মাদারীপুর
অর্ধেকে নেমেছে ব্রয়লার মুরগির খামার

খাবার, বিদ্যুৎ ও বাচ্চার দাম বৃদ্ধিসহ নানা কারণে মাদারীপুরের প্রায় অর্ধেক ব্রয়লার মুরগির খামার বন্ধ হয়ে গেছে। এতে ব্যাপক লোকসানে পড়েছেন খামারিরা। তবে খামার বন্ধের সঠিক হিসাব নেই জেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তরের কাছে।
মাদারীপুর জেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তর থেকে জানা গেছে, নিবন্ধিত ব্রয়লার মুরগির খামার ২৪ আর অনিবন্ধিত খামার আছে ৩১১টি। লেয়ার মুরগির খামার নিবন্ধিত আট আর অনিবন্ধিত ৫৯টি। এছাড়া সোনালী মুরগির নিবন্ধিত খামার ৯টি ও অনিবন্ধিত ৭৪টি।
আরও পড়ুন- পুলিশ-প্রশাসনকে ‘ফাঁকি’ দিয়ে সড়কে ফিটনেসবিহীন বাস, বাড়ছে দুর্ঘটনা
বিভিন্ন খামারিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ৫০ কেজির এক বস্তা খাবার (ফিড) আগে এক হাজার ৮০০ টাকা থাকলেও এখনতা তিন হাজার ৬০০ টাকায় কিনতে হচ্ছে। ব্রয়লার মুরগির বাচ্চা আগে প্রকারভেদে ১৮ থেকে ২০ টাকা হলেও বর্তমানে দাম বেড়ে প্রকারভেদে তা ৬০ থেকে ৬৫ টাকা পর্যন্ত হয়েছে। সেইসঙ্গে বেড়েছে বিদ্যুতের দাম, বেড়েছে পরিবহন খরচও। এছাড়াও বাজার মনিটরিংয়ের ব্যবস্থা না থাকায় গচ্ছা দিতে হচ্ছে খামারিদের।
প্রায় সময় মেডিসিন ও টিকাও সরকারিভাবে পাওয়া যায় না। সেগুলোও বাইরে থেকে দ্বিগুণ দামে কিনতে হচ্ছে। এসব কারণেই মাদারীপুরে ব্রয়লার মুরগির খামার প্রায় অর্ধেকে নেমে এসেছে।
মাদারীপুর সদর উপজেলার মস্তফাপুর ইউনিয়নের জয়াইর এলাকার খামারি হেমায়েত হোসেন হাওলাদার বলেন, ব্রয়লার মুরগির চারটি খামার ছিল। হঠাৎ করে ফিডের দাম দ্বিগুণ ও বাচ্চার দাম বেড়ে যাওয়ায় তিনটি খামার এখন বন্ধ আছে। একটি খামার চালু থাকলেও সেটি যেকোনো সময় বন্ধ হতে পারে।
মাদারীপুর ডাসার উপজেলার কাজীবাকাই ইউনিয়নের মাইজপাড়া গ্রামের খামারি আমির হোসেন লিটন ফকির বলেন, কাজীবাকাই ইউনিয়নে ১০০টির মতো খামার ছিল। বর্তমানে ৭০টি বন্ধ হয়ে গেছে। আমার নিজের সাতটি খামারের মধ্যে তিনটি বন্ধ হয়ে গেছে। মুরগির খাবার, বাচ্চার দাম বেশি। বাচ্চাগুলো ঢাকার বিভিন্ন কোম্পানি থেকে কিনতে হয়। পরিবহন খরচও বেড়েছে।
আরও পড়ুন- মাদারীপুরে জনপ্রিয় হচ্ছে ভ্রাম্যমাণ মধুচাষ
তিনি বলেন, সরকারিভাবে বাজার মনিটরিং না থাকায় এসব হচ্ছে। এছাড়া সরকারিভাবে মুরগির বাচ্চার দাম নির্ধারণ থাকলেও আমাদের কিছুটা হলেও উপকার হতো। আমি প্রায় ৩০ লাখ টাকা লোকসানে পড়েছি।
মাদারীপুর সদর উপজেলার মস্তফাপুর ইউনিয়নের মস্তফাপুর এলাকার খামারি ফেরদৌস হাওলাদার বলেন, ২০০১ সালে এ ব্যবসা শুরু করি। আস্তে আস্তে দুটি খামার গড়ে তুলি। ফরিদপুরের ভিক্টর হ্যাচারি থেকে এক দিনের কক মুরগির বাচ্চা এবং যশোরের বিভিন্ন হ্যাচারি থেকে এক দিনের ব্রয়লারের বাচ্চা কিনে আনতাম। বাচ্চাগুলো বড় হলে প্রতিমাসে বিক্রি করে অনেক লাভ হতো। এক সময় আমার ফার্মের মুরগি স্থানীয় বাজারের চাহিদা পূরণ করে ঢাকাতেও পাঠিয়েছি। এই কাজের জন্য সরকারিভাবে চারবার পুরস্কারও পেয়েছি। আজ দুটি ফার্ম বন্ধ করে দিতে হয়েছে। কারণ যেভাবে সবকিছুর দাম বেড়েছে তাতে করে ব্যবসা আর টিকিয়ে রাখা সম্ভব হয়নি। এতে ৪০ লাখের বেশি ক্ষতি হয়েছে।
মাদারীপুর পুরানবাজারের মুরগি বিক্রেতা মের্সাস পলি এন্টারপ্রাইজের মালিক রনি খান বলেন, আমাদের কী করার আছে? বেশি দামে মুরগি কিনে বেশি দামে বিক্রি করছি। ব্রয়লার মুরগি ২৬০ টাকা কেজি, লেয়ার ৩২০ ও সোনালী ৩৩০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে।
আরও পড়ুন- ক্রেতাদের নাগালের বাইরে তরমুজ
শিবচর উপজেলার সরকারি হাঁস-মুরগি খামারের প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা হরিষ চন্দ্র বোস বলেন, মুরগির খাবারের দাম বেড়েছে। পল্ট্রি ফিড তৈরি করতে ভুট্টার প্রয়োজন হয়। দেশে ভুট্টা যা উৎপাদন হয়, তা পর্যাপ্ত নয়। ব্রাজিল, রাশিয়া থেকে ভুট্টা আসতো। যুদ্ধের কারণে ভুট্টা না আসায় ফিডের দাম বেড়েছে। আর এ কারণেই হয়তো খামারিরা ব্যবসা বন্ধ করে দিচ্ছেন।
মাদারীপুরের সরকারি হাস-মুরগির খামারের উপ-সহকারী প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মো. মাহফুজুল আলম বলেন, বাজারজাতকরণে সমস্যা, প্রশিক্ষণের অভাবের পাশাপাশি মুরগির খাবারের দাম বৃদ্ধির কারণেই খামারিদের সমস্যা দেখা দিয়েছে। মাঠ পর্যায়ে সচেতনতা বৃদ্ধির পাশাপাশি খামারি উদ্যোক্তাদের প্রশিক্ষণ বাড়াতে হবে। খামারিরা সমস্যাগুলো নিয়ে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন না। তারা যদি যোগাযোগ করতেন তাহলে অনেক সমস্যার সমাধান সহজ হতো।
মাদারীপুর সদর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. দিবস রঞ্জণ বাক্চী বলেন, ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের কারণে পল্ট্রি খাবারের দাম বেড়েছে। এছাড়া অনেক খামারি আছেন যারা প্রশিক্ষণ নেন না। এসব কারণেই পল্ট্রি ব্যবসা কমে যাচ্ছে।
এফএ/জিকেএস