‘৩০০-৫০০ টাকা আয়ে আর দিন চলে না’

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক বগুড়া
প্রকাশিত: ০৮:৫৭ পিএম, ৩১ মে ২০২৩

‘চাল, ডাল, আটা, শাকসবজি এমনকি লবণ-চিনির দামও বেড়েছে। শুধু নিত্যপণ্য নয়, সবকিছুর দামই বেশি। অথচ জুতা পালিশ আর সেলাই করার মজুরি আগেরটাই রয়েছে। যেভাবে সব জিনিসের দাম বাড়ছে তাতে সংসার চালানো নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছি।’

বগুড়া শহরের নামাজগড়ে ফুটপাতে বসে জুতায় সেলাই দিতে দিতে কথাগুলো বলছিলেন স্বাধীন দেবনাথ। তিনি পেশায় একজন চর্মকার।

দুই ছেলে, এক মেয়ে ও স্ত্রীসহ পাঁচ সদস্যের পরিবার স্বাধীন দেবনাথের। দুই ছেলেই কলেজে পড়ছে। মেয়ে পড়ে স্কুলে। স্ত্রীর ও তার শরীরে বাসা বেঁধে আছে গুপ্তঘাতক ডায়াবেটিস।

‘৩০০-৫০০ টাকা আয়ে আর দিন চলে না’

স্বাধীন দেবনাথ বলেন, ‘সন্তানদের বড় করার ইচ্ছা রয়েছে। তবে সবকিছুর দাম এত বেড়েছে যে আমার পক্ষে আর সংসার চালানো সম্ভব হচ্ছে না। প্রতিমাসে অন্তত ১০ হাজার টাকা বাড়তি খরচ আসছে। এজন্য ছেলেরা মাঝে মধ্যে কিছু টাকা আয় করে বাড়িতে দেয়। এর মধ্যে ওষুধপাতির খরচতো আছেই।’

কলোনি বাজার এলাকায় প্রায় অর্ধযুগ ধরে চর্মকার পেশায় রয়েছেন মিলন শাহ। তিন সদস্যের পরিবার তার। মিলন শাহ বলেন, ‘বাজারে সবকিছুর দামই প্রায় দ্বিগুণ। আগে পরিবারের জন্য চাল কিনতে মাসে খরচ হতো দেড় হাজার টাকার মতো। এখন সেখানে খরচ হয় প্রায় আড়াই হাজার টাকা। এই যে চালে হাজার টাকা বাড়তি। এই টাকাতো মাস গেলে আয় করতে পারি না। তেল, লবণের হিসাব বাদই দিলাম। এরমধ্যে মাছ-মাংসের কথা চিন্তা করা স্বপ্নছাড়া কিছুই না। শেষ দেড়মাস আগে ঈদে বাড়িতে গরুর মাংস রান্না হয়েছিল। তাও সবার জন্য পিস হিসেব করে। দাম বাড়ার আগে প্রতি সপ্তাহে ব্রয়লার মুরগি কিনতে পারতাম, এখন মাসে একবার কিনতে পারি।’

‘৩০০-৫০০ টাকা আয়ে আর দিন চলে না’

বগুড়া সদর থানা কোয়ার্টারের সামনে সকাল ৮টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত জুতা সেলাই-পালিশের কাজ করেন ৬২ বছর বয়সী গোলাপ রবিদাস। একই জায়গায় তার মতো আরও ১২-১৫ জন এ পেশায় জড়িত।

গোলাপ রবিদাস জাগো নিউজকে বলেন, ‘ছাত্ররা আমাদের কাছ থেকে জুতা সেলাই করে নিয়ে বড় অফিসার হয়। তবে আমাদের ভাগ্যের পরিবর্তন কখনো হয়নি। রোদ-বৃষ্টি আবহওয়া যেমনই থাকুক না কেন, ফুটপাতে বসে দিন শেষে ৩০০-৫০০ টাকা আয় নিয়ে বাড়ি ফেরাই আমাদের নিয়তি। এ টাকায় আর দিন চলে না।’

‘৩০০-৫০০ টাকা আয়ে আর দিন চলে না’

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বগুড়া শহরের অন্তত ২০টি স্থানে শতাধিক মানুষ চর্মকার পেশায় জড়িত। ভ্রাম্যমাণ চর্মকারের সংখ্যা অর্ধশত। তাদের বেশিরভাগই ভূমিহীন।

চর্মকারদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রতিদিন ১০-১২ ঘণ্টা কাজ করে আয় হয় মাত্র ৩০০-৫০০ টাকা। সামান্য এ আয়ে পরিবারের ব্যয়ভার মেটাতে তাদের হিমশিম খেতে হয়। এজন্য সংকট-শঙ্কায় দিন কাটে তাদের।

‘৩০০-৫০০ টাকা আয়ে আর দিন চলে না’

শহরের হাকির মোড়ে বসেন চর্মকার রবি সাকিদার। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে কাজ করি। সে তুলনায় আয় কম। সাপ্তাহিক ছুটি ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের দিনে কাজকাম বন্ধ থাকে। অনাহার-অর্ধাহারে কেটে যাচ্ছে জীবন।’

এ বিষয়ে বগুড়া সমাজসেবা কার্যালয়ের উপপরিচালক কাওছার রহমান বলেন, চর্মকারসহ পিছিয়ে পড়া প্রাচীন পেশার মানুষদের মধ্যে যাদের বয়স পঞ্চাশের বেশি তাদের প্রতিমাসে ৫০০ টাকা করে সরকারি ভাতা দেওয়া হয়। তাদের সন্তানদের জন্য পৃথক উপবৃত্তির ব্যবস্থা আছে। যারা তরুণ-তরুণী তাদের জন্য বিভিন্ন প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা রয়েছে।’

এসআর/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।