নতুন বই না পেয়ে পুরাতনেই ঝুঁকছে শিক্ষার্থীরা

মো. কামরুজ্জামান মিন্টু মো. কামরুজ্জামান মিন্টু , জেলা প্রতিনিধি, ময়মনসিংহ
প্রকাশিত: ১১:৪৩ এএম, ২৫ জানুয়ারি ২০২৫

নতুন বছর শুরুর পর এক মাস অতিবাহিত হতে চললেও ময়মনসিংহে বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থী এখনো হাতে পায়নি পাঠ্যবই। ফলে পড়া এগিয়ে নিতে বাধ্য হয়ে কম্পিউটারের দোকান থেকে প্রিন্ট আর ফটোকপি করছে অনেকে। তবে টাকার অভাবে সেটাও পারছে না অনেক শিক্ষার্থী।

তবে শিক্ষকরা বলছেন, যেসব নতুন বই পাওয়া গেছে সেগুলোতে ক্লাসে পাঠদানের পাশাপাশি পুরাতন বই দেখে পড়াশোনা চালানো হচ্ছে। এরমধ্যে বার্ষিক খেলাধুলার কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। ফেব্রুয়ারি মাসের মধ্যেই সব বই পাওয়া যাবে।

শহরের দূর্গাবাড়ি এলাকায় কম্পিউটার প্রিন্ট আর ফটোকপির দোকানগুলোতে গিয়ে জানা যায়, অনেক শিক্ষার্থীর অভিভাবকসহ কোচিং সেন্টারের শিক্ষকরা এসে নতুন বইয়ের পিডিএফ প্রিন্ট করে নিচ্ছেন। কেউ কেউ আবার টাকা বাঁচাতে প্রিন্ট করা পৃষ্ঠা ফটোকপিও করছেন। এরপর সেগুলো পড়ছে শিক্ষার্থীরা।

রিয়াদ নামে কম্পিউটারের দোকানের এক কর্মচারী বলেন, বইয়ের এক পাতার দুই পৃষ্ঠায় প্রিন্ট বাবদ তিন টাকা নিচ্ছি। মূলত যারা না পাওয়া বইগুলো আগেই পড়তে চায়, তারাই প্রিন্ট করে নিয়ে যাচ্ছে। অনেকে ওই পাতাগুলো ফটোকপিও করছে।

বিদ্যাময়ী সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে চতুর্থ থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করানো হয়। পহেলা জানুয়ারি শুধুমাত্র দশম শ্রেণির বই পেয়ে বিতরণ করা হয়েছে। এরপর বিভিন্ন সময় কিছু বই এসেছে। এখন পর্যন্ত বিভিন্ন শ্রেণির বই আসেনি। শিক্ষকরা পুরাতন বই দেখে পাঠদান করছেন।

নতুন বই না পেয়ে পুরাতনেই ঝুঁকছে শিক্ষার্থীরা

একই অবস্থা সিটি কলেজিয়েট স্কুলের। এই বিদ্যালয়ে ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করানো হয়। বিদ্যালয়টিতে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৩১৪ জন। কোনো শ্রেণিতে বাংলা, ইংরেজি, আবার কোনো শ্রেণির জন্য শুধুমাত্র গণিত বই এসেছে। ফলে বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা পুরাতন বই পড়াচ্ছেন।

একই অবস্থা হলি ফ্যামিলি স্কুল, ময়মনসিংহ জুট মিলস্ আদর্শ বিদ্যাপীঠসহ অন্যান্য স্কুলগুলোতে।

হলি ফ্যামিলি স্কুলে ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়াশোনা করে আন্দালিব। বই পেয়েছে কি না জানতে চাইলে বলে, তিনটা বই পেয়েছি। অন্যান্য বইগুলো না পাওয়ায় পড়তে পারছি না। এভাবে সময় যেতে থাকলে পড়ালেখায় পিছিয়ে যাবো। এজন্য পরিবারের সদস্যরা পুরোনো বই পরিচিতজনদের কাছে খোঁজাখুঁজি করছে৷ কিন্তু পাওয়া যাচ্ছে না।

একই স্কুলের চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী মোস্তকিম বিল্লাহ ও পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী রফিকুল হক জানায়, তারা কেউ একটি বইও পায়নি। আগের বছরের শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে কয়েকটি বই সংগ্রহ করে পড়ছে।

