১৫ দিনে দ্বিগুণ
পাগলা ঘোড়ার মতো ছুটছে লিগ্যাসি ফুটওয়্যারের শেয়ার দাম

# দাম বাড়ার পেছনে কারসাজি চক্রের হাত
# কাজে আসছে না সতর্কবার্তা
# ভালো না লভ্যাংশের ইতিহাস
# চলমান হিসাব বছরের ব্যবসায় লোকসান
# কারসাজির প্রাথমিক প্রমাণ পেলেই ব্যবস্থা
# দাম বাড়ার প্রবণতা সন্দেহজনক
শেয়ারবাজারে রূপকথার আলাদিনের চেরাগের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে চামড়া খাতের প্রতিষ্ঠান লিগ্যাসি ফুটওয়্যার। কোম্পানিটির শেয়ারে বিনিয়োগ করা অর্থ মাত্র ১৫ দিনে দ্বিগুণ হয়ে গেছে। আর্থিক ভিত্তি খুব একটা শক্ত না হলেও দাম বাড়ার ক্ষেত্রে পাগলা ঘোড়ার মতো ছুটছে কোম্পানিটির শেয়ার।
প্রতিষ্ঠানটির শেয়ারের এই দামবৃদ্ধিকে ‘অস্বাভাবিক’ বলছে দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) কর্তৃপক্ষ। এজন্য ডিএসই থেকে বিনিয়োগকারীদের সতর্ক করে বার্তাও প্রকাশ করা হয়েছে। কিন্তু সেই সতর্কবার্তায়ও কোনো কাজ হচ্ছে না।
কারসারিজ মাধ্যমে কোনো বিশেষ চক্র কোম্পানিটির শেয়ার দাম এভাবে বাড়াচ্ছে বলে মনে করছেন শেয়ারবাজার সংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন, লিগ্যাসি ফুটওয়্যারের লভ্যাংশের ইতিহাস খুব একটা ভালো নয়। সর্বশেষ সমাপ্ত হিসাব বছরে কোম্পানিটি বিনিয়োগকারীদের কোনো লভ্যাংশ দেয়নি। এমনকি চলমান হিসাব বছরেও কোম্পানিটি লোকসানে রয়েছে।
আরও পড়ুন: ‘দুর্বল’ লিগ্যাসি ফুটওয়্যার ছুটছেই
তাদের অভিমত, এ ধরনের একটি কোম্পানির শেয়ার দাম হুট করে যেভাবে বেড়েছে, তা কিছুতেই স্বাভাবিক হতে পারে না। এর পেছনে কারসাজি চক্র জড়িত থাকতে পারে। ফলে কোম্পানিটির শেয়ারে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বিনিয়োগকারীদের সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত।
তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, গত ১৯ মার্চ কোম্পানিটির শেয়ার দাম ছিল ৪২ টাকা ৩০ পয়সা। সেখান থেকে বাড়তে বাড়তে ২ এপ্রিল লেনদেন শেষে দাঁড়িয়েছে ৮১ টাকা ৭০ পয়সায়। অর্থাৎ ১৫ দিনের মধ্যে প্রতিষ্ঠানটির প্রতিটি শেয়ারের দাম বেড়েছে ৩৯ টাকা ৪০ পয়সা বা ৯৩ দশমিক ১৪ শতাংশ।
অন্যভাবে বললে ১৯ মার্চ কোনো বিনিয়োগকারী লিগ্যাসি ফুটওয়্যারের ১০ লাখ টাকার শেয়ার কিনে ধরে রাখলে এখন তার বাজারমূল্য ১৯ লাখ ৩১ হাজার ৪৪২ টাকা। অর্থাৎ ১০ লাখ টাকা মাত্র ১৫ দিন খাটিয়েই লাভ পাওয়া যাচ্ছে ৯ লাখ ৩১ হাজার ৪৪২ টাকা। এ যেন রূপকথার আলাদিনের চেরাগ!
