সাবেক চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে চক্রান্তের অভিযোগ সিমটেক্সের

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৬:৫৩ পিএম, ২৩ মার্চ ২০২৩

শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত বস্ত্রখাতের প্রতিষ্ঠান সিমটেক্স ইন্ডাস্ট্রিজের সাবেক চেয়ারম্যান আনিসুর রহমানের বিরুদ্ধে ওই প্রতিষ্ঠান নিয়ে চক্রান্তের অভিযোগ উঠেছে। নিজ স্বার্থ হাসিলে তিনি কোম্পানি ও শেয়ারহোল্ডারদের ক্ষতি করার চেষ্টা করছেন বলে অভিযোগ তুলেছে সিমটেক্স ইন্ডাস্ট্রিজ কর্তৃপক্ষ।

তবে সিমেটেক্স কর্তৃপক্ষের অভিযোগকে ভিত্তিহীন ও মিথ্যা দাবি করেছেন আনিসুর রহমান। তার দাবি, তিনি কোম্পানি রক্ষার চেষ্টা করছেন। কেউ যাতে কোম্পানি থেকে টাকা নিয়ে পালিয়ে যেতে না পারেন, তিনি সেই চেষ্টা করছেন।

এদিকে, আনিসুর রহমানের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) সিমটেক্স ইন্ডাস্ট্রিজের পর্ষদ পুনর্গঠনের কথা ভাবছে। এ লক্ষ্যে কোম্পানিটিতে কয়েকজন স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগ দিতে চায় বিএসইসি। স্বতন্ত্র পরিচালক ও চেয়ারম্যান হিসেবে শেখ মামুন খালেদকে নিয়োগ দেওয়া হতে পারে বলে জানা গেছে।

সিমটেক্স ইন্ডাস্ট্রিজ কর্তৃপক্ষের দাবি, বর্তমান পরিচালনা পর্ষদের হাত ধরেই কোম্পানিটি ব্যবসা ও আর্থিক সক্ষমতায় ফিরতে শুরু করেছে। করোনা এবং এর পরে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের মধ্যেও সিমেটেক্স ইন্ডাস্ট্রিজের মুনাফা হয়েছে। পাশাপাশি শেয়ারহোল্ডারদের লভ্যাংশ দিয়েছে। এ অবস্থায় আনিসুর রহমান কোম্পানিটিকে ধ্বংসের পাঁয়তারা করছেন।

তাদের অভিযোগ, দুর্নীতি ও অনিয়মের কারণে আনিসুর রহমান সিমটেক্স ইন্ডাস্ট্রিজের চেয়ারম্যানের পদ হারিয়েছে। চেয়ারম্যানের পদ হারিয়ে তিনি কোম্পানির বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছেন। চেয়ারম্যানের পদ হারানোর পর কোম্পানিটির কারখানায় ভাড়া করা সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে কর্মকর্তা ও শ্রমিকদের ওপর হামলা চালিয়েছেন আনিসুর রহমান। অথচ তার অভিযোগের ভিত্তিতেই বিএসইসি সিমটেক্স ইন্ডাস্ট্রিজের পর্ষদ পুনর্গঠনের কথা ভাবছে।

সিমটেক্স কর্তৃপক্ষের আরও অভিযোগ, চাকরি করে কোম্পানিটির মালিকের দেওয়া ২ শতাংশ শেয়ার পেয়ে চেয়ারম্যান হন আনিসুর রহমান। তবে অর্থ লোপাট করার অভিযোগে তাকে চেয়ারম্যান পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। চেয়ারম্যানের পদ হারানোর পর তার নেতৃত্বে গত বছরের ৩১ আগস্ট অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীরা কারখানায় হামলা চালায়।

এতে কারখানার ফ্লোর ইনচার্জ রিপন শেখ, ড্রাইভার রফিক, ট্রান্সপোর্ট অফিসার জাহাঙ্গীর, সিনিয়র জেনারেল ম্যানেজার (অপারেশন) শ্রীনিবাসা রাও তাল্লোরী (ভারতীয়) আহত হন। পরে সাভার মডেল থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে ৫টি শটগান, ৩৭ রাউন্ড গোলাবারুদ, একটি বিদেশি পিস্তলসহ আনিসুর রহমান ও আরও ৭ জনকে আটক করে।

