ঠাকুরগাঁওয়ে টাঙ্গন নদীতে পুণ্যার্থীদের ঢল

ঠাকুরগাঁওয়ে শুরু হয়েছে তিন দিনব্যাপী বারুণী মেলা। এ উপলক্ষে টাঙ্গন নদীতে স্নান করতে ভিড় করছেন সনাতন ধর্মাবলম্বীরা।
সোমবার (২০ মার্চ) সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে সদর উপজেলার আকচা ইউনিয়নের বাগপুর এলাকার টাঙ্গন নদীর দুই পাড়ে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের এ উৎসব শুরু হয়। ভোরের আলো ফুটতে না ফুটতেই পুণ্যার্থী ও সাধু-সন্ন্যাসীরা টাঙনের তীরে জড়ো হন। দল বেঁধে তারা নদীর উত্তর-দক্ষিণমুখী স্রোতে স্নান শুরু করেন। বুধবার (২২ মার্চ) বিকেল পর্যন্ত চলবে এই উৎসব।
সনাতন ধর্মমতে জনা যায়, চৈত্রের মধুকৃষ্ণা ত্রিদশী তিথির এই তিনদিনে নদীর উত্তর-দক্ষিণমুখী স্রোতে স্নান করলে পাপমোচন হয়। দেহ-মন পরিশুদ্ধ করতে অনেকে মাথার চুলও বিসর্জন দেন। সেই সঙ্গে পূজার্চনা করেন। স্নানমন্ত্র পাঠ করে হাতে বেলপাতা, ফুল, ধান, দূর্বাঘাস, হরীতকী, কলা ইত্যাদি অর্পণের মাধ্যমে স্নান সম্পন্ন করেন তারা।
নিজেকে পাপমুক্ত করতে, স্বর্গীয় বাবা-মা, আত্মীয়স্বজনের মঙ্গল কামনায় নদীর দুই পাড়ে বসেছে মেলা। এতে অংশ নিয়েছেন জেলাসহ আশপাশের হাজারও সনাতন ধর্মাবলম্বী। জেলার বিভিন্ন এলাকার নর সুন্দররাও (নাপিত) এখানে আসেন।
স্থানীয়রা বলছেন, প্রায় ১২৫ বছর ধরে টাঙ্গন নদীর উত্তর-দক্ষিণ স্রোতে মধুকৃষ্ণ ত্রয়োদশী তিথি উপলক্ষে স্নানোৎসব পালন করে আসছেন সনাতন ধর্মালম্বীরা।
হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের মতে, যে স্থানে নদীর প্রবাহ সোজা উত্তরমুখী সেই স্থানে স্নান করা পুণ্যের কাজ। তাদের ধর্মীয় বিধান মতে, জীবন-মরণে স্নান হলো হিন্দুদের এক অখণ্ড মহামন্ত্র। স্নানের পবিত্র ধারায় দেহ ও মনকে ধন্য করা এক আত্মীক সাধনা।
এদিকে প্রতিবছরের মতো এবারও স্থানীয় মন্দির কমিটি বারুণী মেলা ও স্নান উৎসব উপলক্ষে ঐতিহ্যবাহী মেলার আয়োজন করেছে। তিন দিনব্যাপী চলবে এ মেলা। এতে খাবার, ছোটদের খেলনাসহ নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের পসরা নিয়ে শতাধিক দোকান বসেছে।
দিনাজপুর জেলা থেকে আসা গোপি নাথ বলেন, আমি এবার প্রথম স্নান উৎসবে এসেছি। কয়েক দিন হলো বাবা মারা গেছেন। তার সর্গবাসের আশায় স্নানসহ মাথার চুল বিসর্জন দিয়েছি।
হরিপুর উপজেলার জাবর হাট এলাকার প্রতিমা রানী জানান, পরিবারের সবাই এসেছেন পুণ্যস্নান করতে। এখানে স্নান করলে মন পরিশুদ্ধ হয়। স্নান করে পিতামাতার জন্য প্রার্থনা করেছি।
নরসুন্দর বিনয় চন্দ্র বলেন, প্রতি বছর এখানে আসি। চুল দাড়ি কাটার উপকরণ নিয়ে এবারও আমার মতো অনেকে এখানে এসেছেন।
মন্দিরের পুরোহিত দয়াল চক্রবর্তী জানান, বিশুদ্ধ পঞ্জিকা মতে তিথি নক্ষত্রের সঙ্গে মিলিয়ে নির্দিষ্ট সময়ব্যাপী সনাতন ধর্মাবলম্বী ভক্তরা বৈদিক মন্ত্র পাঠ করে নদীর পুণ্য সলিলে অবগাহন করেন এই দিনে।
মন্দির কমিটির সভাপতি প্রভাত কুমার রায় বলেন, দূর-দূরান্ত থেকে আগত সাধু সাধকদের থাকা ও প্রসাদ গ্রহনের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। কমিটির সফল ব্যবস্থাপনায় উৎসব জমে উঠেছে।
তানভীর হাসান তানু/এফএ/এএসএম