আরও পড়ুন: বিনিয়োগকারীদের পছন্দের শীর্ষে লিগ্যাসি ফুটওয়্যার
কোম্পানিটির শেয়ারের দাম বাড়ায় গত ২৩ ও ২৮ মার্চ দু’দফায় ডিএসই থেকে বিনিয়োগকারীদের উদ্দেশে সতর্কবার্তা দেওয়া হয়। কোম্পানিটিকেও নোটিশ পাঠায় ডিএসই। ওই নোটিশের পরিপ্রেক্ষিতে কোম্পানি কর্তৃপক্ষ ডিএসইকে জানায়, সম্প্রতি শেয়ারের যে অস্বাভাবিক দাম বেড়েছ এবং লেনদেন বেড়েছে তার জন্য তাদের কাছে অপ্রকাশিত কোনো মূল্য সংবেদনশীল তথ্য নেই।
তবে ডিএসইর এই সতর্কবার্তা কোম্পানিটির শেয়ার দাম বৃদ্ধির প্রবণতা রুখতে পারেনি। বরং সতর্কবার্তা প্রকাশের পর শেয়ারের দাম বাড়ার পালে আরও হাওয়া লেগেছে। রোববার (২ এপ্রিল) কোম্পানিটির শেয়ার দাম বেড়েছে ৭ টাকা ৩০ পয়সা বা ৯ দশমিক ৮১ শতাংশ।
শেয়ারের এমন লাগামহীন দাম বাড়া এই কোম্পানিটি ২০০০ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়। ২০২২ সালের ৩০ জুন সমাপ্ত বছরের জন্য কোম্পানিটি বিনিয়োগকারীদের কোনো ধরনের লভ্যাংশ না দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ২০২১ সালের ৩০ জুন সমাপ্ত বছরের জন্য কোম্পানিটি বিনিয়োগকারীদের ১ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দেয়। এর আগে ২০২০ সালেও বিনিয়োগকারীদের কোনো লভ্যাংশ দেয়নি।
চলমান হিসাব বছরের প্রথম ছয় মাসের ব্যবসায় কোম্পানিটি লোকসান করেছে। ২০২২ সালের জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ছয় মাসের ব্যবসায় শেয়ারপ্রতি লোকসান হয়েছে ৭৯ পয়সা।
১৩ কোটি ৮ লাখ টাকা পরিশোধিত মূলধনের এই কোম্পানিটির শেয়ার সংখ্যা ১ কোটি ৩০ লাখ ৭৯ হাজার ৯৮০টি। এরমধ্যে ৩০ শতাংশ আছে উদ্যোক্তা ও পরিচালকদের হাতে। বাকি শেয়ারের মধ্যে ৫৬ দশমিক ৮২ শতাংশ আছে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে। আর প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের হাতে ১৩ দশমিক ১৮ শতাংশ।
ডিএসইর এক সদস্য জাগো নিউজকে বলেন, লিগ্যাসি ফুটওয়্যারের শেয়ার সংখ্যা খুব বেশি নয়। এ ধরনের শেয়ার নিয়ে কারসাজি চক্রের পক্ষে খেলাধুলা করা সহজ। সম্প্রতি লিগ্যাসি ফুটওয়্যারের শেয়ার দাম যেভাবে বেড়েছে তা সন্দেহজনক। খালি চোখেই বোঝা যাচ্ছে এই দাম বাড়ানোর পেছনে কোনো বিশেষ চক্র থাকতে পারে।
বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) সাবেক চেয়ারম্যান ফারুক আহমেদ সিদ্দিকী জাগো নিউজকে বলেন, শেয়ারবাজারে বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দাম ফ্লোর প্রাইসে আটকে রয়েছে। একেক সময় একেকটা শেয়ার নিয়ে মেনুপুলেশন (কারসাজি) হচ্ছে। কোনো কারণ ছাড়া যদি শেয়ারের দাম দ্বিগুণ হয়ে যায়, তাহলে তো বুঝতে হবে এর পেছনে কারসাজি চক্র কাজ করছে।
এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মোহাম্মদ রেজাউল করিম জাগো নিউজকে বলেন, লিগ্যাসি ফুটওয়্যারের শেয়ার দাম যেভাবে বাড়ছে তা সন্দেহজনক। আমরা বিষয়টি নজরদারিতে রেখেছি। কারসাজির প্রাথমিক কোনো প্রমাণ পেলেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এমএএস/এমকেআর/জেআইএম