আদালতের নিষেধাজ্ঞা না মেনে ইসলামী ব্যাংকে বিশেষ পরীক্ষা আয়োজন
আদালতের নিষেধাজ্ঞা না মেনেই ইসলামী ব্যাংক ‘বিশেষ দক্ষতা মূল্যায়ন’ পরীক্ষা আয়োজন করতে যাচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
বুধবার (২৪ সেপ্টেম্বর) বিকেলে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের ইঞ্জিনিয়ার আবদুল খালেক মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে এই অভিযোগ তোলা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে ব্যাংকের কর্মকর্তাদের পক্ষে লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট আব্দুস সাত্তার।
তিনি বলেন, সম্প্রতি বিশেষ সক্ষমতা যাচাই পরীক্ষা নেওয়ার অজুহাতে ব্যাংকের প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার কর্মকর্তাকে ছাটাই করার পাঁয়তারা শুরু করেছে ইসলামী ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। অবৈধভাবে নিতে চাওয়া পরীক্ষার বিষয়টি চ্যালেঞ্জ করে রিট করা হলে হাইকোর্ট পরীক্ষা প্রক্রিয়া স্থগিত করে নিয়মিত প্রমোশন পরীক্ষা নেওয়ার আদেশ দিয়েছিলেন। এই বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংককে নির্দেশও দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু হাইকোর্টের এই আদেশ উপেক্ষা করে গত ২২ সেপ্টেম্বর ইসলামী ব্যাংক কর্তৃপক্ষ প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার কর্মকর্তার ‘স্পেশাল কম্পিটেন্সি অ্যাসেসমেন্ট’ পরীক্ষা নেওয়ার তারিখ ঘোষণা করে বাধ্যতামূলক অংশগ্রহণের জন্য নোটিশ জারি করেছে। নতুন তারিখ অনুযায়ী আগামী ২৭ সেপ্টেম্বর এই পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।
লিখিত বক্তব্যে আরও বলা হয়, ব্যাংকের নিয়মিত ও স্থায়ী কর্মচারী এবং সারাদেশের বিভিন্ন শাখা ও ইউনিটে নিষ্ঠা, সততা, একাগ্রতা, আন্তরিকতা ও দক্ষতার সঙ্গে ব্যাংকের উন্নয়ন ও অগ্রগতির জন্য কাজ করে যাচ্ছেন। কিন্তু সম্প্রতি ইসলামী ব্যাংক কর্তৃপক্ষ প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজারের মতো বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা যেমন—সিনিয়র অফিসার, অফিসার, অফিসার (ক্যাশ), জুনিয়র অফিসার (ক্যাশ), অ্যাসিস্ট্যান্ট অফিসার (ক্যাশ) প্রমুখের জন্য একটি ‘স্পেশাল কম্পিটেন্সি অ্যাসেসমেন্ট টেস্ট’ নেওয়ার উদ্যোগ গ্রহণ করেছে, যা দেশের সংবিধান, শ্রম আইন ২০০৬, সার্ভিস রুলস, বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রণীত ব্যাংকিং আইন ও বিধির পরিপন্থি।
ব্যাংকে ওই পদগুলোতে প্রায় আট হাজারের মতো কর্মকর্তা থাকলেও কেবল ২০১৭ সালের পরে নিয়োগপ্রাপ্তদের পরীক্ষা জন্য সার্কুলার প্রদান করা হয়েছে সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করা হয়।
লিখিত বক্তব্যে আরও বলা হয়, বলা হয়েছে যে, এই পরীক্ষায় অংশগ্রহণ বাধ্যতামূলক এবং এটি চাকরিতে বহাল থাকা ও ক্যারিয়ার উন্নতির পূর্বশর্ত। অনুপস্থিতদের আর কোনো সুযোগ দেওয়া হবে না। উক্ত ভাষ্য আমাদের মনে যুক্তিসংগত আশঙ্কা সৃষ্টি করছে যে, এ পরীক্ষার মূল উদ্দেশ্য কুমন্তব্যপূর্ণ এবং বৈষম্যমূলক। এটি সংবিধানের অনুচ্ছেদ ২৭, ২৯, ৩১ এ বর্ণিত সমতা, সমঅধিকার ও সমান কর্মসংস্থানের সুযোগ নীতির লঙ্ঘন। আমরা অতি দ্রুত এই পরীক্ষার সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করে নিয়মিত প্রমোশন পরীক্ষা আয়োজনের আবেদন জানাই।
ইসলামী ব্যাংক কর্তৃপক্ষ গত মঙ্গলবার এক দাপ্তরিক বিজ্ঞপ্তিতে ২৭ সেপ্টেম্বর কর্মীদের জন্য বিশেষ দক্ষতা মূল্যায়ন পরীক্ষা আয়োজনের বিষয়টি জানায়। ব্যাংকের অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান মানবসম্পদ কর্মকর্তা ড. এম কামাল উদ্দিন জাসিম সই করা বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, পরীক্ষা আগামী শনিবার বিকেল ৩টা ৩০ মিনিটে অনুষ্ঠিত হবে।
এর আগে গত গত ১৪ আগস্ট ব্যাংকের মানবসম্পদ বিভাগ ২৯ আগস্ট এই বিশেষ মূল্যায়ন পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা করেছিল। এর বিপরীতে গত ২১ আগস্ট ব্যাংকের কর্মকর্তারা এই পরীক্ষার বিপরীতে হাইকোর্টে রিট পিটিশন দাখিল করেন। এরপর ২৬ আগস্ট আদালত সেই রিট বিবেচনায় নিয়ে পরীক্ষা স্থগিতের নির্দেশ দেন। হাইকোর্টের নির্দেশের এক মাসেরও কম সময়ের মধ্যে পুনরায় পরীক্ষা আয়োজন নিয়ে এই বিজ্ঞপ্তি জারি করলো ইসলামী ব্যাংক কর্তৃপক্ষ।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. হাসান আলী চৌধুরী, রিট আবেদনকারীদের আইনজীবী কে. এম. সাইফুল ইসলাম ও অ্যাডভোকেট মুশফিকুল আবরার।
এমডিআইএইচ/ইএ/জিকেএস