মামলায় আটকা প্রাথমিকের ৩১৪৫৯ প্রধান শিক্ষকের পদোন্নতি

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৬:২৭ পিএম, ২৯ জুলাই ২০২৫
ফাইল ছবি

সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের শূন্য পদগুলো পূরণে বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। সরাসরি নিয়োগের যোগ্য দুই হাজার ৩৮২টি পদে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশে সরকারি কর্ম কমিশনে (পিএসসি) চিঠি পাঠানো হয়েছে।

তবে শূন্য প্রধান শিক্ষকের বড় অংশই পদোন্নতিযোগ্য পদ। পদোন্নতিযোগ্য ৩১ হাজার ৪৫৯টি প্রধান শিক্ষকের পদে পদোন্নতি আটকে আছে মামলার কারণে। উচ্চ আদালতে এ মামলা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত পদোন্নতির মাধ্যমে প্রাথমিকের প্রধান শিক্ষকের বিপুল সংখ্যক পদ পূরণ করা সম্ভব নয়।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০১৩ সালে জাতীয়করণ করা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৪৮ হাজার ৭২০ জন শিক্ষকের মধ্যে প্রায় ২৫ হাজার শিক্ষক অবসরে গেছেন। অনেকে অবসর ভাতাও তুলে নিয়েছেন। এ পরিস্থিতিতে অর্থ মন্ত্রণালয় ২০২০ সালের ১২ আগস্ট জারি করা আদেশে দুটি টাইম স্কেল বাতিল করে অতিরিক্ত অর্থ ফেরত নেওয়ার নির্দেশনা দেয়।

সরকারের এ আদেশ প্রত্যাখ্যান করে অবসরে যাওয়া শিক্ষকদের পক্ষে হাইকোর্টে রিট আবেদন করা হয়। শুনানি শেষে হাইকোর্ট রিটকারীদের পক্ষে রায় দেন। কিন্তু হাইকোর্টের রিটের বিরুদ্ধে সরকার আপিল করে। এ আপিল নিষ্পত্তি না হওয়ায় অবসরে যাওয়া শিক্ষকরা তাদের পাওনা উত্তোলন করতে পারছেন না। একই সঙ্গে আটকে গেছে প্রায় সাড়ে ৩১ হাজার প্রধান শিক্ষক পদে পদোন্নতিও।

এদিকে, প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শূন্য থাকা ৩৪ হাজার ১০৬টি প্রধান শিক্ষক পদ দ্রুত পূরণের উদ্যোগ নেওয়ার কথা জানিয়েছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। এরমধ্যে সরাসরি নিয়োগযোগ্য পদে বিজ্ঞপ্তি দেবে পিএসসি। আর পদোন্নতিযোগ্য পদে নিয়োগের বিষয়টি দেখবে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। তবে পদোন্নতিযোগ্য সাড়ে ৩১ হাজার পদের পদোন্নতি আটকে আছে আইনি জটিলতায়। এ জটিলতা ‘সরকারের সৃষ্ট’ বলে অভিযোগ শিক্ষক নেতাদের।

প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির নেতাদের অভিযোগ, হাইকোর্টর রায়ের পর সরকার আপিল না করলে শিক্ষকদের ভোগান্তি থাকতো না। সরকার এ রিটে জিততে পারবে না জেনেও আপিল করেছে। অবসরে যাওয়া অনেক শিক্ষক মারা গেলেও তার পরিবার অবসরের অর্থ তুলতে পারছে না।

শিক্ষক নেতারা বলেন, একই কারণে প্রায় সাড়ে ৩১ হাজার প্রধান শিক্ষক পদে পদোন্নতি দেওয়া যাচ্ছে না। আবার প্রধান শিক্ষক পদে পদোন্নতি না হওয়ায় সহকারী শিক্ষক পদও শূন্য হচ্ছে না। যদি প্রধান শিক্ষক পদে সাড়ে ৩১ হাজার পদে পদোন্নতি হতো, তাহলে সেখানে জ্যেষ্ঠ সহকারী শিক্ষকরা নিয়োগ পেতেন। আর সহকারী শিক্ষক পদে নতুনরা নিয়োগের সুযোগ পেতেন।

প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি আবুল কাসেম বলেন, মামলা নিষ্পত্তি না হওয়ায় প্রাথমিক শিক্ষা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। মামলাজট নিরসন করে এ সমস্যার দ্রুত সমাধান করার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি আমরা।

বিষয়টি নিয়ে জানতে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব আবু তাহের মো. মাসুদ রানা এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আবু নূর মো. শামসুজ্জামানের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাদের পাওয়া যায়নি।

শিক্ষকদের করা মামলা, রিট এবং সরকারের আপিলের বিষয়গুলো দেখভাল করে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের পলিসি অ্যান্ড অপারেশন বিভাগ। এ বিভাগের পরিচালক মোহাম্মদ কামরুল হাসান বলেন, ‘বিষয়টি উচ্চ আদালতে বিচারাধীন। বিচারাধীন বিষয়ে মন্তব্য করা যাবে না। নিষ্পত্তি হয়ে এলে আমরা সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবো।’

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ তথ্য কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ শিবলী সাদিক বলেন, ‘জাতীয়করণকৃত শিক্ষকদের গ্রেডেশন সংক্রান্ত ৭৩/২০২৩ নম্বর সিভিল আপিল মামলা নিষ্পত্তি হওয়ামাত্র সহকারী শিক্ষক থেকে প্রধান শিক্ষক পদে পদোন্নতিযোগ্য ৩১ হাজার ৪৫৯টি পদ পদোন্নতির মাধ্যমে পূরণ করা হবে। এ নিয়োগ সম্পন্ন হলে প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোর জনবলের ঘাটতি পূরণ হবে। পাশাপাশি বিদ্যালয়গুলোর শিক্ষা কার্যক্রম আরও উন্নত ও গতিশীল হবে।’

এএএইচ/এমকেআর/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।