প্রতিশোধ নিতে সাবেক স্ত্রীকে হত্যা, নিখোঁজ জিডি সূত্রে খুললো জট

প্রবাসে থাকার সময় পাঠানো টাকা আত্মসাৎ এবং দুই সন্তান রেখে অন্যকে বিয়ে করার প্রতিশোধ নিতে সাবেক স্ত্রীকে অপহরণ করে হত্যার পর মরদেহ নদীতে ফেলে দেন এক ব্যক্তি ও তার বড় ভাই। এ ঘটনায় করা নিখোঁজ ডায়েরির অনুসন্ধান করতে গিয়ে খুন হওয়া নারীর সাবেক স্বামী ও তার বড় ভাইকে গ্রেফতারের পর মূল রহস্য উদঘাটন করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।
গ্রেফতার আসামিরা শুক্রবার (৩১ মার্চ) বিকেলে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। সেখানে তারা হত্যার কারণ ও নিজেদের দায় স্বীকার করেছেন।
হত্যাকাণ্ডের শিকার জনি আক্তার রুপা (২০) জামালপুরের মাদারগঞ্জ থানার ফাজিলপুর গ্রামের রবিউল ইসলামের মেয়ে।
গ্রেফতাররা হলেন রুপার প্রথম স্বামী মো. মোজাম্মেল হক (৩২) ও তার বড় ভাই মো. জহির আলী (৩৯)। তারা মাদারগঞ্জ থানার হিদাগারী গ্রামের মৃত সোহরাব প্রামাণিকের ছেলে। তাদের গত ৩০ মার্চ সকালে গাজীপুর মহানগরীর বাসন থানার চান্দনা চৌরাস্তা এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়।
শনিবার (১ এপ্রিল) সকালে এ তথ্য জানিয়েছেন পিবিআই গাজীপুরের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মাকছুদের রহমান।
তিনি জানান, ২০১৫ সালে মো. মোজাম্মেল হকের সঙ্গে জনি আক্তার রুপার বিয়ে হয়। এরপর তাদের দাম্পত্য জীবনে দুই ছেলে জন্মগ্রহণ করে। পারিবারিক ও আর্থিক অভাব অনটনের কারণে মোজাম্মেল ২০১৯ সালে মালয়েশিয়া যান। মোজাম্মেল দীর্ঘ চার বছর মালয়েশিয়া থাকাকালে শাশুড়ির ব্যাংক অ্যাকাউন্টে প্রায় ৯ লাখ টাকা পাঠান। দেশে ফিরে মোজাম্মেল জানতে পারেন রুপা পরকীয়ার সম্পর্কে জড়িয়ে গোপনে বিয়ে করেছেন এবং মোজাম্মেলের সংসার ত্যাগ করেছেন। তার দুই সন্তানকে রেখে গাজীপুরের কালীগঞ্জ থানার বালিগাঁও গ্রামে বসবাস করছেন।
পুলিশ সুপার জানান, দেশে ফেরার পর মোজাম্মেল তার সাবেক স্ত্রী রুপা এবং তার মায়ের কাছে টাকার হিসাব চাইলে তারা কোনো হিসাব দিতে পারেননি। এরপর পারিবারিক মীমাংসায় তারা মোজাম্মেলকে ২ লাখ ২০ হাজার টাকা ফেরত দেন। কিন্তু বাকি টাকা ফেরত দেননি। রুপা যেহেতু যেহেতু মোজাম্মেলের ব্যাপক ক্ষতি করেছেন, তাই যেভাবে হোক তিনি প্রতিশোধ নিতে পরিকল্পনা করেন। সে অনুযায়ী মোজাম্মেল গত ৬ জানুয়ারি মোবাইলফোনের মাধ্যমে রুপাকে তাদের দুই সন্তানদের বিষয়ে আলোচনা করার জন্য গ্রামে আসতে অনুরোধ করেন। তার অনুরোধে রুপা তার দ্বিতীয় স্বামীকে কিছু না জানিয়ে ৬ জানুয়ারি কালীগঞ্জের তার দ্বিতীয় স্বামীর ভাড়া বাড়ি থেকে মোজাম্মেলের গ্রামের বাড়ির উদ্দেশ্যে রওয়ানা হন।
পুলিশের এ কর্মকর্তা আরও জানান, ওইদিন বিকেলে রুপা মাদারগঞ্জ পৌঁছার পর মোজাম্মেল তাকে বাসস্ট্যান্ড থেকে নিয়ে বগুড়ার সারিয়াকান্দি উপজেলার যমুনা নদীর চরে এক বন্ধুর বাসায় বসে আলোচনা করার কথা বলে নিয়ে যান। একই সময়ে তার বড় ভাই জহির আলীকে একটি নৌকা নিয়ে মাদারগঞ্জ থানার জামথৈল ঘাটে আসতে বলেন। পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী তারা নৌকায় করে যমুনার চরে যান। সেখানে প্রথমে রুপাকে তার ব্যবহৃত ওড়না দিয়ে হাত-পা বেঁধে শ্বাসরোধ করেন। এরপর মোজাম্মেল তার সঙ্গে আনা দা দিয়ে জবাই করে মৃত্যু নিশ্চিত করে মরদেহ বস্তায় ভরে নদীতে ফেলে দেন।
এদিকে, ঘটনার পর রুপার দ্বিতীয় স্বামী মো. উজ্জল মিয়া স্ত্রীর কোনো খোঁজ না পেয়ে গাজীপুরের কালিগঞ্জ থানায় গত ২৪ জানুয়ারি সাধারণ ডায়েরি করেন। পরে রুপার পরিবার জিডির বিষয়টি অনুসন্ধানের জন্য পিবিআইকে অনুরোধ করে। পিবিআই অনুসন্ধানকালে ঘটনার দুই মাস ২৪ দিন পর রুপাকে হত্যা করা হয়েছে মর্মে প্রাথমিক প্রমাণ পায়। পরে রুপার দ্বিতীয় স্বামী বাদী হয়ে ২৯ মার্চ কালীগঞ্জ থানায় হত্যা মামলা করে।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা উপ-পরিদর্শক সনজিৎ বিশ্বাস বলেন, মামলার পর পিবিআই হেডকোয়ার্টার্স তা আমলে নিয়ে পিবিআই গাজীপুরকে তদন্তের জন্য নির্দেশ দেয়। তদ্ন্তকালে পিবিআইয়ের একটি দল ৩০ মার্চ আসামিদের গ্রেফতার করে। পরে তাদের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী ভুক্তভোগীর মরদেহ উদ্ধারের চেষ্টা করা হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, গ্রেফতার আসামিরা শুক্রবার (৩১ মার্চ) আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। পরে তাদের আদালতের নির্দেশে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
এমআরআর/এমএস