করোনায় বন্ধ ‘ডাইনিং বাস’ চালু হবে কবে?
জোবায়ের আহম্মেদ খান পেশায় একজন ব্যবসায়ী। সিলেটের এমসি কলেজ থেকে স্নাতক শেষ করেছেন। বয়স ৫০ এর কাছাকাছি। সিলেট মহানগরের ১৮ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা তিনি।
বন্ধু ও শুভাকাঙ্ক্ষীদের সঙ্গে আলোচনা করে খাবার দোকান করার সিদ্ধান্ত নেন। তবে ব্যতিক্রমী কিছু করার চিন্তা করেন তিনি। সেই ভাবনা থেকেই দ্বিতল বাসে রেস্টুরেন্ট করার সিদ্ধান্ত নেন। নাম দেন ‘ডাইনিং বাস’। এ কাজে তার সঙ্গে ছিলেন শুভাকাঙ্ক্ষী মুশফিক, জাহিদ উদ্দিন, আব্দুল কাইয়ুম ও রিয়াদ।
২০১২ সালে ডাইনিং বাস বানানোর কাজ শুরু। কাজ শেষ করতেই প্রায় এক বছর লেগে যায়। ২০১৩ সালের মে মাসে কাঙ্ক্ষিত ডাইনিং বাস রেস্টুরেন্ট চালু করতে সক্ষম হন জোবায়ের। সিলেট শহরের রায়নগরে মুক্তার খাকিরমানী এলাকায় নিজ বাড়িতে এ ডাইনিং বাস রেস্টুরেন্ট গড়ে তোলেন তিনি।
একসঙ্গে ১০০ জন মানুষ এ ডাইনিং বাসে বসে খাওয়া যায়। রেস্টুরেন্টটিতে মূলত ফাস্টফুড ও চাইনিজ খাবার বেশি বিক্রি হতো। তবে অর্ডার করলে সব ধরনের খাবারই পাওয়া যেতো। ব্যতিক্রমধর্মী এ রেস্টুরেন্ট নিয়ে এলাকার মানুষের আগ্রহের কমতি ছিল না। শুরু থেকেই বেশ সাড়া পাচ্ছিলেন জোবায়ের। প্রতিদিন তার রেস্টুরেন্টে অনেক ক্রেতা আসতেন।
ভালোই চলছিল সবকিছু। ২০২০ সালের মার্চে মহামারি করোনাভাইরাসের কারণে জোবায়েরের শখের ডাইনিং বাস বন্ধ হয়ে যায়। পরে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চালু করলেও কমে যায় ক্রেতা। ব্যবসায় লোকসান গুনতে গুনতে একপর্যায়ে ডাইনিং বাস বন্ধ করে দেন জোবায়ের। নানান প্রতিকূলতায় আর ঘুরে দাঁড়াতে পারেননি তিনি।
করোনা পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হলে ডাইনিং বাস রেস্টুরেন্টটি চালু করতে চান যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী মোহিম। তিনি শর্ত দেন, নাম পাল্টে তিনি রেস্টুরেন্টটি চালু করবেন। এতে বাধে বিপত্তি। জোবায়ের চেয়েছিলেন তার শখের রেস্টুরেন্টটি ‘ডাইনিং বাস’ নামেই চালু হোক। তবে তাতে নারাজ মোহিম। একপর্যায়ে মোহিমের শর্তে রাজি হন জোবায়ের। মোহিম রেস্টুরেন্টটির নাম দেন ‘বাসটিফিন’।
এ প্রসঙ্গে জোবায়ের বলেন, ‘শখ করে রেস্টুরেন্টটা করা। চেয়েছিলাম ডাইনিং বাস নামেই চালু থাক। তবে দেখলাম কোনোভাবেই সম্ভব হচ্ছে না। বাধ্য হয়েই মোহিমকে দ্বিতল বাসের রেস্টুরেন্টটা দিয়েছিলাম।’
২০২১ সালে নতুন নামে, নতুনভাবে সাজিয়ে দ্বিতল বাসের রেস্টুরেন্টটি ‘বাসটিফিন’ নামে চালু করেন মোহিম। তাতে খুশিই হন জোবায়ের। তবে আবারও করোনার ধাক্কায় লোকসানের মুখে পড়েন মোহিম। নতুন নাম ও দামি খাবার রাখায় কমে যায় মানুষের আনাগোনাও। একপর্যায়ে মোহিমও আর এই রেস্টুরেন্টটি চালাতে পারেননি। চলতি বছরের এপ্রিলে রেস্টুরেন্ট বন্ধ করে দেন তিনি। এরপর চারমাস ধরে বন্ধ।
সালেহ উদ্দিন রায়হান নামে স্থানীয় এক বাসিন্দা জাগো নিউজকে বলেন, রেস্টুরেন্টটা ব্যতিক্রমী ছিল। এতে নতুনত্বও ছিল। শুরুতে অনেক মানুষ আসতো। করোনার সময় বন্ধ হয়ে যায়। এখন তো সবকিছু স্বাভাবিক। চালু করলে হয়তো মানুষ আসবে। আশা করি রেস্টুরেন্টের মালিক জোবায়ের উদ্যোগ নেবেন।
শুধু সালেহ উদ্দিন নন, স্থানীয় অনেকেই এমন দাবি জানান। মানুষের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে জোবায়ের আহম্মেদও পুনরায় শখের রেস্টুরেন্টটি চালু করতে চাইছেন।
তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ডাইনিং বাস আমার অনেক শখ করে করা ব্যবসা। করোনার কারণে দুবার বন্ধ হয়েছে। আরেকজন এটা চালু করলেও টেকাতে পারেননি। ফলে চারমাস রেস্টুরেন্টটা বন্ধ। ভাবছি নতুন করে চালু করবো। এলাকার মানুষও আগ্রহের কথা জানান। কিন্তু সমস্যাও তো কম নয়। লোক খুঁজছি, যিনি এটি চালু করতে পারবেন। ভালোভাবে শুরু করতে পারলে এটা আবারও জনপ্রিয় হয়ে উঠবে বলে আমরা দৃঢ় বিশ্বাস।
আরএসএম/এএএইচ/এসএইচএস/জিকেএস