জাকাতের কাপড়ের দাম বেড়েছে
সম্পদের শুদ্ধিতা আনতে ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা জাকাত দিয়ে থাকেন। বছরের যেকোনো সময় এ জাকাত দেওয়া গেলেও অতিরিক্ত সওয়াবের আশায় বড় একটি অংশই বেছে নেন পবিত্র রমজান মাস। সম্পদের জাকাত হিসেবে গরিবদের মধ্যে বিতরণ করা হয় নগদ অর্থের পাশাপাশি পরিধেয় কাপড়।
যে কারণে রোজা আসলেই বেড়ে যায় জাকাতের কাপড় বিক্রি। আর জাকাত দাতাদের চাহিদার কথা মাথায় রেখে ব্যবসায়ীরাও নেন বাড়তি প্রস্তুতি। বরাবরের মতো এবারও এর ব্যাতিক্রম হয়নি। এরই মধ্যে জাকাতের কাপড় বিক্রি শুরু হয়ে গেছে। ক্রেতা ভালো পাওয়ায় ব্যবসায়ীরাও খুশি। তবে গত বছরের তুলনায় এবার জাকাতের শাড়ি ও লুঙ্গির দাম একটু বেশি।

রাজধানীতে যে কয়টি মার্কেটে জাকাতের পোশাক পাইকারি বিক্রি হয় তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য একটি গুলিস্থানের জিরো পয়েন্ট মোড়ে অবস্থিত পীর ইয়ামেনী মার্কেট। মার্কেটটির নিচতলায় শতাধিক প্রতিষ্ঠান যাকাতের শাড়ি ও লুঙ্গি পাইকারি ও খুচরা বিক্রি করেন।
রোববার সরজমিন এ মার্কেটে গিয়ে দেখা যায়, ব্যবসায়ীরা থরে থরে যাকাতের শাড়ি, লুঙ্গি সাজিয়ে রেখেছেন। কোনো কোনো প্রতিষ্ঠানের সামনে শোভা পাচ্ছে এখানে জাকাতের শাড়ি বিক্রি করা হয় আবার কোনো কোনো প্রতিষ্ঠানের শোভা পাচ্ছে এখানে জাকাতের লুঙ্গি বিক্রি করা হয়। এসব প্রতিষ্ঠান থেকে ক্রেতারা চাহিদা অনুযায়ী শাড়ি, লুঙ্গি কিনছেন।
ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এবার জাকাতের জন্য যেসব শাড়ি বিক্রি হচ্ছে তার দাম ৩৫০ থেকে ৬০০ টাকা। তবে কেউ চাইলে এর থেকে বেশি দামের শাড়িও জাকাতের জন্য কিনতে পারেন। অন্যদিকে জাকাতের লুঙ্গি বিক্রি হচ্ছে ২৫০ থেকে ৫০০ টাকার মধ্যে। শাড়ির মতো কেউ চাইলে দামি লুঙ্গিও জাকাদের জন্য কিনতে পারেন।
ব্যবসায়ীরা জানিয়েছে, গত বছরের তুলনায় এবার শাড়ি ও লুঙ্গির দাম পিস প্রতি ২০ থেকে ৫০ টাকা বেড়েছে। গত বছর যে লুঙ্গি ২২০ টাকায় বিক্রি হয়েছে এবার সেই লুঙ্গি ২৫০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। আর গত বছর যেসব সাড়ে সাড়ে তিনশ টাকা বিক্রি হয়েছে এবার তা চারশ টাকা বিক্রি হচ্ছে।
তারা আরও জানান, গত বছরের তুলনায় এবার জাকাতের শাড়ি, লুঙ্গি বিক্রি তুলনামূলক ভালো। তবে খুব বেশি ভালো তা বলা যাবে না। কারণ এখন অনেকে শাড়ি, লুঙ্গির বদলে জাকাত হিসেবে টাকা দেন। আর জাকাতের কাপড় অল্প লাভে বিক্রি করে দেওয়া হয়। ক্রেতাদের সঙ্গে খুব বেশি দরদাম করা হয় না। সাধারণ সময়ে যে দামে জাকাতের কাপড় বিক্রি করা হয় বাড়তি চাহিদার সময়েও সেই দামেই বিক্রি করা হয়।
নিউ বাংলাদেশ শাড়ি বিতানের মো. মনির হোসেন বলেন, আমরা জাকাতের শাড়ি ও লুঙ্গি বিক্রি করি। জাকাতের শাড়ি ও লুঙ্গি বিভিন্ন দামের আছে। তবে ৪০০ থেকে ৫০০ টাকার মধ্যে মোটামুটি ভালো মানের শাড়ি এবং ৩০০ থেকে ৪০০ টাকার মধ্যে ভালো মানের লুঙ্গি পাওয়া যায়। এর থেকে কম দামেও আছে, তবে সেগুলোর মান খুব একটা ভালো না।
বিক্রি পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, গত কয়েক বছরের তুলনায় এবার বিক্রি মোটামুটি ভালো। তবে এখন অনেকে জাকাত হিসেবে নগদ টাকা দেয়। সে কারণ যাকাতের শাড়ি ও লুঙ্গি তুলনামূলক কম বিক্রি হয়। তারপরও এবার যা বিক্রি হয়েছে তাতে আমরা খুশি। সামনে আরো বিক্রি হবে বলে আশা করছি।

লিমা প্রিন্ট শাড়ী হাউসের ম্যানেজার মো. বিল্লাল বলেন, এবার সাড়ে ৩৫০ থেকে ৬০০ টাকার মধ্যে জাকাতের শাড়ি বেশি বিক্রি হচ্ছে। আর ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা দামের লুঙ্গি বেশি বিক্রি হয়েছে। এ দামের শাড়ি ও লুঙ্গি জাকাতের জন্য স্টান্ডার্ড মানের। এর থেকে কম দামেও শাড়ি ও লু্ঙ্গি আছে। তবে তার মান ভালো না। আর কেউ চাইলে এর থেকে বেশি দামের শাড়ি ও লুঙ্গিও দিতে পারে। আমাদের কাছে বেশি দামের শাড়ি ও লুঙ্গিও আছে।
বিক্রি পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, গত তিন-চার বছরের তুলনায় এবার বিক্রি ভালো। এবার রোজার শুরু থেকেই জাকাতের কাপড় বিক্রি হচ্ছে। এখনো ক্রেতা আসছেন। আমাদের ধারণা যাকাতের কাপড় ঈদের আগে আরও ১০ দিনের মতো বিক্রি হবে।
জাকাতের শাড়ি ও লুঙ্গির দামের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এবার ডলার দাম কতো বাড়ছে? সুতার দামও অনেক বেড়েছে। সুতরাং স্বাভাবিক ভাবেই শাড়ি ও লুঙ্গির দাম এবার একটু বেশি হবে। তবে জাকাতের শাড়ি ও লুঙ্গির দাম খুব বেশি বাড়েনি। পিস প্রতি ২০ থেকে ৫০ টাকার মতো বেড়েছে।
এমএএস/এমআইএইচএস/জিকেএস