বিশ্ববাজারে কমলেও দেশে বাড়ল ভোজ্যতেলের দাম


প্রকাশিত: ০৯:১২ পিএম, ২৬ জানুয়ারি ২০১৫

গত সপ্তাহে বাংলাদেশ অয়েল মিলস অ্যাসোসিয়েশন লিটারে ৪ টাকা দর বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয়। সেই সিদ্ধান্ত ধরে চলতি সপ্তাহে হঠাৎ ভোজ্যতেলের দাম লিটারে ৪ থেকে ৬ টাকা বাড়িয়েছে কোম্পানিগুলো।

ইতোমধ্যে খুচরা বাজারে বাড়তি এ দামে বিক্রি শুরু হয়েছে। তবে বাজারে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, কিছু কোম্পানি এর চেয়েও বেশি দামে বিক্রি করছে।   

জানা গেছে, খোলা ও বোতলজাত তেলের দাম গত মাসেই নতুন করে কমানো হয়। এক মাস পার না হতেই দাম বাড়ানোয় ক্রেতারা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। ক্রেতাদের প্রশ্নের মুখে পড়তে হচ্ছে দোকানিদের।

আন্তর্জাতিক বাজারে সয়াবিনের দাম কম থাকায় গত মাসে মিলগেটে প্রতি লিটারে ১৪ টাকা দাম কমিয়েছিল মিল মালিকদের সংগঠনটি। অথচ এ দামে পণ্য বিক্রির এক মাস পরই আবার দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হলো। যদিও আন্তর্জাতিক বাজারে এখনও সয়াবিন ও পাম তেলের দাম ক্রমান্বয়ে কমছে। এরই মধ্যে দেশের বাজারে ঘটল উল্টো ঘটনা।

তবে আন্তর্জাতিক বাজারে দাম কমার তথ্যের উল্টো দাবি মিল মালিক সংগঠনের নেতাদের। তারা দাবি করেন, আন্তর্জাতিক বাজারে ভোজ্যতেলের দাম বাড়তি। একই সঙ্গে আমদানি খরচ আগের চেয়ে বেশি পড়ছে। পাশাপাশি হরতাল-অবরোধের কারণে পরিবহন ব্যয় কয়েক গুণ বেশি হওয়ায় দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

জানুয়ারিতে প্রকাশিত বিশ্বব্যাংকের কমোডিটি মার্কেট আউটলুকেও ভোজ্যতেলের দাম কমেছে বলে উল্লেখ করা হয়। আন্তর্জাতিক বাজার বিষয়ক ওয়েবসাইট ইনডেক্স মুন্ডির তথ্য অনুযায়ী, এক বছরের মধ্যে গত মার্চে আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম সর্বোচ্চ পর্যায়ে থাকলেও এখন সর্বনিম্ন পর্যায়ে রয়েছে। মার্চে প্রতি টন সয়াবিন ছিল ৯২৮ ডলার (প্রতি লিটার ৭২ টাকা)। পর্যায়ক্রমে তা কমে গত ডিসেম্বরে লেনদেন হয়েছে ৭০৫ ডলারে (প্রতি লিটার ৫৫ টাকা)। একই সময়ের ব্যবধানে পাম তেলের দামও প্রতি টনে ২৩৬ ডলার (প্রতি লিটার ১৮ টাকা) কমেছে।

গতকাল সোমবার রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা যায়, সপ্তাহের ব্যবধানে কোম্পানিগুলো খোলা ও বোতলজাত সব ধরনের ভোজ্যতেলের দাম বাড়ানোয় খুচরায় বেড়েছে। সবচেয়ে বেশি বেড়েছে বাংলাদেশ এডিবল অয়েলের রূপচাঁদা ব্র্যান্ডের বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম। প্রতি লিটার ৬ টাকা বেড়ে ১১০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।এ ছাড়া মেঘনা গ্রুপের ফ্রেশ ব্র্যান্ড লিটারে ৬ টাকা বেড়ে গত দুই দিন ১০৮ টাকায় বিক্রি হয়েছে। গতকাল থেকে এ কোম্পানি সমিতির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ৪ টাকাই বাড়াবে বলে দোকানিদের জানিয়েছে। সিটি গ্রুপের তীর ব্র্যান্ডের তেল ৪ টাকা বেড়ে ১০৬ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। খোলা তেলের দামও একই হারে বেড়ে প্রতি লিটার সয়াবিন ১০২ থেকে ১০৪, পাম ৬৫ থেকে ৬৮ ও সুপার পাম ৭০ থেকে ৭২ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

খুচরা ব্যবসায়ীরা জানান, গত এক মাস কম দামে তেল বিক্রি করেছেন। এখন হঠাৎ দাম বাড়ানোয় বিক্রি করতে অনেক ঝামেলায় পড়তে হচ্ছে তাদের।

পাইকারি ভোজ্যতেল ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি গোলাম মাওলা বলেন, চাহিদার তুলনায় বাজারে তেলের সরবরাহ কম। সরবরাহ আদেশ অনুযায়ী কোম্পানিগুলোর মিলগেট থেকে তেল পাওয়া যাচ্ছে না। এখন প্রতি মণ সয়াবিন তেলের দাম বেড়েছে ৭০০ টাকা। পাম তেলের দামও মণে ২০০ টাকা বেড়েছে।

সিটি গ্রুপের মহাব্যবস্থাপক বিশ্বজিৎ সাহা বলেন, আন্তর্জাতিক বাজার থেকে প্রতি টন ৭০ থেকে ৮০ ডলার বাড়তি দামে কিনতে হয়েছে। একই সময়ে অবরোধের কারণে চার গুণ পরিবহন ব্যয় বেড়েছে। রাজনৈতিক এ অস্থিরতার কারণে বন্দরে জাহাজের পণ্য খালাসে দেরি হচ্ছে। এতে বাড়তি ব্যয় হচ্ছে। তাছাড়া আগামী মাস থেকে বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম বৃদ্ধির কথা রয়েছে। এসব বিষয় বিবেচনায় নিয়ে সমিতি ভোজ্যতেলের দাম লিটারে ৪ টাকা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে জানান তিনি।

মেঘনা গ্রুপের বিপণন পরিচালক আসিফ ইকবাল বলেন, অবরোধের কারণে অপরিশোধিত তেল মিলে সরবরাহ করা যাচ্ছে না। এ কারণে অন্য কোম্পানির কাছ থেকে অপরিশোধিত তেল বাড়তি দামে কিনে তা বাজার চাহিদা ঠিক রাখতে হয়েছে। এ কারণে সমিতি নতুন দাম নির্ধারণ করেছে।


(দৈনিক সমকালের সৌজন্যে)

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।