ময়মনসিংহ জুট মিলস্ আদর্শ বিদ্যাপীঠের অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী আকাশ জানায়, তার বাবা পিডিএফ প্রিন্ট করে স্পাইরাল করে বাধিয়ে এনে দিয়েছে। এখন পড়তে অসুবিধা হচ্ছে না।

হলি ফ্যামিলি স্কুলের চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী মোস্তকিম বিল্লাহর মা শিলা রায় বলেন, আমার ছেলে পড়ালেখায় খুব আগ্রহী। সরকার বই দিতে দেরি করছে। ফলে বইয়ের অভাবে বাচ্চা পড়ালেখা করতে পারছে না। পুরাতন বই সংগ্রহ করে পড়ালেখা করাচ্ছি।

হলি ফ্যামিলি স্কুলের সহকারী শিক্ষক আমিনুল ইসলাম বলেন, যে বইগুলো পেয়েছি সেগুলোই শিক্ষার্থীদের পড়ানো হচ্ছে। তবে অনেক শিক্ষার্থীদের অভিভাবকরা পুরাতন বই সংগ্রহ করেছে। সেগুলোও শিক্ষার্থীরা পড়ছে। আমরা চাচ্ছি, সব নতুন বই দ্রুত চলে আসুক। কারণ নতুন বই হাতে পেলে ছোটো ছোটো ছেলে-মেয়েরা খুশি হয়, আনন্দ নিয়ে পড়ালেখা করে।

বিদ্যাময়ী সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক লুৎফুন নাহার বলেন, যে বইগুলো এসেছে সেগুলো পড়ানো হচ্ছে। পাশাপাশি চলছে খেলাধুলা। তবে পাঠ্যবইয়ের অনলাইন ভার্সনের পিডিএফের প্রিন্ট কপির প্রতি ঝুঁকছে বিভিন্ন কোচিংয়ের শিক্ষকরা। তারা প্রিন্ট কপি দেখেই পড়াচ্ছে।

সিটি কলেজিয়েট স্কুলের প্রধান শিক্ষক মো. আব্দুল মান্নান বলেন, অনেক ক্লাসে বাংলা, ইংরেজি কিংবা গণিত বইও পাইনি। এমতাবস্থায় শিক্ষকরা পাঠদান করতে পারছেন না। কিছু শিক্ষক পুরাতন বই পড়াচ্ছেন।

নতুন বই না পেয়ে পুরাতনেই ঝুঁকছে শিক্ষার্থীরা

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ময়মনসিংহে সরকারি-বেসরকারি মিলে সাড়ে তিন হাজার প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সাড়ে সাত লাখ শিক্ষার্থী রয়েছে। এর মধ্যে চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী দুই লাখ ৭১ হাজার ৭২৫ জন। বাকিরা প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণির। চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের কোনো বই এখনও আসেনি।

জেলা শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, এবার জেলায় ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত ৮৯ লাখ বইয়ের চাহিদা ছিল। এরমধ্যে এখন পর্যন্ত ১৯ লাখ বই পাওয়া গেছে। সেগুলো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে।

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মিজানুর রহমান খান বলেন, বই পরিমার্জন ও ছাপার কাজে কিছুটা দেরি হওয়ায় বই সংকট দেখা দিয়েছে। তবে দ্রুত সময়ের মধ্যে বাকি বইগুলো চলে আসবে বলে জানতে পেরেছি। তখন সব শিক্ষার্থীকে বই দেওয়া হবে।

জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মোহছিনা খাতুন বলেন, পহেলা জানুয়ারিসহ এরপর থেকে যখনই বই আসছে বিতরণ করা হচ্ছে। আশা করছি সব বই কয়েকদিনের মধ্যে পাওয়া যাবে এবং সব শিক্ষার্থীরা নতুন বই পাবে।

ময়মনসিংহ জেলা প্রশাসক মুফিদুল আলম বলেন, চাহিদার তুলনায় বই কম এসেছে। অভিভাবক ও শিক্ষকদের প্রতি অনুরোধ, বইয়ের অজুহাতে যেন পাঠ কার্যক্রম থেকে কেউ বিরত না থাকে।

এফএ/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।