকা খুকুমণি, ইউনিয়নের উপদেষ্টা ও বাসদ বরিশাল জেলা শাখার সদস্য সচিব ডা. মনীষা চক্রবর্তী প্রমুখ।
জেএস/জিকেএস