টিকা দেয়া ও বিশ্ববিদ্যালয় খোলা নিয়ে মন্ত্রণালয়-ইউজিসির মতানৈক্য
দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলে বসবাস করা অন্তত এক লাখ ১০ হাজার শিক্ষার্থীকে টিকা দিয়েই ক্যাম্পাস খুলে দিতে চায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। তবে মন্ত্রণালয়ের এমন সিদ্ধান্তে একমত নয় বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। ইউজিসির প্রস্তাব- সব শিক্ষার্থীকে টিকা নিশ্চিত করার পরই বিশ্ববিদ্যালয় খোলার ঘোষণা দেয়া হোক।
শিক্ষার্থীদের টিকা দেয়া এবং বিশ্ববিদ্যালয় খোলার বিষয় নিয়ে আজ বৃস্পতিবার (২৭ মে) শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও ইউজিসির বৈঠক হয়েছে। সেখানে টিকা দেয়া এবং বিশ্ববিদ্যালয় খোলার সিদ্ধান্তে দুই পক্ষের মধ্যে এমন মতানৈক্য তৈরি হয় বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে আয়োজিত এ সভায় মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মাহবুব হোসেনসহ বিশ্ববিদ্যালয় বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা অংশ নেন। ইউজিসির পক্ষে ছিলেন ইউজিসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক কাজী শহীদুল্লাহ, সদস্য অধ্যাপক ড. দিল আফরোজা বেগম, ড. মো. সাজ্জাদ হোসেন, ড. মুহাম্মদ আলমগীর, ড. বিশ্বজিৎ চন্দ, ড. মো. আবু তাহের ও সচিব (অতিরিক্ত দায়িত্ব) ড. ফেরদৌস জামান।
বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, ইউজিসির প্রস্তাব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সব শিক্ষার্থীকে (কমপক্ষে সাড়ে তিন লাখ) টিকার আওতায় আনার পর ক্যাম্পাস খোলা হোক। এ ধরনের একটি প্রস্তাবও ইউজিসি রোববার (৩০ মে) স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠাবে।
ইউজিসির এমন প্রস্তাবে রাজি হয়নি শিক্ষা মন্ত্রণালয়। তারা আবাসিক হলে থাকা ১ লাখ ১০ হাজার শিক্ষার্থীর টিকা নিশ্চিতের পর বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দেয়ার পক্ষে। মন্ত্রণালয় তাদের পৃথক সিদ্ধান্তের একটি প্রস্তাব শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠাবে।
বৈঠকে শিক্ষা মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্টরা ইউজিসিকে অবগত করেন, আবাসিক হলের এক লাখ ১০ হাজার শিক্ষার্থীকে টিকা দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দেয়ার বিষয়টি সরকারি সিদ্ধান্ত।
সভা শেষে ইউজিসি সচিব ড. ফেরদৌস জামান জাগো নিউজকে বলেন, ‘প্রথমদিকে ইউজিসিও আবাসিক হলের শিক্ষার্থীদের টিকা দিয়ে ক্যাম্পাস খোলার পক্ষে ছিল। তবে ইউজিসি আজ সিদ্ধান্ত নিয়েছে সব শিক্ষার্থীকে টিকা দেয়ার পর বিশ্ববিদ্যালয় খোলার প্রস্তাব করা হবে। এ সংক্রান্ত সুপারিশ আমরা রোববার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠাবো।’
তিনি বলেন, ‘ক্লাসে তো সব শিক্ষার্থী আসবে। তাই শুধু হলের শিক্ষার্থীদের টিকা দিলেই হবে না। সব শিক্ষার্থীকেই টিকা দিতে হবে। তবে টিকা দেয়ার ক্ষেত্রে হলের শিক্ষার্থীদেরকে অগ্রাধিকার দেয়া যেতে পারে।’
জানতে চাইলে ইউজিসি চেয়ারম্যান কাজী শহিদুল্লাহ জাগো নিউজকে বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে একইসঙ্গে শিক্ষার্থীরা ক্লাস করবে, চলাফেরা করবে। সেখানে আবাসিক-অনাবাসিক শিক্ষার্থীরা তো আলাদাভাবে ক্লাস করতে বা চলতে-ফিরতে পারবে না। এ জন্য আমরা সব শিক্ষার্থীকে টিকার আওতায় আনার পর বিশ্ববিদ্যালয় খোলার পক্ষে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা কোনো শিক্ষার্থীকেই ঝুঁকির মধ্যে ফেলতে চাই না। এজন্য সরকার ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে আমাদের সুপারিশ আমরা পাঠাবো। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বৈঠকেও আমাদের প্রস্তাব তুলে ধরেছি।’
মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব এ কে এম আফতাব হোসেন প্রামাণিক বলেন, ‘বৈঠকে ইউজিসি তাদের প্রস্তাব জানিয়েছে। তবে আবাসিক শিক্ষার্থীদের টিকা দিয়ে ক্যাম্পাস খোলার বিষয়টি সরকারি সিদ্ধান্ত। এ জন্য আমরা এখনও সেই অবস্থানে আছি। আবাসিক হলের অন্তত এক লাখ ১০ হাজার শিক্ষার্থীকে টিকা দিয়েই ক্যাম্পাস খোলার পক্ষে। বিষয়টি শিক্ষামন্ত্রীকে অবগত করা হবে। তিনি সরকারের উচ্চপর্যায়ে কথা বলে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন।’
টিকা নিবন্ধনে শিক্ষার্থীদের জন্য নতুন ‘অ্যাপস’
জাতীয় পরিচয়পত্র না থাকায় অনেক শিক্ষার্থীকে টিকা নিবন্ধনের আওতায় আনা সম্ভব হয়নি। এ জন্য বিশেষ একটি অ্যাপস তৈরির উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। শিক্ষার্থীদের সহজে টিকা নিবন্ধন করার সুবিধার্থে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ এই অ্যাপসটি তৈরি করছে। এ কাজে সার্বিক সহায়তা করছে ইউজিসি।
এমএইচএম/এএএইচ/জেআইএম