এদিকে আনিসুর রহমানের বিরুদ্ধে ২০২২ সালের ১ সেপ্টেম্বর অস্ত্র আইনে সাভার মডেল থানার মামলা (মামলা নং-৪) করে পুলিশ। একই তারিখে সিমটেক্স ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড কর্তৃপক্ষও সাভার মডেল থানায় মামলা (মামলা নং-৩) করে। এছাড়া কারখানায় হামলায় গুরুতর আহত রিপন শেখের পরিবারের দায়ের করা মামলা (ম্যাজিস্ট্রেট আদালত, বাগেরহাট মিস কেস নং ২৯০/২২) এবং সিমটেক্স ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড কর্তৃক দায়ের করা আর্থিক জালিয়াতি বা দুর্নীতি মামলা (যুগ্ম জেলা জজ আদালত, ঢাকা মামলা নং ০৭/২৩ তারিখ ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৩) চলমান রয়েছে।

গত বছরের ৮ সেপ্টেম্বর আনিসুর রহমান জামিনে মুক্ত হয়ে সাভার মডেল থানায় আবারও একটি মামলা দায়েরের চেষ্টা চালান। তবে থানা মামলা নিতে না চাইলে সিজেএম কোর্ট থেকে এফআইআর করেন। যেখানে কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক নিয়াজ রহমান সাকিব, হেড অব করপোরেট অ্যাফেয়ার্স মো. জাহিদ, কোম্পানির সচিব আশিষ কুমার সাহা ও কোম্পানির সহকারী ম্যানেজার পরিমল চন্দ্র পালকে আসামি করা হয়।

সিমটেক্স ইন্ডাস্ট্রিজের এক কর্মকর্তা বলেন, আনিসুর রহমানের অভিযোগের ভিত্তিতে সিমটেক্স ইন্ডাস্ট্রিজের পরিচালনা পর্ষদ পুনর্গঠন করা হলে কোম্পানি ও সাধারণ শেয়ারহোল্ডারা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। মালিকপক্ষ কোম্পানিটির উৎপাদনে জড়িত থাকতে পারবে না। এতে ব্যাংক টাকা দেওয়া বন্ধ করে দিতে পারে। ফলে উৎপাদন ব্যাহত হবে। এই কোম্পানির অর্ধেকের বেশি শেয়ার সাধারণ শেয়ারহোল্ডারদের কাছে। তাই সাধারণ শেয়ারহোল্ডারদের স্বার্থ যাতে রক্ষা হয় বিএসইসির সে ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া উচিত।

এ বিষয়ে সিমটেক্স ইন্ডাস্ট্রিজের সাবেক চেয়ারম্যান আনিসুর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমার বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ তোলা হয়েছে তা মিথ্যা। আমি কোম্পানির বিরুদ্ধে কোনো ষড়যন্ত্র করিনি। বরং কোম্পানি থেকে কেউ যাতে টাকা নিয়ে পালিয়ে যেতে না পারে সেই চেষ্টা করেছি। এই কোম্পানিতে আমার শেয়ার রয়েছে, বিনিয়োগ রয়েছে। আমি কেন কোম্পানির ক্ষতি করার চেষ্টা করবো!

মামলার বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, সেটি অন্য বিষয়। আপনি যদি চুরি করেন এবং আমি যদি বাধা দেই, তাহলে তো মারপিট হবেই।

এ বিষয়ে বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. রেজাউল করিম বলেন, সিমটেক্সের বিষয়ে এই মুহূর্তে আমার কিছু জানা নেই।

২০১৫ সালে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়া সিমটেক্স ইন্ডাস্ট্রিজের পরিশোধিত মূলধন ৭৯ কোটি ৫৯ লাখ টাকা। আর শেয়ার সংখ্যা ৭ কোটি ৯৫ লাখ ৯৫ হাজার ৩৮১টি। এর মধ্যে উদ্যোক্তা ও পরিচালকদের কাছে আছে ৩১ দশমিক ৬৫ শতাংশ শেয়ার। বাকি শেয়ারের মধ্যে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে ৫৩ দশমিক ৩০ শতাংশ এবং প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের কাছে আছে ১৫ দশমিক শূন্য ৫ শতাংশ শেয়ার। সর্বশেষ ২০২১-২২ অর্থবছরে কোম্পানিটি শেয়ারহোল্ডারদের ৮ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দিয়েছে। তার আগে ২০২০-২১ অর্থবছরের কোম্পানিটি ৪ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দেয়।

এমএএস/কেএসআর/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।